ঢাকা: প্রথম ম্যাচের তুলনায়, এই ম্যাচটা বেশ কঠিনই। কারণ দু ম্যাচের স্কোর। প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ টার্গেট পেয়েছিল ১৪৯ রানে। আর এই ম্যাচে পেয়েছে ১৭০ রানে। সুতরাং, এই পরিসংখ্যানে বলে দেওয়া সম্ভব ছিল যে, বাংলাদেশের হার নিশ্চিত। কিন্তু; সাম্প্রতিককালে এই বাংলাদেশ যেভাবে ভয়-ডরহীন ক্রিকেট উপহার দিচ্ছিল, তাতে করে হার নিশ্চিত বলে দেওয়া সম্ভব ছিল না। তামিম-সৌমদের কেউ এক’জন কিংবা দু’জন দাঁড়িয়ে যেতে পারলে জয় তো নিশ্চিতই!
কিন্তু না, প্রথম ম্যাচের মত এই ম্যাচেও সেই একই ভূলগুলো করলো বাংলাদেশ দলের ব্যাটসম্যানরা। দায়িত্ব নিয়ে কেউ একজন বুক চিতিয়ে দাঁড়াতে পারেননি প্রোটিয়া বোলারদের সামনে। বরং একের পর এক উইকেট বিসর্জন দেওয়ার মহোৎসবে মেতে উঠেছিলেন যেন ব্যাটসম্যানরা। ফল যা হওয়ার তাই হলো, আগের ম্যাচের তুলনায় একটু ভালো ব্যাটিং হলেও, পরাজয়ই বরণ করতে হলো মাশরাফিদের। ১৭০ রানের জবাবে ১৯.২ ওভারে অলআউট ১৩৮ রানে। ফলে টাইগারদের পরাজয় ৩১ রানে। একই সঙ্গে ২ ম্যাচের টি২০ সিরিজে ২-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হলো বাংলাদেশ।
১৭০ রানের লক্ষ্য নিয়ে খেলতে নেমে শুরু থেকেই মারমুখি হওয়ার চেষ্টা করছেন তামিম ইকবাল এবং সৌম্য সরকার। তবে, প্রথম ওভারে কাইল অ্যাবটের ব্যাট থেকে মাত্র ৫ রান নিতে সক্ষম হন তারা দু’জন। দ্বিতীয় ওভারে নেন ৬ রান। তামিম ২, সৌম্য রয়েছেন ৯ রানে।
তৃতীয় ওভারে বল করতে আসেন ওয়েন পার্নেল। তাকে দু’বার বাউন্ডারিছাড়া করেন তামিম আর সৌম্য। রান নেন ১০টি। বাংলাদেশের সংগ্রহ কোন উইকেট না হারিয়ে ২১। চতুর্থ ওভারে ডেভিড ওয়াইজকে আক্রমণে নিয়ে আসেন ডু প্লেসিস। প্রথম চার বল খেকে ৩ রান নিলেও শেষ দুই বল থেকে পর পর দুটি বাউন্ডারি আদায় করে নেন সৌম্য সরকার।
পঞ্চম ওভারে কাইল অ্যাবটের কাছ থেকে নিলেন ৯ রান। বাউন্ডারি একটি। ১৫ বলে সৌম্যর রান ২৭। আর তামিমের রান ১৫ বলে ১২।
৬ষ্ঠ ওভারে এসে আউট হয়ে গেলেন তামিম ইকবাল প্রথম চার বল থেকে একটি ওয়াইডসহ মোট ৫ রান নিলেন ব্যাটসম্যানরা। পঞ্চম বলে পার্নেলের স্লোয়ারে বিভ্রান্ত হয়ে ক্যাচ তুলে দেন মিড উইকেটে। ডেভিড ওয়াইজের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান তামিম। এ সময় তার রান ছিল ১৮ বলে ১৩। পরের বলেই অবশ্য ছক্কা মারেন সৌম্য।
সপ্তম ওভারে এসে উইকেট হারালেন সৌম্য সরকারও। অভিষিক্ত এডি লিয়ের লেড স্পিনের ফাঁদে পড়ে এগিয়ে এসে খেলতে যান। কিন্তু বল মিস করলে স্ট্যাম্পিং হন সৌম্য। ২১ বলে ৩৭ রান করেন তিনি। দলীয় রান ৫৫। উইকেটে সাকিব আল হাসান আর মুশফিকুর রহিম।
মুশফিক আর সাকিব মিলে একটি ভালো জুটি গড়ার সম্ভাবনা তৈরী করেছিলেন। একটু স্লো হলেও ১৪ রানের জুটি গড়ে তারা চেষ্টা করেছিলেন বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার। কিন্তু পাঙ্গিসোর স্পিনের সামনে টিকতে পারলেন না বাংলাদেশের সবচেয়ে অভিজ্ঞ টি২০ ক্রিকেটারও। ১৪ বলে ৮ রান তিনি ক্যাচ দিলেন রিলে রুশোর হাতে।
উইকেট দেওয়া কত সহজ! বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা ব্যাট করতে নামে আর উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসে। এডি লিয়ের পর পর দুই বলে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসলেন সাব্বির রহমান আর মুশফিকুর রহিম। হ্যাটিট্রকের সম্ভাবনা তৈরী হলো অভিষিক্ত এই স্পিনারের। তবে আরেক অভিষিক্ত রনি তালুকদার তার হ্যাটট্রিক ঠেকিয়ে দেন।
১৩তম ওভারের প্রথম বলেই উইকেট বিলালেন নাসির হোসেন। অ্যারোন পাঙ্গিসোর বলে উঠিয়ে মারতে যান নাসির। কিন্তু লং অফে তার ক্যাচ তালুবন্দী করেন রিলো রুশো। ৮২ রানেই পড়লো ৬ উইকেট।
রনি তালুকদারের সঙ্গে লিটন দাস জুটি বেধে কিছুক্ষণ ধরে খেলার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ৭ বলে ১০ রান করে লিটন আউট হয়ে গেলে সে সম্ভাবনাও শেষ হয়ে যায়। অধিনায়ক মাশরাফি এসে ঝড় তোলেন পরপর দুটি ছক্কা মেরে। কিন্তু ৮ বলে ১৭ রান করে তিনিও আউট। অভিষিক্ত রনি ২২ বল খেলে করেন ২১ রান। শেষ পর্যন্ত মুস্তাফিজুর রহমান বোল্ড হয়ে গেলে ১৩৮ রানেই যবনিকাপাত ঘটে বাংলাদেশের ইনিংসের।
প্রোটিয়াদের অভিষিক্ত লেগ স্পিনার এডি লিয়ে ১৬ রানে নেন ৩ উইকেট। কাইল অ্যাবট এবং অ্যারোন পাঙ্গিসোও নেন ৩টি করে উইকেট। বাকি উইকেটটি নেন ওয়েন পার্নেল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর কার্ড:
দক্ষিণ আফ্রিকা: ১৬৯/৪, ২০ ওভার (ডি কক ৪৪, ডি ভিলিয়ার্স ৪০, ডেভিড মিলার ৩০*, রুশো ১৯*, প্লেসিস ১৬; নাসির ২/২৬, আরাফাত সানি ১/৩১, মুস্তাফিজ ১/৩৪)।
বাংলাদেশ: ১৩৮/১০, ১৯.২ ওভার (সৌম্য ৩৭, রনি ২১, মুশফিক ১৯, মাশরাফি ১৭, তামিম ১৩, লিটন ১০, সাকিব ৮, আরাফাত ৫*; অ্যাডি লিয়ে ৩/১৬, কাইল অ্যাবট ৩/২০, পাঙ্গিসো ৩/৩০)।
ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ৩১ রানে জয়ী। ম্যাচ সেরা: অ্যাডি লিয়ে। সিরিজ সেরা: ডু প্লেসিস। টস: দক্ষিণ আফ্রিকা।