ঢাকা: সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ভারতীয় দূতাবাসে কর্মরত উচ্চপদস্থ কূটনীতিক দেবযানি খোবড়াগাড়কে গ্রেপ্তার করে নিউইয়র্ক পুলিশ। ম্যানহাটনের ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রসিকিউটর প্রীত ভারারার অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার হন তিনি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি গৃহকর্মীকে চুক্তির চেয়ে কম বেতন দিতেন এবং সপ্তাহে চল্লিশ ঘন্টারও বেশি কাজ করতে বাধ্য করতেন, কিন্তু গৃহকর্মীর ভিসা-আবেদনে এ সংক্রান্ত মিথ্যা তথ্য প্রদান করেছেন। সে দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র নোয়েল ক্লে বলেছেন, দেবযানিকে গ্রেপ্তারে সকল আইনী প্রক্রিয়া মেনে চলা হয়েছে।
এ গ্রেপ্তারের ঘটনাকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক বৈরীভাবাপন্ন হয়ে উঠেছে। নয়াদিল্লীতে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠিয়ে কড়া ভাষায় প্রতিবাদ জানিয়েছে ভারত। রাহুল গান্ধী, নরেন্দ্র মোদীর মত সিনিয়র নেতারা যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের কোন প্রতিনিধির সাথে দেখা করতে চেয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। জবাবে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সুশীল কুমার সিন্ধে, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিব শংকর মেনন ও লোকসভার স্পিকার মীরা কুমার যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকদের সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত একাধিক মিটিং বর্জন করেছেন।
ভারত নিজ দেশে কর্মরত যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিক ও তাদের পরিবারকে দেয়া বিশেষ আইডি কার্ড জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছে, যে কার্ডের মাধ্যমে কূটনীতিক ও তার পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার সুবিধা পেতেন। সেই সাথে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক দপ্তরসমূহে এবং কূটনীতিকদের বাড়িতে কর্মরত ভারতীয় কর্মচারী ও গৃহকর্মীদের বেতনভাতা সম্পর্কে পূর্ণ তথ্য চেয়েছে। এছাড়াও ভারতের যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক স্কুলগুলোয় কর্মরত শিক্ষকদের ভিসা ও বেতন সংক্রান্ত সকল কাগজপত্র জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছে। উদ্দেশ্য, পরখ করে দেখা, ভারতে তাদের অবস্থানের অনুমতি প্রযোজ্য আছে কী না এবং তারা আয়কর ঠিকভাবে পরিশোধ করছে কী না।
দুই সন্তানের মা ৩৯ বছর বয়স্কা দেবযানি খোবড়াগাড়কে গত ১২ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সকালে, মেয়েকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে আসার পথে গ্রেপ্তার করে নিউইয়র্ক পুলিশ। সে সময় রাস্তা থেকেই তাকে হাতকড়া পরিয়ে প্রকাশ্যে নিয়ে যাওয়া হয় এবং প্রিজন সেলে মাদকাসক্তদের সাথে আটকে রাখা হয়। একজন উচ্চপদস্থ কূটনীতিকের সাথে এ ধরনের আচরণ একবারেই মেনে নেয়া যায় না বলে জানিয়েছেন ভারতের নেতৃস্থানীয়েরা। জনাব মেনন এ ঘটনাকে উল্লেখ করেছেন ‘ঘৃণ্য এবং বর্বরোচিত’ হিসেবে।
নিউইয়র্ক প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, অভিযোগ প্রমাণিত হলে দেবযানির ১৫ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। উল্লেখ্য, আড়াই লাখ ডলার বিনিময়ে এরই মাঝে দেবযানিক জামিন দেয়া হয়েছে। গৃহকর্মী সংগীতা রিচার্ড এ বছরের জুন মাস থেকে পলাতক।