ঢাকা: ১৩ বছর পর রাজপ্রাসাদ ছেড়ে প্রকাশ্যে যাওয়ায় দুই রাজকুমারীকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে সৌদি আরবে। শুধু তাই-ই নয়, গত ৬০ দিন ধরে তাদের ঘরে আটকে রাখার পর কোনো খাবার দেওয়া হয়নি।
এরা হলেন- সৌদি রাজা আব্দুল্লাহর দুই মেয়ে- রাজকুমারী সাহার (৪২) ও রাজকুমারী জওয়াহের (৩৮)। সৌদি রাজধানী জেদ্দার রাজপ্রাসাদের একটি কক্ষে তাদের আটকে রাখা হয়েছে। এ দুই রাজকুমারী জানান, রাজপ্রাসাদের একটি ঘরে তাদের আটকে রাখা হয়েছে এবং তারা কক্ষের বাইরে যেতে পারছেন না।
তারা জানান, সবার সঙ্গে তাদের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ইন্টারনেট। এর মাধ্যমেই তারা বিশ্বের সবার সঙ্গে এতদিন যোগাযোগ করতে পেরেছেন। তারা অভিযোগ করেন, ৬০ দিন ধরে আটকা রয়েছেন এবং একমাত্র পানি ছাড়া তাদের আর কোনো খাবার দেওয়া হয়নি। এভাবে কয়েক সপ্তাহ চলার পর তারা শারীরিকভাবে ভীষণ দুর্বল হয়ে পড়েছেন। তারা আরো অভিযোগ করেন, তাদের কক্ষের বৈদ্যুতিক সংযোগ কেটে দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের কোনো খাবার ও পানি দেওয়া হচ্ছে না।
এ বিষয়ে রাজকুমারী সাহার রাশিয়ান টিভিকে (আরটি) স্কাইপের মাধ্যমে বলেন, এ এক ভয়াবহ অবস্থা! জোর করে আমাদের দুর্ভিক্ষের মধ্যে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, তারা (রাজ পরিবার) আমাদের খাবার ও পানি থেকে বঞ্চিত করেছে। তারা আমাদের স্বাধীনতা ও অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। আমরা লড়াই করে যাচ্ছি। আমরা আমাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছি, প্রতিরোধের চেষ্টা করছি। আমরা ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করছি।
সাহার প্রশ্ন রেখে বলেন, আমরা খাদ্য-পানীয় ছাড়া কীভাবে বেঁচে থাকবো? আমাদের ঝুঁকি নিতে হবে।
এ কথা বলার পর পরই সাহার কথোপকথন বন্ধ হয়ে যায়।
এদিকে, এই দুই রাজকুমারীর মা আলানাউড আল-ফায়েজ রাজা আব্দুল্লাহর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর লন্ডনে চলে যান। তিনি তার দুই মেয়ের মুক্তির জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন।
অপরদিকে, সৌদি সরকার দুই রাজকুমারীর অভিযোগ অস্বীকার করেছে। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা নিরাপত্তা রক্ষীসহ জেদ্দায় মুক্তভাবে বিচরণ করতে পারছে।
সম্প্রতি, সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে আলানাউড আল-ফায়েজ অভিযোগ করেন, রাজা আব্দুল্লাহ তার মেয়েদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছেন এবং বিষয়টি রাজপ্রাসাদ ছাড়িয়ে মানুষের মুখে মুখে রটে গেছে।
তিনি বলেন, রাজা আব্দুল্লাহ রাজকুমারী সাহার ও জওয়াহেরকে ওষুধ ও খাবার কিনতেও প্রাসাদের বাইরে যেতে দিচ্ছেন না।
এ ঘটনা জানার পর যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির এমপি কেটি ক্লার্ক দ্য গার্ডিয়ানে একটি নিবন্ধে লেখেন, তিনি সৌদি রাজকুমারীদের পক্ষে ব্রিটিশ ফরেন অফিসে লবি করবেন বলে জানান, যাতে করে তারা সৌদিতে কোনো প্রতিনিধি পাঠান।
রাজা আব্দুল্লাহ ২০০৫ সালে রাজাসন অধিকার করেন। তিনি পৃথিবীর সবচেয়ে ধনীদের অন্যতম। তার সম্পদের মূল্য ১৭ বিলিয়ন রিয়েল। তার অনেক স্ত্রী এবং এদের গর্ভে মোট ৩৮ সন্তান রয়েছে।
সাহার জানান, সৌদিতে বিদ্যমান বৈষম্যের বিরুদ্ধে তারা সমালোচনা করতেন। এ কারণে তাদের গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, রাজা ও তার ছেলেদের এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে যে, আমাদের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ আনা হয়েছে এবং আমাদের অপরাধটা কী!
তিনি প্রশ্ন করেন, এই দেশের ৯৯ ভাগ নারী পুরুষ অভিভাবকের অধীনে থেকে কী অপরাধ করতে পারে? একজন পুরুষ অভিভাবক যা ইচ্ছা তাই-ই করতে পারেন। তিনি চাইলে নারীকে সব কিছু থেকেই বঞ্চিত করতে পারেন। কিন্তু নারী কিছুই করার ক্ষমতা রাখে না!