জেনেভা থেকে অনইসলাম : জাতিসংঘের তদন্তকারীরা সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদসহ সিনিয়র কর্মকর্তাদের মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের সুস্পষ্ট প্রমাণ পেয়েছেন। ২০১১ সালে দেশটিতে গণঅভ্যুত্থার শুরু হওয়ার পর জাতিসংঘ এই প্রথমবারের মতো এ তথ্য প্রকাশ করলো। জাতিসংঘ তদন্ত কমিশন তদন্ত চালিয়ে খুবই মারাত্মক ধরনের অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাদের ব্যাপক প্রমাণ পেয়েছে। জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনার নাভি পিল্লাই এ তথ্য জানান। তার বক্তব্যের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, তিনি বলেছেন, যেসব তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে, তাতে সুস্পষ্টভাবে বোঝা যায় রাষ্ট্রপ্রধানসহ সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের লোকজন এ ধরনের মারাত্মক অপরাধের জন্য দায়ী।
জাতিসংঘ তদন্তকারীদের একটি বিশেষ প্যানেল গণহত্যা, রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার, নির্যাতন-নিপীড়ন, ধর্ষণ ও অন্যান্য ভয়াবহ অপরাধের ঘটনা রেকর্ড করেছে। জাতিসংঘের এই বিবৃতি প্রকাশের পরপরই একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় সিরিয়ায় সংঘাতের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত অন্ততপক্ষে ১ লাখ ২৫ হাজার ৮৩৫ জন নিহত হয়েছে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৪৪ হাজার ৩৮১ জন বেসামরিক ব্যক্তি। এর মধ্যে ৬ হাজার ৬২৭ জন শিশু ও ৪ হাজার ৪৫৪ জন নারী।
অবজারভেটরি আরো জানায়, নিহতদের মধ্যে অন্ততপক্ষে ২৭ হাজার ৭৪৬ জন বিদ্রোহী যোদ্ধা। এর মধ্যে ১৯ হাজারের বেশি যোদ্ধা বেসামরিক ব্যক্তি যারা বাশার আল আসাদের সরকারকে উৎখাতের লক্ষ্যে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল।
অন্যদিকে যুদ্ধে সিরীয় সরকারি বাহিনীর অন্ততপক্ষে ৫০ হাজার ৪৩০ জন নিহত হয়েছে। সরকারের সমর্থক স্থানীয় মিলিশিয়ারাও এর মধ্যে রয়েছে।
আগামী জানুয়ারিতে জেনেভায় শান্তি সম্মেলনের আগে জাতিসংঘের এ তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশিত হলো। ফলে বিরোধীদের সঙ্গে প্রথমবারের মত অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকে বাশার আল আসাদ নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। নাভি পিল্লাই আল জাজিরাকে বলেন, ২০১৩ সালের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে আমরা যদি চারদিকে তাকাই তাহলে পরিস্থিতি সম্পর্কে অনেক দৃষ্টান্ত দেখতে পাবো। এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যথাসময়ে কাজ করার বিষয়ে প্রস্তুত রয়েছে।
জাতিসংঘ তদন্ত কমিশন সিরিয়ার বিদ্রোহীদের ব্যাপারেও তদন্ত চালায়। জাতিসংঘ মানবাধিকার সংক্রান্ত হাই কমিশনার বলেন, উভয়পক্ষের লোকজনই এমনসব ভয়াবহ অপরাধের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। যা বিশ্বাস করার মত নয়।
সিরিয়ায় মানবাধিকার লংঘনের ঘটনার বিস্তার ঘটা সম্পর্কে জাতিসংঘ বার বার সতর্ক করে দিয়েছে।
জাতিসংঘ মানবাধিকার সংক্রান্ত হাইকমিশনার জোর দিয়ে বলেছেন, জাতিসংঘের তদন্ত কাজ অত্যন্ত গোপনে পরিচালিত হয়। এতে দেখা যায়, সিরিয়ার সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিদের অনেকেই অপরাধমূলক কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত।
নাভি পিল্লাইয়ের বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকা জানায়, তিনি বলেন, যারা অপরাধের সঙ্গে জড়িত তাদের নাম গোপন রাখা হয়েছে। তদন্তকারীদের তদন্ত কাজ বিশ্বাসযোগ্য হয়েছে বলে আমি জানানোর পর এই নামের তালিকা প্রকাশ করা হবে।
জাতীয়ভাবে বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তদন্ত কাজ চলতে পারে। মানবাধিকার লংঘনের ফলে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের কাছ থেকে সঠিকভাবে সাক্ষ্য প্রমাণ গ্রহণ করা হয়েছে।
নাভি পিল্লাই অপরাধীদের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিচার নিশ্চিত করার জন্য আবারো আহ্বান জানান এবং হেগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের কাছে তদন্ত রিপোর্ট হস্তান্তর করার কথা বলেন।
এই অপরাধের বিচার করতে হলে জাতিসংঘের ৫টি স্থায়ী সদস্য দেশের সমর্থন প্রয়োজন।
পিল্লাই যুক্তি তুলে ধরে বলেন, সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্র ধ্বংসের কারণে প্রচলিত অস্ত্র ব্যবহারের দিক থেকে দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরানো উচিত হবে না। কারণ অধিকাংশ মানুষ নিহত হয়েছে প্রচলিত অস্ত্র ব্যবহারের ফলেই। ২০১১ সালের প্রথম দিকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও বিভিন্ন অধিকারের দাবিতে সিরিয়ায় বিক্ষোভ শুরু হয়। কিন্তু প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সরকার তাদের দাবি-দাওয়ার দিকে গুরুত্ব না দিয়ে দমন-পীড়নের পথ বেছে নিলে পরবর্তীতে বিক্ষোভ সশস্ত্র বিদ্রোহে রূপ নেয়।