ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলে শনিবার রাতে স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েলি নৌবাহিনীর সেনারা। রোববার সকালে ইসরায়েলের রাষ্ট্রীয় রেডিও এই খবর নিশ্চিত করেছে। গাজা ভিত্তিক ইসলামী সংগঠন হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের অব্যাহত হামলায় এটাই প্রথম স্থল অভিযান। খবর এএফপি। দেশটির রেডিও জানায়, হামাস যে স্থান থেকে ইসরায়েলের ভূখণ্ড লক্ষ্য করে রকেট নিক্ষেপ করে ওই এলাকায় এই স্থল অভিযান চালানো হয়েছে। অন্যদিকে, কয়েকজন ফিলিস্তিনির সাথে ইসরায়েলি সেনাদের গুলি বিনিময় হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে হামাস। এই সহিংসতায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। এদিকে জাতিসংঘের যুদ্ধবিরতির আহ্বানের পরেও গাজায় হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। গত ছয়দিনের হামলায় ১৬০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে দেশটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
শনিবার এক বিবৃতিতে ইসরায়েল ও গাজা উপত্যকার ফিলিস্তিনিদের মধ্যে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানায় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। পাল্টাপাল্টি হামলা থামিয়ে আলোচনা শুরু করার আহ্বান জানায় তারা। এতে বলা হয়, ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদ সর্বসম্মতিক্রমে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে।
গত মঙ্গলবার গাজায় ইসরায়েলি হামলা শুরু হওয়ার পর এই প্রথম নিরাপত্তা পরিষদের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া এলো। এর আগে এ ধরনের বিবৃতি দেওয়ার বিষয়ে জাতিসংঘের সবচেয়ে ক্ষমতাধর এই পরিষদের সদস্যদের মধ্যে মতভেদ তৈরি হয়েছিল।
এদিকে গাজায় বিমান হামলায় নিহতের সংখ্যা ১৬০ জন ছাড়িয়েছে বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। হামলায় আরো এক হাজার একশ’র বেশি মানুষ আহত হয়েছেন বলে মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র রোববার ভোরে সিএনএনকে জানিয়েছেন।
এদিন ভোরের দিকে গাজার প্রতিরক্ষা সদরদপ্তর ও থানায় বিমান হামলা হয়েছে বলে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। বিবিসির গাজা প্রতিনিধির মতে, গত ৮ জুলাই ইসরায়েলি হামলা শুরুর পর এদিনই সবচেয়ে বড় ধরনের বোমা হামলা হয়।
শনিবার সন্ধ্যায় ইসরায়েলের বিমান হামলায় গাজার একই পরিবারের ১৭ জন নিহত হয়েছেন। এদিন গাজা থেকে হামাস সদস্যরা প্রায় ৯০টি রকেট নিক্ষেপ করেছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েল।
গাজার একটি রকেট উৎক্ষেপণ কেন্দ্রে অভিযান চালানোর জন্য সেনা সদস্যদের পাঠানো হয়েছে বলে ইসরায়েল জানিয়েছে। বিবৃতিতে গাজার সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে উভয়পক্ষের বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা।
উত্তেজনা প্রশমিত করে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে এবং ২০১২ সালের নভেম্বরের যুদ্ধবিরতিতে আবার ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে বিবৃতিতে। বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করাসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানোর জন্যও বিবদমান দুই পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে পরিষদের সদস্যরা।
দুই রাষ্ট্রের ভিত্তিতে সমন্বিত একটি শান্তি চুক্তিতে পৌঁছানোর লক্ষ্যে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে সরাসরি শান্তি আলোচনা আবারো শুরু করার আহ্বান জানিয়েছে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা।
যুদ্ধবিরতির জন্য আন্তর্জাতিক চাপ সত্ত্বেও গাজা থেকে রকেট নিক্ষেপ বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত সেখানে অভিযান চালানোর ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েল। চলতি সপ্তাহে গাজার রকেট হামলায় পাঁচ ইসরায়েলি আহত হলেও এ পর্যন্ত দেশটির কোনো নাগরিক নিহত হননি।
ইসরায়েলের দাবি, তারা জঙ্গি ও জঙ্গিদের স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে। জঙ্গি গোষ্ঠীর জ্যেষ্ঠ নেতাদের বাড়ি লক্ষ্য করেও হামলা চলছে। হামলায় নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই ‘সন্ত্রাসী’ বলে দাবি করেছে ইসরায়েল। তবে গাজায় নিহতদের মধ্যে ৭৭ শতাংশ বেসামরিক নাগরিক বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।