দিল্লিতে বসে সরকার যতই বাগাড়ম্বর করুক, চীন সীমান্তে ভারতের অবস্থা মোটেও স্বস্তিদায়ক নয়। সেটাই প্রকাশ্যে এলো লাদাখের এক শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তার প্রতিবেদনে। লাদাখের প্রধান শহর লে’র পুলিশ সুপার পি ডি নিত্য সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে রীতিমতো বিস্ফোরক প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন দিল্লিতে। তার দেওয়া তথ্য বলছে, লাদাখ সীমান্ত এলাকায় এ মুহূর্তে অনেকটাই ব্যাকফুটে রয়েছে ভারতের নিরাপত্তারক্ষীরা।
পি ডি নিত্যা তার প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, পূর্ব লাদাখের ৬৫টি পেট্রোলিং পয়েন্টের মধ্যে ২৬টিতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে ভারত। ওই সীমান্তের পাঁচ থেকে ১৭, ২৪ থেকে ৩২ এবং ৩৭ নম্বর পেট্রোলিং পয়েন্টে এখন আর ভারতের নিয়ন্ত্রণ নেই।
এসব এলাকায় ভারতের নিরাপত্তারক্ষী বা সাধারণ নাগরিক কেউই দীর্ঘদিন যেতে পারেননি। এর ফলে, চীন-ভারতের মধ্যকার প্রায় সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার সীমান্তের একটি বড় অংশে পিছিয়ে পড়েছেন ভারতীয় রক্ষীরা।
গত সপ্তাহে দিল্লিতে ভারতের শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তাদের বার্ষিক সম্মেলনে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেছেন পি ডি নিত্যা। ওই অনুষ্ঠানে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালও উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের জন্য সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, চীন এসব এলাকায় এখনো পেট্রোলিং চালাচ্ছে এবং পয়েন্টগুলো তাদের দখলে বলে দাবি করছে। এর ফলে ভারতের দখলে থাকা এলাকাগুলো বাফার জোনে পরিণত হচ্ছে। এমনকি, ওই বাফার জোনগুলোতে ভারতীয়দের যেতেও দেওয়া হচ্ছে না। বস্তুত, ইঞ্চি ইঞ্চি করে ভারতের জমি গ্রাস করছে চীন।
নিত্যা আরও লিখেছেন, চীনের এমন কৌশল এর আগে গালওয়ান উপত্যকা এলাকায় দেখা গিয়েছিল। ২০২০ সালে ওই সীমান্তে এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে ভারতের ২০ জন ও চীনের অন্তত চার সেনা প্রাণ হারান।
লাদাখের এ পুলিশ কর্মকর্তার প্রতিবেদনে এক সেনা কর্মকর্তার বক্তব্যও উল্লেখ করা হয়েছে, যা দিল্লির জন্য আরও উদ্বেগজনক। ওই সেনা কর্মকর্তা তাকে বলেছেন, যদি ৪০০ মিটার জমি ছেড়ে দিয়ে চীনা সেনাদের চার বছর শান্ত রাখা যায়, তবে সেটাই ভালো।
ভারত সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করা হয়নি। তবে পি ডি নিত্যার প্রতিবেদনের বিষয়ে প্রথম সংবাদ প্রকাশ করা দ্য হিন্দু পত্রিকার কাছে ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জমি হারানোর তথ্য অস্বীকার করা হয়েছে।
প্রতিরক্ষা সূত্র পত্রিকাটিকে জানিয়েছে, ভারত চীনের কাছে কোনো জমি হারায়নি। কিছু কিছু এলাকায় আলোচনার মাধ্যমে দুই পক্ষ থেকেই পেট্রোলিং বন্ধ রাখা হয়েছে।