বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার নিশ্চিত করাসহ সব নাগরিকের মানবাধিকার রক্ষায় সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসে একটি প্রস্তাব তোলা হয়েছে।
প্রস্তাবে বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্র শিবিরসহ জঙ্গিবাদী সব গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ারও আহ্বান জানানো হয়।
বুধবার কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন হাওয়াই অঙ্গরাজ্যের ডেমোক্রেট দলীয় কংগ্রেসওম্যান তুলসি গ্যাবার্ড।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই সদস্যের প্রস্তাবে সমর্থন করেন আরিজোনার রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান এবং প্রতিনিধি পরিষদে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল সম্পর্কিত সাব কমিটির চেয়ারম্যান ম্যাট স্যালমন এবং ইলিনয়ের রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান বব ডোল্ড।
দ্বিদলীয় উদ্যোগে উত্থাপিত এই প্রস্তাবে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী করা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং ক্রমবর্ধমান সন্ত্রাস প্রতিরোধেরও আহ্বান জানানো হয়।
“নানাবিধ কারণেই বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতির প্রশ্নে বিভিন্ন মহলে উদ্বেগ রয়েছে। বিশেষত গত বছরের জানুয়ারিতে ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনের পর রাজনৈতিক সংঘাতের বিস্তার ঘটে এবং তা সামগ্রিক পরিস্থিতিকে নাজুক করে ফেলে।
“আমি বাংলাদেশের মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে বেশী চিন্তিত। বিশেষ করে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর আক্রমণের ঘটনা আমাকে বিচলিত করেছে। বাংলাদেশে খ্রিস্টান, বৌদ্ধসহ অন্যান্য ধর্ম-জাতিগোষ্ঠিও আক্রান্ত হচ্ছে।”
‘সংখ্যালঘুদের হামলায় জড়িতরা খুব কমই বিচারের সম্মুখীন হচ্ছে বা শাস্তি পাচ্ছে,’ বলে উল্লেখ করেন এই কংগ্রেসওম্যান।
প্রস্তাব সমর্থন করে বোব ডোল্ড বলেন, “কোনো দেশ নাগরিকদের, বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের মৌলিক স্বাধীনতা রক্ষায় ব্যর্থ হলে তা বরদাশত করা হবে না। বিশ্বের মানবিক মূল্যবোধের বৃহৎ শক্তি হিসেবে সে সব দেশের কাছে যুক্তরাষ্ট্র একসুরে এই বার্তা পাঠাতে বাধ্য।
“বাংলাদেশের সম্ভাবনা প্রচুর। আমরা সহিংস রাজনীতি পরিহারে বাংলাদেশের প্রতি উদাত্ত আহবান জানাচ্ছিন । একইসঙ্গে আইনের শাসন সুসংহত এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে জোরদার করার পাশাপাশি ধর্মীয় উগ্রপন্থি দমনে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নেবে বলে আশা করছি।”
গৃহীত প্রস্তাবে বলা হয়:
১. প্রতিনিধি পরিষদ ১৯৭১ সালের এর মুক্তিযুদ্ধের ভিকটিমদের কথা স্বীকার করছে।
২. আইনের শাসন, নির্বাচন প্রক্রিয়া ও যুদ্ধাপরাধের বিচারে আন্তর্জাতিক রীতিনীতি মেনে চলতে বাংলাদেশ সরকারকে আহবান জানাচ্ছে।
৩. চরমপন্থী গ্রুপ যেমন জামায়াত (জেইআই), ছাত্র শিবির (আইসিএস), যারা দেশের ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতার জন্যে হুমকিস্বরূপ তাদের কর্মকান্ড ঠেকাতে এবং
৪. সকল নাগরিকের বিশেষত দুর্বল ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছে।
উল্লেখ্য এই প্রস্তাব উত্থাপনে যুক্তরাষ্ট্র হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, সেন্টার ফর ইনক্যুয়ারি, আমেরিকান হিউম্যানিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, মুক্তমনা, দৃষ্টিপাত, দেলওয়ারের ভ্যালি বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশন, সেক্যুলার কোয়ালিশন অব আমেরিকা ও হিন্দু আমেরিকান ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে।
হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের যুক্তরাষ্ট্র শাখার অন্যতম সংগঠক শিতাংশু গুহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ধর্মের নামে উগ্রপন্থি দমনের ব্যাপারটিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এ প্রস্তাব উত্থাপনী বক্তব্যে।