অনেক সময় দেখা যায়, শিশু সামান্য সর্দি, জ্বর বা কাশিতে আক্রান্ত হলেই বাবা-মায়ের উৎকণ্ঠার শেষ থাকে না। ডাক্তারের কাছে গিয়ে ব্যবস্থাপত্র নেয়ারও সময় হয় না তাদের। নিজেদের কাছে থাকা কোনো ট্যাবলেট বা সিরাপ খাইয়ে শিশুর প্রাথমিক চিকিৎসাটা সেরে নেন। এতে শিশুর জ্বর বা কাশি দ্রুত সেরে যায়। ফলে যতবার তার শরীর একটু খারাপ হয়, বাবা-মা ততবার একই কাজ করেন। হালকা সর্দি-কাশি কিংবা জ্বরে অনেক পরিবারই হাতের কাছে থাকা বড়দের ওষুধ খাইয়ে দেন শিশুদের। অনেকের ধারণা, বড়দের ওষুধের ছোট ডোজ কোনও ক্ষতি করে না শিশুদের।
কিন্তু এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। বরং এটা প্রচণ্ড ক্ষতি করে। এমনকি শিশুদের জন্য তৈরি ওষুধও মাঝে মধ্যে নবজাতদের মধ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। তাই বড়দের ওষুধ তো একেবারেই নিষিদ্ধ শিশুদের জন্য, এমনকি শিশুদের জন্য প্রযোজ্য ওষুধও চিকিৎসকদের পরামর্শ ছাড়া নবজাতকদের দেয়া উচিৎ নয়।
যেমন ধরুন, কাফ-সিরাপ বা প্যারাসিটামল। এসব ওষুধে ব্যবহৃত উপাদান বড়দের শরীরের জন্য উপযোগী হলেও, ছোটদের জন্য তা ক্ষতিকর।
প্রাথমিক অবস্থায় উপকার পাওয়া গেলেও ভবিষ্যতে শিশুর দেহের জন্য এই ওষুধই ভয়াবহ রূপ নেয়। যার জন্য বাবা-মায়ের সামান্য অসচেতনতায় দায়ি।
এই ধরনের অভ্যাস যদি আপনার থাকে, তবে অবিলম্বে তা বন্ধ করুন। আপনার অবহেলায় বাচ্চার ক্ষতি কখনোই কাম্য নয়।একটি প্যারাসিটামল ট্যাবলেটের অর্ধেকও কোনো শিশুকে খাওয়ালে, তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হবে ভয়াবহ।
প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য তৈরি ওষুধের রাসায়নিক ফর্মুলা শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সঙ্গে খাপ খায় না। এর জেরে শিশুরা নানা রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার শিকার হয়। শিশুদের কখনো একজন পূর্ণবয়স্কের সঙ্গে তুলনা করা উচিৎ নয়। এতে সাময়িক ভাবে বাচ্চাটি যদি সুস্থ হয়েও যায়, ভবিষ্যতে বিপদের আশঙ্কা থেকে যায়।তাই আপনার বাচ্চার ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আজই উচিৎ সাবধান হওয়া।
শিশুর জ্বর থাকলে ঠাণ্ডা পানি গা মুছিয়ে দিতে হবে তবে পানি যেন কনকনে ঠাণ্ডা না হয়।
কাশি বা সর্দিতে ভোগা শিশুর নাক ঘন ঘন পরিষ্কার করে দিতে হবে, বিশেষ করে শিশুটি খাওয়ার বা ঘুমোতে যাওয়ার আগে।
বুকের দুধ খায় এমন শিশুর কাশি বা সর্দি হলে খেতে অসুবিধা হতে পারে। কিন্তু বুকের দুধ খাওয়ালে অসুখের সঙ্গে লড়তে সাহায্য হয় এবং তা শিশুটির বৃদ্ধির জন্যও জরুরি, তাই মা ঘন ঘন দুধ খাওয়ানো চালিয়ে যাবেন। যদি শিশুটি দুধ টানতে না পারে, বুকের দুধ একটি পরিষ্কার কাপে বার করে রাখা যায় এবং শিশুটিকে ঐ কাপ থেকে তারপরে খাওয়ানো যায়।
যে শিশুরা বুকের দুধ খায় না তাদের ঘন ঘন অল্প অল্প করে খেতে উৎসাহিত করা উচিৎ। অসুখ সেরে গেলে, অন্তত এক সপ্তাহ পর্যন্ত শিশুটিকে দৈনিক একটি বাড়তি খাবার দেয়া দরকার। অসুস্থতা আরম্ভ হবার আগে শিশুর যা ওজন ছিল অন্তত সেই ওজন ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত শিশুটিকে সম্পূর্ণ সুস্থ বলা যাবে না।
কাশি ও সর্দি সহজেই ছড়ায়। কাশি ও সর্দি আক্রান্ত ব্যক্তিরা শিশুদের কাছে কাশি, হাঁচি বা থুথু ফেলা এড়িয়ে চলবেন।
লেখক : বক্ষব্যধি বিশেষজ্ঞ