খ্যাতনামা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, বিচারিক ও আপিল প্রক্রিয়ায় ‘গুরুতর ত্রুটির’ মধ্যেই বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর দুইজন রাজনীতিকের ফাঁসি কার্যকর আসন্ন।
১৯৭১ সালে সংঘটিত অপরাধের জন্য তাদের ফাসি কার্যকর করা হতে পারে।
বুধবার এক বিবৃতিতে লন্ডনভিত্তিক সংস্থাটি বলছে, জামায়াত নেতা আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ এবং বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিটি)।
তবে ওই ‘বিচারে ন্যায়বিচারের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড রক্ষায় ব্যর্থতা রয়েছে,’ বলছে অ্যামনেস্টি।
গত জুন ও জুলাইতে এই দুই নেতার মুত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় দেয় আপিল বিভাগ। সরকার চাচ্ছে যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিতদের মৃত্যুদণ্ড দ্রুত কার্যকর করতে আর তাই তাদের আপিল (রিভিউ) দ্রুত হচ্ছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘জাতিসংঘ বলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ন্যায়বিচারের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ২ নভেম্বর দুই নেতার রিভিউ পিটিশনের শুনানি হবে। তাদের দণ্ড বহাল রাখা হলে তাদের মৃত্যুদণ্ড রহিত করার আর কোনো আইনি পন্থা থাকবে না।
‘তাদের বিচার ও আপিল প্রক্রিয়া ছিল সুস্পষ্টভাবে ত্রুটিপূর্ণ এবং তারা যেহেতু মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি সেহেতু চূড়ান্ত অবিচার কয়েক দিন পরই ঘটতে পারে,’ বলছিলেন অ্যামনেস্টির দক্ষিণ এশিয়া গবেষণা পরিচালক ডেভিড গ্রিফিথস।
‘স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভয়াবহ অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল কিন্তু মৃত্যুদণ্ডে শুধু সহিংসতাই বাড়ছে। ন্যায়বিচারের ঘাটতি থাকায় মৃত্যুদণ্ড আরো বেশি বিরক্তিকর,’ মন্তব্য গ্রিফিথসের।
বিবৃতিতে বলা হয়, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আইনজীবীরা তার আপিলে ভয়াবহ ত্রুটির কথা তুলে ধরেছিলেন। যেমন সুপ্রিম কোর্ট ‘পিডব্লিউ-৬’ নামের একজন সাক্ষীর সাক্ষ্য বাতিল করতে ব্যর্থ হয়েছে। (রাষ্ট্রপক্ষের) ওই সাক্ষী এমন একজনের কথা বলেছিলেন যিনি সাক্ষ্য দিতে সক্ষম। ওই সাক্ষী তাকে মৃত বলে দাবি করেন কিন্তু তিনি নিজ স্বাক্ষরিত এফিডেভিটে জানিয়েছেন যে তিনি জীবিত আছেন এবং আদালতে তা প্রমাণ করতে চান।
আলী আহসান মুজাহিদের আপিলে তার আইনজীবীরা যুক্তি উপস্থাপন করেন যে জামায়াত নেতা তার অধীনস্তদের মানবাধিকার লংঘনে উসকানি দিয়েছেন বলে অভিযোগ করা হলেও এ ধরনের একজন অধীনন্তেরও পরিচয় প্রকাশ কিংবা তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়নি।
কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট এ যুক্তি গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
অ্যামনেস্টি বলছে, আইসিটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে যত রায় এসেছে তার প্রায় সবই জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের বিরুদ্ধে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধারাও গুরুতর অপরাধে জড়িত ছিলেন। কিন্তু তাদের কারো বিরুদ্ধেই তদন্ত কিংবা তাদের বিচার করা হয়নি।