তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরের জনপ্রিয় পর্যটন এলাকায় এক শক্তিশালী আত্মঘাতী বোমা হামলায় বিদেশি পর্যটকসহ অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন। তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য জানা না গেলেও নিহত ব্যক্তির সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গতকাল মঙ্গলবার সংঘটিত এ হামলার ব্যাপারে সিরিয়া ও ইরাকভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) দিকে ইঙ্গিত করা হলেও কেউ এর দায় স্বীকার করেনি। হামলার পর রাজধানী আঙ্কারায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর প্রধানদের সঙ্গে এক জরুরি বৈঠকে বসেন তুর্কি প্রধানমন্ত্রী আহমেত দাভুতোগলু।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানকে উদ্ধৃত করে বিবিসির খবরে বলা হয়, ইস্তাম্বুলের প্রাণকেন্দ্র সুলতানআহমেত এলাকায় একজন সিরীয় ওই আত্মঘাতী বোমা হামলা চালান।
তুরস্কের ঐতিহাসিক মসজিদ ব্লু মস্কের কাছে এই হামলা চালানো হয়েছে। ইস্তাম্বুলের গভর্নর অফিস থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, হামলায় ১০ জন নিহত ও ১৫ জন আহত হয়েছেন। হামলায় ব্যবহৃত বিস্ফোরক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছে কর্তৃপক্ষ। তুরস্কের বার্তা সংস্থা দোগানের বরাত দিয়ে রয়টার্স বলেছে, আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ছয়জন জার্মানির, একজন নরওয়ের ও একজন পেরুর নাগরিক।
হামলার পর ঘটনাস্থল ও এর আশপাশে নিহত কয়েকজনের রক্তাক্ত দেহাবশেষ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। মুরাত মানাজ নামে একজন প্রত্যক্ষদর্শী বিবিসিকে বলেন, ‘এটা ছিল আত্মঘাতী বোমার বিস্ফোরণ। আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম ও হামলা হতে দেখেছি। হামলার পর শুরু হয় বিশৃঙ্খলা। আতঙ্কে সবাই দিগ্বিদিক ছুটছিলেন।’ তিনি আরও বলেন, হামলার পর দ্বিতীয় বিস্ফোরণের আশঙ্কায় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সবাইকে সরিয়ে দিচ্ছিল।
প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেছেন, এ অঞ্চলের সব সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর শীর্ষ লক্ষ্যবস্তুতে রয়েছে তুরস্ক। তাই তাঁর দেশ এদের সবার বিরুদ্ধেই সমভাবে লড়াই চালাচ্ছে।
তুরস্কের উপপ্রধানমন্ত্রী নোমান কুরতুলমুস বলেন, হতাহতের শিকার অধিকাংশ ব্যক্তিই বিদেশি এবং আত্মঘাতী হামলাকারী ২৬ বছর বয়সী এক সিরীয় নাগরিক। ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়া তাঁর অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। হামলায় যাঁরা আহত হয়েছেন তাঁদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, হামলার সময় ঘটনাস্থল সুলতানআহমেত স্কয়ারে খুব বেশি পর্যটক ছিলেন না। ছোট ছোট দলে পর্যটকেরা ঘোরাফেরা করছিলেন।
নরওয়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, বোমা হামলা আহত তাদের এক নাগরিকের হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে। আর জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, হামলায় তাদের কোনো নাগরিক হতাহত হয়েছেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সেই সঙ্গে এই মন্ত্রণালয় ইস্তাম্বুলে অবস্থানকারী জার্মান পর্যটকদের জনসমাগম ও আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র এড়িয়ে চলার আহ্বান জানিয়েছে। তুরস্কের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা ও সন্ত্রাসী হামলার সম্ভাবনার ব্যাপারেও সতর্ক করে দিয়েছে মন্ত্রণালয়।
রয়টার্স জানায়, তাৎক্ষণিকভাবে কোনো গোষ্ঠী এ হামলার দায় স্বীকার না করলেও অতীতে তুরস্কে ইসলামপন্থী, বামপন্থী ও কুর্দি বিদ্রোহীদের বিভিন্ন হামলার নজির রয়েছে।
Prev Post
Next Post