ঢাকা: ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের প্রায় সব শর্ত মেনে ইহুদিবাদী ইসরাইল দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার পর অবরুদ্ধ গাজাবাসী বিজয়োল্লাসে মেতে উঠেছেন। মসজিদের মাইক থেকে ভেসে আসছে ‘আল্লাহ আকবর’ ধ্বনি, বন্দুকের ফাঁকা গুলিতে প্রকম্পিত হচ্ছে আকাশ-বাতাস, হাজার হাজার তরুণ-যুবক রাজপথে মোটর সাইকেলে মহড়া দিচ্ছেন, ভি চিহ্ন দেখিয়ে নিজেদের জয়কে জানান দিয়েছেন তারা।
জনতার এই বাঁধ-ভাঙা জোয়ারে শামিল হয়েছেন হামাসসহ গাজার বিভিন্ন ইসলামপন্থী দলের নেতারা।
সিনিয়র হামাস নেতা মাহমুদ আল-জাহার এবং সিনিয়র ইসলামিক জিহাদ নেতা মোহাম্মদ আল হিন্দি গাজা শহরের রিমাল স্কয়ারে উপস্থিত হাজারো জনতার উদ্দেশ্যে বিজয় ভাষণ দিয়েছেন। হামাসের নির্বাসিত উপনেতা মুসা আবু মারজুক বলেছেন, ‘এই চুক্তি প্রতিরোধের বিজয়’।
ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, এটা ‘নতুন জাতি বিনির্মাণ ও দখলদারিত্ব সমাপ্তির’ সুযোগ এনে দিয়েছে। তিনি কায়রো আলোচনায় পরোক্ষ ভূমিকা রাখার জন্য হামাসের পৃষ্ঠপোষক কাতার ও ইসরাইলের পৃষ্ঠপোষক যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
প্রায় ৭ সপ্তাহ ধরে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা থেকে হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও এপি ইসরাইলি কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে যে ইসরাইল যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে নিয়েছে। হামাসের প্রায় সব দাবি মেনে নেয়ার পরই এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি হলো। স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য হামাসের প্রধান চারটি শর্ত ছিল- গাজার ওপর থেকে ইসরাইলের সর্বাত্মক অবরোধ তুলে নেয়া, গাজায় নির্মাণ সামগ্রীর প্রবেশে বাধা না দেয়া এবং বিমান ও নৌবন্দর নির্মাণের সুযোগ সৃষ্টি। এর মধ্যে প্রথম দুটো শর্ত ইসরাইল অবিলম্বে কার্যকর করবে এবং শেষ দুটো শর্ত অর্থাৎ বিমান ও নৌবন্দর নির্মাণ নিয়ে এক মাসের মধ্যে উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনা শুরু হবে।
জাতিসংঘ এবং যুক্তরাষ্ট্র হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে।
গত ৮ জুলাই থেকে ইসরাইলি বর্বর বাহিনী অপারেশন প্রটেকটিভ এজ নামের আগ্রাসন শুরুর পর থেকে পোড়ামাটি নীতি অবলম্বন করে। এ সময় তাদের হামলায় প্রায় পাচশ’ শিশুসহ ২,১৪২ ফিলিস্তিনি নিহত এবং প্রায় ১১ হাজার লোক আহত হয়েছেন।
ইসরাইলি হামলায় গাজার ৮৯টি পরিবার নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। তবে এবার লড়াকু হামাসের হাতে অকল্পনীয় মার খেয়েছে ইহুদিবাদী সেনারা। ইসরাইল এখন পর্যন্ত তাদের ৬৪ সেনা নিহত এবং চারশ’ সেনা আহত হওয়ার কথা স্বীকার করেছে। হামাস অবশ্য দেড়শ’ ইসরাইলি সেনাকে হত্যা এবং দেড় হাজার সেনাকে জখম করার দাবি করেছে। ইসরাইল এটাও স্বীকার করেছে যে হামাস যোদ্ধারা প্রতিদিন ইসরাইলের অভ্যন্তরে শতাধিক রকেট ও মর্টার নিক্ষেপ করেছে। এতে ইসরাইলিদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। মারা গেছে শিশুসহ বেশ কয়েকজন ইসরাইলি।