এক সময় ব্রিটিশ সাম্রাজের সূর্যাস্ত হতো না। সেদিন হয়েছে বাসি। এখন ঘরেই ভাঙনের নিষ্ঠুর পয়গাম। স্বাধীনতার স্বপ্নে বিভোর হয়েছে স্কটল্যান্ড। অর্ধেকের বেশি স্কটিশ জানিয়ে দিয়েছেন, তারা স্বাধীনতা চান। কারো কাছে তাদের সাধ-স্বাধীনতাকে জিম্মা দিতে আর রাজি নন তারা।
সম্প্রতি স্কটল্যান্ডে স্বাধীনতার পক্ষে-বিপক্ষে রায় দেওয়ার জন্য স্কটিশরা একটি জরিপে অংশ নেন। দ্য ইউগভ/সানডে টাইমস পত্রিকা পরিচালিত গণভোটে ৫১ শতাংশ ‘হ্যাঁ’ ভোট পড়েছে। মানে স্কটল্যান্ড স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি চায়। তাই যদি সত্যি হয়, তবে ভেঙে যাচ্ছে যুক্তরাজ্য- এটিই নির্মম বাস্তবতা।
এ অবস্থায় ঘুম হারাম হয়েছে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের। বসে থাকতে পারছেন না বিরোধীদলীয় লেবার পার্টির নেতা ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন। স্কটল্যান্ডের সঙ্গে যুথবন্ধ থাকতে এখন সব ধরনের চেষ্টাই তারা করে যাচ্ছেন।
এরই মধ্যে রোববার ডেভিড ক্যামেরন ঘোষণা দিয়েছেন, যুক্তরাজ্যের সঙ্গে স্কটল্যান্ড একীভূত থাকলে এবং তাতে সাম্রাজের অখণ্ডতা রক্ষিত হলে, স্কটিশদের হাতে আরো বেশি ক্ষমতা দেওয়া হবে। এ জন্য নতুন একটি পরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। কিন্তু এ পরিকল্পনা কি রুখতে পারবে স্কটিশদের স্বাধীনতার স্বপ্ন?
স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার ব্যাপারে অনেক আগে থেকেই কিছু কিছু স্কটিশ নেতারা দাবি তুলে আসছিলেন। অবশ্য কখনো সে দাবি ভাঙনের সুর চূড়ায় তুলতে পারেনি। কিন্তু এবার? জরিপেই দাবির কোটা পূরণ হয়েছে। আসন্ন গণভোটে যদি এ দাবির পক্ষে ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পড়ে, তবে স্বাধীন হবে স্কটল্যান্ড, ভেঙে যাবে যুক্তরাজ্য।
যুক্তরাজ্যের সঙ্গে স্কটল্যান্ড থাকবে-কি-থাকবে না, এ নিয়ে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে ১০ দিন বাদে বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৪-তে। প্রায় দেড় বছর আগে ২০১৩ সালের ২১ মার্চে স্বায়ত্তশাসিত স্কটিশ সরকার ও যুক্তরাজ্যের সরকারের মধ্যে ‘স্কটল্যান্ড স্বাধীনতা গণভোট বিল’ চুক্তি হয়। একই বছর ১৪ নভেম্বর বিলটি স্কটিশ পার্লামেন্টে পাশ হয় এবং ১৭ ডিসেম্বর রানির সম্মতি পায়। গণভোটে যে প্রশ্নে ‘হ্যাঁ’, ‘না’ উত্তর জানতে চাওয়া হবে, তা হলো- ‘স্কটল্যান্ডের কি একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হওয়া উচিত?’
এখন প্রশ্ন হলো- যুক্তরাজ্য কি এক পতাকার নিচে থাকছে, নাকি বিশ্ব মানচিত্রে নতুন কোনো পতাকা যুক্ত হচ্ছে। কারণ সামনে আছে মাত্র ১০ দিন। তারপর গণভোট। ভোটে ‘হ্যাঁ’ জয়যুক্ত হলেই স্কটল্যান্ড হবে সার্বভৌম রাষ্ট্র, তৈরি হবে স্কটিশ জাতির নতুন সংবিধান। কাঁটা তারে ছিন্ন হবে যুক্তরাজ্যের বন্ধন।
আটলান্টিক মহাসাগরবেষ্টিত যুক্তরাজ্য যখন গ্রেট ব্রিটেন নামে পরিচিত ছিল তখন এর সঙ্গে ছিল আয়ারল্যান্ড। ১৯২২ সালে আয়ারল্যান্ড তার মূল ভূখণ্ডের ছয় ভাগের পাঁচ ভাগ নিয়ে গ্রেট ব্রিটেন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র হয়। ছোট্ট ভূখণ্ড উত্তর আয়ারল্যান্ড যুক্তরাজ্যের সঙ্গে থেকে যায়।
১৭০৭ সালে স্কটল্যান্ড ও ইংল্যান্ড মিলে গঠিত হয় ইউনাইটেড কিংডম অব গ্রেট ব্রিটেন। আর ১৫৩৬ থেকে ইংল্যান্ডের যুক্ত হয় ওয়েলস। প্রায় ৩০৭ বছর একসঙ্গে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার পর স্কটল্যান্ড স্বাধীনতা চাইছে। বলতে গেলে- স্বপ্ন পূরণের পথে শেষ কদমে পৌঁছে গেছেন স্কটিশরা।
বিষয়টিকে মোটেও ভালোভাবে দেখছেন না ব্রিটিশ সাম্রাজের শীর্ষ ব্যক্তি রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে তিনি ভীষণ উদ্বিগ্ন। এতে সাংবিধানিক সংকটে পড়বে যুক্তরাজ্য। তা ছাড়া রানির কর্তৃত্ব এলাকাও সংকুচিত হয়ে আসবে। শক্তি হারাবে যুক্তরাজ্য। ফলে যেকোনোভাবে স্কটিশদের বুঝিয়ে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে একীভূত রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরনকে যা করার তা-ই করতে বলেছেন রানি।
তবে স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের যে স্বপ্ন মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে স্কটল্যান্ডে, তা কি মনভোলানি মন্ত্রে থমকে রাখা যাবে, নাকি নতুন একটি স্বাধীন দেশের পতাকা দেখবে বিশ্ব- তার জন্য গুণেগুণে ১০টি দিন অপেক্ষা করতে হবে সবাইকে।