ঢাকা: উপজেলা নির্বাচনের পর রাজধানীতে মহাসমাবেশ করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। নিজেদের অবস্থান জানান দিতে এ কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে দলটির একাধিক দয়িত্বশীল সূত্র। এ মহাসমাবেশে তারা বিএনপির কোনো সহায়তা নেবে না বলেও জানা গেছে।
পাশাপাশি সহিংস আন্দোলন ছেড়ে সহনশীল ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে ফিরতে চায় দলটি। একই সঙ্গে দলকে শক্তিশালী করতে নতুন নতুন ফর্মুলাও খুঁজছেন শীর্ষ নেতারা। জামায়াতের এমন অবস্থানের কথা বাংলামেইলকে জানিয়েছেন দলটির শীর্ষ পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতা।
তারা জানিয়েছেন, সংসদ নির্বাচনের পর উপজেলা নির্বাচন শেষ হলে রাজধানীতে মহাসমাবেশ করার পরিকল্পনা রয়েছে জামায়াতের। এতে ১০ লাখের বেশি নেতা-কর্মী-সমর্থকের সমাবেশ ঘটানোর চেষ্টা থাকবে। এজন্য বেশ কিছুদিন আগ থেকেই সারাদেশে সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। দলছে দাওয়াতের কাজও।
জানা গেছে, রাজধানীতে দুর্গ গড়ার লক্ষ্যে মহাসমাবেশের এ আয়োজন করা হচ্ছে। এজন্য ঢাকা মহানগরের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে অবিরত সাংগঠনিক বৈঠক চালানো হচ্ছে। একই সঙ্গে ঢাকার পাশ্ববর্তী জেলায়গুলোতেও চলছে সাংগঠিনক শক্তি বাড়ানোর মহড়া।
সমাবেশ সম্পর্কে ঢাকা মহানগর জামায়াতের এক শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন, সম্ভাব্য এ প্রোগ্রামটি এ বছরের জানুয়ারির প্রথম দিকেই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নানা করণে সমাবেশটি করতে দেরি হচ্ছে। তাছাড়া সরকারের কঠোর নজরদারি ও মনোভাবের কারণে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের কাছে কেন্দ্রের বার্তা সঠিকভাবে পৌঁছানো যাচ্ছে না। এজন্য সমাবেশের আয়োজন করতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘সরকারের কঠোর হিংসাত্মক মনোভাবের কারণে দেশবাসীর মনোভাব এখন জামায়াতের দিকে বেশি, যা গত দুই দফায় অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে প্রমাণিত হয়েছে। বিষয়টি কেন্দ্রীয় জামায়াতকে আরো সাহস দিচ্ছে। উপজেলা নির্বাচন শেষ হলে সমাবেশের পূর্ণ প্রস্তুতি নেয়া হবে।’
সূত্র জানায়, উপজেলা নির্বাচনে মোটামুটি ভালো ফল অর্জনের পর কেন্দ্রীয়ভাবে একলা চলার নীতি অবলম্বন করে নিজেদের অস্তিত্ব আরো বেশি জানান দিতে এ কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধিই সম্ভাব্য এ সমাবেশের প্রধান লক্ষ্য।
এদিকে জামায়াত নিষিদ্ধ করতে আদালতে মামলা, নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন বাতিল, যুদ্ধাপরাধসহ ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা ও ট্রাইব্যুনাল থেকে একের পর এক ফাঁসি ও যাবজ্জীবন দণ্ডাদেশ আসছে কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে। তাছাড়া জামায়াতকে মিছিল মিটিং করতে না দেয়া, রাস্তায় দেখলেই গ্রেপ্তার, হামলা মামলাসহ সরকারের কঠোর অবস্থানের মধ্যেই নেয়া হয়েছে সম্ভাব্য এ মহাসমাবেশের প্রস্তুতি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দলটির ঢাকা মহানগরীর কর্মপরিষদের ওই সদস্য বাংলামেইলকে বলেন, ‘সরকার যতই জুড়িশিয়াল কিলিং, হামলা-মামলা, নির্যাতন গ্রেপ্তার করুক ইসলামি আন্দোলনের কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখতে পারবে না। ইসলাম প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যুগে যুগে অসংখ্য ধর্মপ্রাণ মুসলমান শহীদ হয়েছেন। এ আন্দোলনের সৈনিকরা সব সময় শহীদ হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকেন।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের সমাবেশের প্রস্তুতি ঠিকমতোই চলছে। শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। কিন্তু সরকার চায় না আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করি। এ জন্যই তারা বার বার আমাদের ওপর নির্যাতনের স্টিম রোলার চালাচ্ছে।’
তিনি আরো জনান, উপজেলা নির্বাচন শেষে যে কোনো দিন মহাসমাবেশের জন্য স্থান চাওয়া হবে। এটা কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় আরেক নেতা বলেন, ‘সরকার সমাবেশের অনুমতি না দিলে এর পরিণতি হবে ভয়াবহ। যে কোনো মূল্যে সমাবেশ সফল করা হবে।’
জামায়াতের এমন প্রস্তুতির পাশাপাশি সম্ভাব্য মহাসমাবেশকে সামনে রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসলামী ছাত্রশিবির। যে কোনো মূল্যে এটি সফল করা হবে বলেও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ তারা। এজন্য রাজধানী ঢাকা ও তার আশপাশের জেলাগুলোতে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন সংগঠনটির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা।
জামায়াত মনে করে হরতাল অবরোধে দেশব্যাপী যে তাণ্ডব হয়েছে এজন্য সরকারই দায়ী। তারা বলছেন, সরকার যদি তাদের নেতাকর্মীদের ওপর তাণ্ডব না চলাতো তাহলে যে কোনো কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবেই পালিত হতো। বাধা আসায় তার জবাব দিতে গিয়েই সহিংসতা হয়েছে।
অপন একটি সূত্র জানায়, দেশব্যাপী আবারো সংগঠনকে শক্তিশালী করতে দীর্ঘমেয়াদী কর্মসূচি হাতে নিয়েছে জামায়াত। এরমধ্যে তফসিল ঘোষিত এলাকাগুলোতে নির্বাচনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করছে জামায়াত। এর মাধ্যমে দলের দাওয়াত ও আদর্শ সাধারণ জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা চলছে দলটির পক্ষ থেকে।
সূত্র আরো জনায়, উপজেলা নির্বাচনের পর থেকে হরতাল আহ্বানসহ সরকার পতনের যে কোনো কর্মসূচি বাস্তবায়নে প্রস্তুত করা হচ্ছে দলের নেতাকর্মীদের। এজন্য দেশের সব জেলা, থানা, ইউনিট শাখা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডভিত্তিক সংগঠনকে শক্তিশালী করা হচ্ছে। নিষ্ক্রিয় নেতাদেরও সক্রিয় করার চেষ্টা চলছে।