ডেস্ক রিপোর্টঃ সাহসীকতা আর আত্মত্যাগের বিরল দৃষ্টান্ত গড়লেন গুনজান শর্মা। ১০ টি শিশুর জীবন বাঁচাতে নিজেকেই সঁপে দিলেন অপহরণকারীদের হাতে। বুধবার ভারতের সিভাসাগর জেলার সিমালুগুড়িতে একটি স্কুল-ভ্যানের শিশুদের অপহরণকালে ১৪ বছর বয়সী গুনজান সাহসীকতার এ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। সশস্ত্র অপহরণকারীদের হাতে নিজেকে সমর্পণ করার পর গহীন জঙ্গলের ভেতর দিয়ে আসাম-নাগাল্যান্ড সীমান্ত পর্যন্ত তাকে যেতে হয়েছিলো। সেখানেই একটি বাগান বাড়ী থেকে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। তার এই সাহসীকতার অগ্নি-পরীক্ষা চলে একটানা ১৪ ঘণ্টা।
গুনজান দ্যা টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদককে বলেন, অপহরণকারীরা স্কুল-ভ্যানের একটি শিশুকে তুলে নেয়ার চেষ্টা করলে সে কান্নাকাটি শুরু করে। আমি তাকে বাঁচাতে আমাকে অপহরণ করতে বলি। তখন সশস্ত্র কিডন্যাপারদের একজন আমার হাত ধরে জঙ্গলের মধ্য দিয়ে টেনে-হিঁচড়ে আসাম-নাগাল্যান্ড পর্যন্ত নিয়ে আসে।
তিনি আরও বলেন, পথিমধ্যে আমরা একটা নদী অতিক্রম করি এবং তারও কিছু সময় পর গহীন জঙ্গলের মধ্যে কিছু সময়ের জন্য থামি। জায়গাটা এতোই অন্ধকার ছিলো যে, আমি কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না, এমনকি আমার হাত পর্যন্ত দেখা যাচ্ছিল না। এভাবে দীর্ঘ সময় পর একটু বিরতি নিয়ে কখনো দৌড়ে, কখনো হেঁটে অভুক্ত অবস্থায় অপহরণকারীদের সাথে আমার রাত কাটে। শেষরাতের দিকে একটা জায়গায় ঘুমানোর সুযোগ পেয়ে আমার কিছুটা তন্দ্রার মতো এসেছিলো, খুব ভোরে চোখ খুলে দেখি অপহরণকারীদের কেউই নেই। তখন আমি পালিয়ে একটা গ্রামে এসে পৌঁছাই। গ্রামবাসী পুলিশকে খবর দিলে তারা আমাকে বাড়িতে পৌঁছে দেয়।
জানা গেছে, অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা বুধবার সিমালুগুড়ি শহরের উপকণ্ঠে বাড়ী ফেরার পথে নাজিরা কেন্দ্রিয়া বিদ্যালয়ের ১১ জন শিশুকে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করলে এগিয়ে আসেন গুনজান। দূর্বৃত্তরা সে সময় শিশুদেরকে তাদের কথা অনুসরণ করতে আদেশ দেয় এবং একটি শিশুকে তুলে নেয়, তখন গুনজান শিশুদের পরিবর্তে তাকে অপহরণ করতে বলেন।
মূখ্যমন্ত্রী তরুণ গগোই সাহসীকতার জন্য গুনজানকে দুই লাখ রুপি উপহার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এছাড়া শিক্ষামন্ত্রী হেমান্ত বিশ্ব শর্মার অনুরোধে ভারত সরকার ন্যাশনাল ব্র্যাভারী অ্যাওয়ার্ডের জন্য তাকে মনোনীত করেছে। এদিকে সিভাসাগর জেলার শিক্ষা বোর্ড তার জন্য ২৫ হাজার রুপি পুরষ্কার ঘোষণা করেছে।