রান মানে দৌড় নয়!

0

6f44ce005c121f87dea221dded848832-Mccullumদুই ব্যাটসম্যান দৌড়ে ২২ গজের পিচ পার করলেই ১ রান। এভাবে দৌড়ে যতবার প্রান্ত বদল হবে, রান হবে ততটি। ক্রিকেটের সূচনা লগ্নে এই নিয়মটি করা হয়েছিল দলের স্কোরে হিসাব রাখার জন্য। যেহেতু দৌড় দিয়েই স্কোরের হিসাব নিকাশ, তাই ব্যাপারটার নাম হয়ে গেল রান। পড়ে চার-ছক্কা যুক্ত হলেও ক্রিকেটের আদি ও অকৃত্রিম রানের হিসাবটি কিন্তু রয়েই গেছে। জয়-পরাজয়ের শেষ সিদ্ধান্ত কিন্তু সেই কে কত বেশি ‘দৌড়াল’, তার ওপরই নির্ভর করে।
কিন্তু এ কথা ব্রেন্ডন ম্যাককালাম কিংবা শহীদ আফ্রিদিরা শুনলে তো! মাঠে নামলেই তাঁদের মাথায় বোধ হয় একটা কথাই ঘুরতে থাকে, ‘হাত থাকতে পায়ে কী?’ ভারি ব্যাট, ছোট মাঠ, ফিল্ডিং বাধ্যবাধকতা মিলিয়ে ইদানিং ব্যাটসম্যানরা ক্রিকেট মাঠে নামেনই ঝড় তুলতে। দৌড়াদৌড়ি করে রান তোলায় তাঁদের বড় আলসেমি লাগে। এই তো সেদিন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে মাত্র ১৪ বলে ফিফটি করেছেন কলিন মানরো। টি-টোয়েন্টির দ্বিতীয় দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড গড়তে ৭টি ছক্কা ও ১টি চার মেরেছেন মানরো। ৫০ রানের মাঝে ৪৬ রানই চার-ছক্কায়। অমন অবলীলায় গ্যালারিতে বল পাঠাতে পারলে আসলেই দৌড়ানোর দরকার কী?
তবে চার-ছক্কার দৌড়ে মানরোর এই ইনিংস খানিকটা পিছিয়েই আছে। কমপক্ষে পঞ্চাশ ছুঁয়েছে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এমন ইনিংসগুলো বিবেচনায় নিলে চার-ছক্কায় রান তোলার হারে শীর্ষ পাঁচেও জায়গা হয়নি মানরোর। অর্থাৎ দৌড়ে রান নিতে অনীহা দেখানো আরও বেশ কিছু ইনিংস রয়েছে, যেগুলো পেছনে ফেলে দিচ্ছে মানরোর ইনিংসটিকেও।

শীর্ষে আছেন নিউজিল্যান্ডের দলেরই ম্যাককালাম। গত বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে কচুকাটা করা সেই ইনিংসটির কথা মনে আছে? সেদিন ২৫ বলে ৭৭ রানের ওই ইনিংসে ৮টি চার ও ৭টি ছক্কা মেরেছিলেন ম্যাককালাম। মাত্র ৩টি রান নিয়েছিলেন দৌড়ে। অর্থাৎ সেদিন ৯৬.১০ শতাংশ রানই বাউন্ডারিতে পেয়েছিলেন ম্যাককালাম!
দ্বিতীয় স্থানেও ম্যাককালাম এবং সেই কীর্তিও বিশ্বকাপেই। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেমিফাইনালে ৪৩ ওভারে ২৯৮ রানের লক্ষ্য পেয়ে ব্যাটকে তলোয়ার বানিয়ে নেমেছিলেন কিউই অধিনায়ক। ২৬ বলে ৫৯ রান নেওয়ার পথে সেদিন ৮ চার ও ৪ ছক্কাতেই তুলেছিলেন ৫৬! অর্থাৎ প্রায় ৯৫ ভাগ রানই কোনোরকম দৌড়াদৌড়ি না করে।
তিনে আছে আফ্রিদির একটি ইনিংস। ২০০২ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে হল্যান্ডের বিপক্ষে ১৮ বলে ৫৫ রান করেছিলেন আফ্রিদি। ৪টি চার ও ৬টি ছক্কার ওই ইনিংসে আফ্রিদি বাউন্ডারি মেরেই নিয়েছিলেন ৫২ রান। শতকরা হিসেবে যা ৯৪.৫০ ভাগ। হল্যান্ডের কপালটা ভালো, সেদিন প্রথমে ব্যাট করতে পেরেছিল। পাকিস্তান প্রথম ব্যাটিং করলে কে জানে, ওয়ানডেতে দ্রুততম সেঞ্চুরির নিজের রেকর্ডটা ভেঙে দিতেন কি না আফ্রিদি!
চার-ছক্কাপ্রীতিতে এর পরই আছেন কুশল পেরেরা। গত বছর পাকিস্তানের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কান ওপেনারের ২৫ বলে ৬৮ রানের ইনিংসের ৬৪ রানই ছিল ১৩টি চার ও দুটি ছক্কায়। শতকরা হিসেবে যা ৯৪.১১ শতাংশ।
চার-ছক্কার এই মহোৎসবে এতক্ষণ জায়গাই মেলেনি চার-ছক্কার ক্রিকেট নামে পরিচিতি পাওয়া টি-টোয়েন্টির। পাঁচ নম্বরে এসে দেখা মিলছে টি-টোয়েন্টির সবচেয়ে বিখ্যাত ইনিংসটি। ২০০৭ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১২ বলে ফিফটি করেছিলেন যুবরাজ সিং। আউট হয়েছিলেন ১৬ বলে ৫৮ রান করে। স্টুয়ার্ট ব্রডের এক ওভারের ছয় বলেই ছক্কা মেরেছিলেন। ছক্কা ছিল আরেকটি। ৭টি ছক্কা ও ৩টি চারে বাউন্ডারি থেকেই এসেছিল ইনিংসের ৯৩.১০ শতাংশ রান।
যুবরাজের ইনিংসটি তো তবুও শীর্ষ পাঁচে জায়গা করে নিতে পেড়েছে। ওয়ানডের দ্রুততম ফিফটি ও সেঞ্চুরির ইনিংস খেলেও কিন্তু শীর্ষ দশে আসতে পারেননি এবি ডি ভিলিয়ার্স। অথচ ৪৪ বলে ১৪৯ রানের সেই ইনিংসে কিন্তু বাউন্ডারি থেকেই ১৩২ রান নিয়েছিলেন এবি। কিন্তু ১৭টি রান নিতে পায়ের ব্যবহার করতে গিয়েই ঝামেলাটা পাকিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক!

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More