স্বাধীনতার ৪৩ বছরের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি: শিবির সভাপতি

0

zabbAR১৯৭১ সাল। একটি ইতিহাস। একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। দীর্ঘ শোষন বঞ্চনার নাগপাশ থেকে মুক্তির তাড়নায় ছিনিয়ে আনা নির্মল সবুজ একটি ভূখন্ড। শত চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আজকের এ অর্জন। ৪৩ বছর একটি নবজন্মা দেশের জন্য খুব বেশী সময় না হলেও কম সময় নয়। এই ভুখন্ডকে ঘিরে আমাদের প্রত্যাশার কমতি ছিলনা,এখনো এক বুক আশা বুকে চেপে বেঁচে থাকার সোনালী স্বপ্ন দেখে দেশের মানুষ। যদিও বা এ দেশ বিশ্ব দরবারে দুর্ণিতিতে চ্যাম্পিয়ান হয়ে তলা বিহীন ঝুড়িতে পরিণত হয়েছে, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের কাছে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শৃংখলে পৃষ্ট হয়ে চলছে। নানা ধরণের ঘৃণ্যতর চক্রান্তের পদাঘাতে দেশ আক্রান্ত হলেও জনগণের দেশের প্রতি আকুন্ঠ ভালবাসা ও পরিশ্রম প্রিয়তার কারণে দেশ এখনো মেরুদন্ডহীন হয়নি। শাষকগোষ্টীরা ক্ষমতাকে দেশের উন্নয়নে ব্যবহার না করে নিজেদের আখের গোছানোর সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছে। অন্যদিকে সাধারণ মানুষ তাদের হাঁড় ভাঙ্গা পরিশ্রম দিয়ে তিলে তিলে দেশকে গড়তে নিরন্তর চেষ্টা চালাছে। বিচারের নামে অবিচার ধর্মনিরেপেক্ষতার নামে ধর্মহীণতা আমাদের অস্তিত্বকে চুরমাড় করে দিয়ে এক নতুন প্রেতাত্না জাতির ঘাড়ে ভর করেছে। এরপর ও আমরা আশা নিয়ে বেঁচে থাকি কারণ আমাদের তরুণরা মেধাবী ও সাহসী। তাদেরকে যদি আজ সঠিক দিকনির্দেশনা দেয়া যায় তাহলে দেশ এগিয়ে যাবে। মাথা উচুঁ করে বিশ্ব দরবারে স্থান করে নেবে আমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ।

আমাদের প্রত্যাশাঃ
স্বাধীণতার মুক্তির সংগ্রামে যারা সেদিন অংশ গ্রহন করেছিল তাদের প্রত্যেকের তীব্র আকাঙ্খা ছিল আমরা স্বাধীন সার্বভৌম একটি বাংলাদেশ পাব। যেখানে কারো তাবেদারী থাকবেনা।গড়ে উঠবে বৈষম্যহীন সুদৃঢ় ঐক্যের বাংলাদেশ। থাকবেনা রাজনৈতিক দুবৃত্তায়ন। থাকবে অর্থনৈতিক সুদৃঢ় ভিত্তি। মুক্তবাজার অর্থণীতিতে আমরা ও এগিয়ে যাবে সমভাবে। সু-সম্পর্ক থাকবে প্রতিবেশী দেশের সাথে, আমাদের কোন বন্ধু অববয়বে শত্রু থাকবেনা ,এদেশের প্রতি থাকবেনা খবরদারী ; থাকবে শুধু বন্ধুত্ত ও পরস্পর সহযোগীতার সম্পর্ক।

আমাদের প্রাপ্তিঃ
দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে অনেক কিছু সা¤্রাজ্যবাদীরা নিয়ে গেলেও আমরা একটি সমৃদ্ধ ভাষা পেয়েছি। যার অবস্থান পৃথিবীতে ষষ্ট। লাল সবুজের এমন একটি পতাকা পেয়েছি যে পতাকটি পৃথিবীর অন্য যে কোন দেশের পতাকার চেয়ে সুন্দর , যেমন সুন্দর এখানকার চোখ জুড়ানো প্রাকৃতিক দৃশ্য। এমন একটি ভুখন্ড পেয়েছি যে ভূখন্ডটি এশিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিধি জুড়ে। পূর্বদিকে সু-বিশাল বঙ্গপসাগর,অন্য তিন দিকে ভারত ও মায়ানমার দ্বারা বেষ্টিত। জনসংখ্যা সাড়ে সাত কোটি মানুষের ১৪ কোটি হাত নিয়ে এর যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে জনসংখ্যা ১৬ কোটি ছাড়িয়ে। এখানের মানুষরা অসম্ভব পরিশ্রম প্রিয়,অল্পে তুষ্ট। আমরা পেয়েছি একটি উর্বর ভুমি। সাম্প্রদায়িক সম্প্রিতির বাংলাদেশ।

এত সম্ভবনা থাকার পরও মৌলিক অপ্রাপ্তিঃ
বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে স্বাধীন হওয়ার পর স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশকে সহযোগীতা করার নামে ভারত বাংলাদেশকে তাদের করদ রাজ্যে পরিণত করতে অব্যাহত রেখেছে নানামুখি আগ্রাসন । অন্যদিকে আমেরিকা সহ পশ্চিমা দেশ গুলো সামরিক ও অর্থনৈতিক ভাবে অপ্রতিদ্বন্ধি চীনকে ঘায়েল করার বৃহৎ পরিকল্পনা নিয়ে বাংলাদেশকে তাদের ফাইটিং জোন হিসেবে প্রস্তুত করতে চায়,কারণ এই দেশটি ভৌগলিক ভাবে চীনকে আক্রমন করার সবচেয়ে উপযোগী ভূমি। ভারত একক ভাবে এতদঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার করুক সেক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র নারাজ। তাদের বৃহত্তর স্বার্থে ভারতের সাথে সু-সম্পর্ক বজায় রাখলেও মূলতঃ ভারতকে কাজে লাগিয়ে এতঞ্চলে চীনের একক আধিপত্য খর্ব করাই যুক্তরাষ্ট্রের মূল উদ্দেশ্য। ভারত এক সময় চীনের মত অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তিতে উন্নিত হউক এটি কোন ভাবে চাইবেনা,কারণ এশিয়া মহাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের একক আধিপত্য বিস্তারে চীন একমাত্র বাঁধা আবার এর ভিতর নতুন কোন বিষ ফোঁড়া গজে উঠুক তারা তা হতে দেবেনা। এ কারণে বিশ্ব মিডিয়ায় প্রচারিত সংবাদ মাধ্যম গুলো ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বিশ্লেষনের মাধ্যমে অনুমান করা যায় যে ভারতের অঙ্গ রাজ্য গুলো সময়ের ব্যাবধানে ভাঙ্গনের কাজে যুক্তরাষ্ট্র কাজ করে যাচ্ছে নিরিবিচ্ছিন্ন ভাবে। সময়ে সময়ে ভারতের দাঙ্গা গুলো রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বিশ্লেষনকে অতিশয় সত্য প্রমাণিত বলে প্রমাণিত করে। দেশের পর্বত্য চট্রগ্রাম নিয়ে নানামুখী ষড়যন্ত্র নিয়ে আধিপত্যবাদী রাষ্ট্র্রগুলো এগিয়ে চলছে।দেশের সচেতন নাগরিকরা উদ্বিগ্ন না জানি কখন এমন একটি সম্ভবনামনয়ী অঞ্চলকে বাংলাদেশ হারাবে!

স্বাধীণতা-সার্বভৌমত্ব এখনো নিরাপদ নয়ঃ
৪৩ বছর পরেও আমাদের ভাবতে (!) হয় আমাদের স্বাধীণতা-সার্বভৌমত্ব নিরাপদ নয়। পার্শ্ব দেশের ফরামায়েশি দেশের জনগণকে বিষিয়ে তুলেছে। আমাদের রাজনীতি,অর্থনীতি ও সংস্কৃতির অলিখিত ভাবে তাদের হাতে। প্রতিনিয়ত সীমান্তবর্তী মানুষের মৃত্যু যন্ত্রণায় প্রতিটি দেশ প্রেমিক নাগরিক দেশের স্বাধীণতা-সার্বভৌমত্ব নিয়ে উদ্বিগ্ন। আমাদের পাশ্ববর্তী দেশ বন্ধুত্তের প্রশ্নে উত্তির্ণ নয়। আমরা যেন স্বাধীণ দেশের বন্দি নাগরিক। এমন পরিস্থিতিতে বারবার প্রশ্ন জাগে আমাদের কষ্টের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীণতার ফসল কি ? এমন আচরণ নিশ্চয় কোন প্রতিবেশী দেশের আচরণ হতে পারেনা। আমাদের দেশ থেকে ওরা নেবে আর নেবে আমরা সব বিলিয়ে দেব এ যেন মগের মুল্লুক, আমরা জীবিত থেকেও মৃত লাশ। আমরা এমন স্বাধীণতা চেয়েছিলাম যেখানে থাকবেনা কোন বঞ্চনা ও অধিকার আদায়ের পূণ পূণ আন্দোলন। আমরা চেয়েছিলাম হাত হাত রেখে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে যাওয়ার বাংলাদেশ। যেদেশটি বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাড়াবে প্রমান করবে আমরা স্বার্বভেীম আমরা স্বাধীণ।
গণতন্ত্রের পরিবর্তে রাজতন্ত্রের কবলে বাংলাদেশঃ একটি দেশকে গণতন্ত্রের ফ্রেমে বন্দি করা যায়, গণপ্রজাতন্ত্রী দেশ সরকার বলা যায় কিন্তু বাস্তবতা এর পুরো উল্টো। আমাদের দেশের রাজণীতি রাজতন্ত্রের ফ্রেমে আবদ্ধ সেই সূচনা লঘ্ন থেকে । এখানে শেখ পরিবার,এরশাদের স্বৈরশাসন ও জিয়া পরিবারই গণতন্ত্র! এমন কি শুধু রাষ্ট্র পরিচালনায় নয়, দল পরিচালনায় ও চর দখলের মত শীর্ষ স্থান দখল করে আছে সেই পরিবার গুলো। তীর্থের কাকের মত দেশের মানুষ তাকিয়ে আছে চেপে বসা নেতাদের পড়ন্ত বেলা কবে শেষ হবে? কবে যোগ্যতার ভিত্তিতে গণন্ত্রের ভিতিত্তে সংখ্যাগরিষ্ট মতের পক্ষের ব্যক্তি সরকারে বা দলের কান্ডারী হবে? যে নেতাদেরকে দেশের মানুষ অভিশপ্ত করার পরিবর্তে ভালবাস ও ভললাগার জায়গায় স্থান দেবে। শত্রু নয় বন্ধু হিসেবে সবাই সবার তরে দেশমাত্রিকার জন্য একযোগে কাজ করবে,এগিয়ে যাবে প্রিয় বাংলাদেশ। কে জানে? কখন এমন হবে? কখন আমরা বলব এই আমাদের প্রিয় স্বপ্নের প্রত্যাশিত বাংলাদেশ।

রাজনৈতিক দূবৃত্তায়নের কবলে দেশঃ
রাজনৈতিক দূবৃত্তায়ণের কথা অনেক দেশের মানুষ শোনেনি। কিন্তু আমাদের দেশ রাজনৈতিক দৃবৃত্তায়ণের কবলে পড়েছে বহু আগে।এখানকার লোকেরা খুব রাজণীতি বোঝে! রাজনৈতিক ঝড়ো হাওয়া সেই অজো পাড়া গায়ের চা দোকানের চায়ের কেতলি -কাপে ধুয়া তুলে। বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী হাই কমিশনার ডন ডব্লিও মজিনা বলেছিলেন বাংলাদেশের মানুষের ডি এন এ তে ও রাজণীতি পাওয়া যাবে! কথায় প্রচলিত আছে রাজনীতিবীদরা রাজণীতি বা দেশ চালান না সাম্রাজ্যবাদীরাই দেশ চালান। অধিকাংশ রাজনীতিবীদরা সম্রাজ্যবাদীদের দোসর হয়ে কাজ করছে।

অনৈক্যের বাংলাদেশঃ
একটি জাতির জন্য ৪৩ বছর কম সময় নয়। আমাদের অনেক চড়াই উৎড়াই পেরিয়ে দেশ যতটা না সামনে এগুচ্ছে তার চেয়ে বেশী পিছু হটছে। দেশে মিমাংশিত ইস্যু গুলোকে নিয়ে যারা পুনরায় দেশে বিভক্তির রেখা টেনে দিচ্ছে তারা মূলতঃ কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিয়ে দেশে নতুন করে বিশৃংখলা সৃষ্টি করছে। একটি দেশ যখন স্বাধীনতা লাভ করে তখন এর পক্ষ বিপক্ষ মতের মানুষ থাকবে এটি অতি স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু বছরের পর বছর যুগের পর যুগ এই অনৈক্য বিষ ফোঁড়ার মত বিষবাস্প ছড়াবে এটি একটি দেশের জন্য অত্যন্ত অনভিপ্রেত। একটি দেশ সামনে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অনৈক্য সবচেয়ে বড় অন্তরায়। আমরা আফ্রিকান শ্বেতাঙ্গ নেতা নেনসন ম্যান্ডলার জীবন থেকে শিক্ষা গ্রহন করতে পারিনি। তিনি বিরোধী পক্ষের রোসানলে পড়ে ফ্যাসিষ্ট রাজণীতির যাতাকলে ২৭ বছর কারাবরণ করেছিলেন। কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে বিরোধী শিবিরকে ক্ষমা করে দিয়ে তিনি আফ্রিকার অবিসংবাদিত নেতা হিসাবে আতœ প্রকাশ লাভ করেন। বিশ্বব্যাপী দলমত নির্বিশেষে সবাই তাকে জাতীয় ঐক্যের প্রতিক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। অথচ আমাদের দেশে মীমাংশিত একটি বিষয় নিয়ে শুধুমাত্র রাজনৈতিক পতিপক্ষকে ঘায়েল করে ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্য মৌলবাদী, রাজাকার,আলবদর,মানবতা বিরোধী অপরাধী নানা নামে বিচারের নামে অবিচার শুরু করেছে। যে বিচার ব্যাবস্থার অসচ্ছতার ব্যাপারে বিভিন্ন দেশের আইন বিশেষজ্ঞরা কথা বলেছেন। যারাই শাসক শ্রেণীর বিরুদ্ধে সত্য উচ্ছারণ করেছে সরকার তাদেরকে রাষ্ট্রদ্রোহী বানিয়েছে , আইন আদালতের ফের ফুকরে অতিষ্ট হয়ে পিষ্ট হয়েছে তাদের জীবণ। এমন বিভক্তি আর শত্রুভাবাপন্নতা মনোভাব নিয়ে আইনের অপব্যাবহার করা সম্ভব কিন্তু একটি দেশকে প্রত্যাশিত মাঞ্জিলে উন্নিত করা অসম্ভব।
ধর্মীয় স্বাধীণতাকে দমনঃ
বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ট মুসলমানের দেশ। এখানকার কৃষ্টি কালচার কখনো ধর্মের বিরোধী নয়। তারা তাদের ধর্মীয় মূল্যবোধের সাথে মিলিয়ে জীবনাচরণ পরিচালিত করে। বিশেষ করে মুসলমানরা এক্ষেত্রে অনমনীয়। আমাদের দেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্ধ কারো ফরামায়েশ দারীর আনুগত্য করতে গিয়ে দেশের সংবিধানে ধর্মনিরেপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে উল্লেখ করলেও মূলতঃ এখানকার মানুষের কর্ম ও বিশ্বাস থেকে ইসলামকে বিদায় করতে পারেনি। বার বার প্রমাণিত হয়েছে যেখানে যত বাধা এসেছে এর অগ্রযাত্রা আরো বেশী শানিত হয়েছে। এখানে যার যার ধর্ম সে ধর্মের অনুসারীরা পালন করবে এটাই স্বাভাবিক,কিন্তু ধমীর্য় আচার অনুষ্টান পালন করতে গেলে এখানে বৈষম্য পরিলক্ষিত হয় প্রতিটি পরতে পরতে। মাঝে মধ্যে সরকারের আচরণ পর্যবেক্ষণ করলে মনে হয় এখানে সংখ্যালঘুরাই সংখ্যা গরিষ্ট। কারণ তাদের আচার অনুষ্টানে সরকারী বা বেসরকারী কোন বাধা বিপত্তি নেই। আর দেশের প্রধাণ সঞ্চালকরা মুসলমান নাম ধারী হলেও তারা স্ব-ধর্মের সাথে অমুসলিম সুলভ আচরণ করতেই স্বাচ্ছন্দ বোধ করছে। ৫ মে শাপলা চত্তরে বাংলাদেশে যে গণহত্যা ঘটেছে তা কারবালার পান্তর ও স্পেনের গ্রানাডা ট্রাজেডিকে হার মানিয়েছে বহু আগে।

দারিদ্রতার কবলে বাংলাদেশঃ
বাংলাদেশের প্রধাণতম সমস্যা হল দারিদ্রতা। দারিদ্রতা দূরি করণের জন্য প্রয়োজন সুশিক্ষা ও কর্মসংস্থাপন। স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরেও আমরা উন্নয়নশীল দেশের কাতারে। না খেয়ে দারিদ্রতার কষাঘাতে পিষ্ট হয় মানুষ মরার খবর এখনো খবরে প্রকাশিত হয়। শাসকদের ভাগ্যের চাকা ঘোরে কিন্তু কোন পরিবর্তন হয়না অভাগা জনগোষ্টীর । নেতাদের চাকচিক্যতায় আর বৃত্ত-বৈভয় দেখলে বহিঃবিশ্বের কেউ মনে করবেনা এখানকার মানুষেরা দরিদ্রসীমার মাঝে বাস করে। সাবেক অর্থমন্ত্রী মরহুম সাইফুর রহমান ৮ম জাতীয় সংসদ অধিবেশনে বলেছিলেন “বিদেশে গিয়ে আমরা যখন দেশের নানা সমস্যার কথা বলে সাহায্য চাই তখন আমাদেরকে বিদেশীরা তচ্ছু-তাচ্ছিল্য করে বলে তোমাদের দেশের লোকেরা খেতে পায়না অথচ তোমরা পাজারো গাড়ি হাকাও! তোমাদের লজ্জা থাকা উচিৎ”। আসলেই মন্তব্যটি আমাদের জন্য লজ্জাজনক হলেও নিজেদের বোধদয় হওয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের কোন সরকারই কর্মমূখী শিক্ষা ও দারিদ্রতা বিমোচনে বাস্তবমুখী টেকসই কর্মসূচী গ্রহন করতে না পারায় সমসাময়িককালে স্বাধীণতা অর্জনকারী দেশ মালেশিয়া ও সিঙ্গাপুরের মত কোন চমক লাগানো পরিবর্তন আনতে পারেনি। উল্লেখিত দেশগুলোর জনগণ যেখানে দেশের সম্পদ সেখানে আমাদের দেশের বহুল জনসংখ্যাকে মনে করা হয় বোঝা।

অর্থনৈতিক বৈষম্যের যাতাকলে পৃষ্ট সমগ্র জাতিঃ
বাংলাদেশ পাকিস্তানের বৈষম্যের অক্টোপাস থেকে মুক্ত হয়ে একটি স্ব-নির্ভর অর্থনৈতিক ভিত্তির উপর দন্ডয়মান হবে এটিই ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের অর্থনীতির চাবিকাটি অন্যদের হাতে। মুক্ত বানিজ্যের নামে গার্মেন্টস সেক্টরে চলছে ভয়াবহ অরাজকতা । যেখানে আমরা আমাদের দেশীয় উৎপাদনে স্বয়ং সম্পন্ন সেখানে পার্শ্ব দেশের আমদানী করা নিন্ম মানের পণ্যে বাজার সয়লাব । নিরেপেক্ষ দৃষ্টিতে পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে সরকারী ভাবে উল্লেখযোগ্য কোন কর্মসংস্থানের ব্যাবস্থা করতে পারেনি। কলকারখানা পাকিস্তান আমলে যা হয়েছিল তাও এখন বন্ধ প্রায়। দেশের যা কিছু অগ্রগতি হয়েছে প্রাইভেট সেক্টরের কারণে। বৈদেশিক মুদ্রার আয় আমাদের রাজস্ব আয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যারা কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে বিদেশ পাড়ি জমায় তারা অধিকাংশ অশিক্ষত -স্বল্প শিক্ষিত ও অদক্ষ শ্রমিক। পররাষ্ট্রনীতির অদক্ষতার কারণে আমাদের দেশের বাইরের কাজের পরিধিও কমে যাচ্ছে। এর উন্নয়নে সরকারের বিশেষ কোন পরিক্লপনা আছে বলে মনে হয়না।

দুর্ণিতির অতল গহীনে বাংলাদেশঃ
একটি দেশ এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অর্থনীতি একটি বড় চালিকা শক্তি। সে অর্থব্যবস্থার ভিত যদি সৃদৃঢ় হতে না থাকে তাহলে রাষ্ট্রের পক্ষে যে কোন দুর্যোগ মোকাবেলা করা দুরহ ব্যাপার। তাই প্রয়োজন স্থিতিশীল অর্থব্যাবস্থা। আর যে দেশের প্রতিটি সেক্টর দুর্ণিতির বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে প্রতিবছর শীর্ষস্থান দখল করে নেয় সেদেশে স্থিতিশীল অর্থব্যাবস্থার প্রত্যাশা আকাশ কুশুম কল্পনা ছাড়া কি হতে পারে? দেশ এখন তলা বিহীন পরিণিত হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের অফিস থেকে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর পর্যন্ত ঘোষ ছাড়া কোন কাজ হয়না। স্বয়ং আওয়ামী অর্থমন্ত্রী আবুল মাল-আব্দুল মুহিত বলেছেন-“ ঘোষ বৈধ!” রাষ্ট্রের অতি জনগুরুত¦পূর্ণ প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার আগেই দুর্ণিতির কবলে পড়ে সেই প্রকল্প বন্ধ হয়ে যায়, আবার সে অভিযুক্ত ব্যাক্তিরাই রাষ্ট্রীয় সংস্থা কর্তৃক দেশ প্রেমিক(!) বলে সার্টিফিকেট পায় এর চেয়ে লজ্জার আর কি হতে পারে? এমন ব্যাধী থেকে মুক্ত হওয়া একটি রাষ্ট্রের জন্য সাংঘাতিক চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সর্বস্তরে সৎ যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগের পাশাপাশি সময়োপযোগী পরিকল্পনা গ্রহনের পরিবর্তে দলীয় বিবেচনায় ঘুষের মাধ্যমে নিয়োগ প্রাপ্তরা দেশকে এর চাইতে ভাল কি উপহার দিতে পারবে? সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা এই,টি ইমাম ছাত্রলীগের এক সমাবেশে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে করে বলেন -“তোমরা বি সি এস পরীক্ষায় লিখিততে ভাল করো।বাকীটা আমরা দেখব”। রাষ্ট্রের কর্তাব্যাক্তির এমন বক্তব্য মেধাবী জনগোষ্টিকে মারাত্নক ভাবে মর্মাহত করেছে। ব্যক্তির চেয়ে দল বড় দলের চেয়ে দেশ বড় প্রবাদ প্রবচনে সীমাবদ্ধ রাখতেই আমাদের নেতারা স্বাচ্ছন্যবোধ করেন। নিজের আখের গোছাতেই সবাই ব্যস্ত। তাই দুর্ণিতির ঘোড়া ক্রমেই আমাদেরকে দাবিয়ে বেড়াচ্ছে।

দূর্বল বিচার ব্যবস্থায় বিচারের নামে অবিচার চালুঃ দেশের শাসকরা যতই জবাব দিহীতার বাহিরে থাকার চেষ্টা করুক না কেন আইনের কাঠগড়ায় সবাইকে দাড়াতে হবে। এটাই আইনের আমোঘ নীতি। আমাদের বিচার ব্যাবস্থার বিচারকদের প্রতি সাধারণ মানুষের যে আস্থা ও বিশ্বাস অর্জিত হয়েছিল তা এখন শূণ্যের কোটায়। কারণ শাসকদের ইশারায় এখন বিচার চলে, বিচারকদের হাত-পা- চোখ কার্যত বাধা। বিচারকরা আইনের বিবেচনায় বিচারকার্য পরিচালনা বাদ দিয়ে দলীয় বিবেচনায় বিচার কার্য শুরু করেছেন। একটি দেশের নিরাপরাধ মানুষের সর্বশেষ নিরাপদ জায়গা আদালত যদি অনিরাপদ হয়ে যায় তার চেয়ে দূভাগ্যের আর কি হতে পারে? যখন স্বয়ং আইন দলীয় বিবেচনা প্রাধান্য দিয়ে নিজেই অসহায় ভুক্তভোগী বিচার প্রার্থীর বুকে গুলি চালায় তখন দেশে আচার বিচারের কি বেহাল অবস্থা তা বুঝতে খুব জ্ঞানের প্রয়োজন হয়না। দেশে এখন ১৯৭১ ইস্যুকে সামনে রেখে একটি বিশেষ দলকে রাজনৈতিক বিবেচনায় নির্মূল করার জন্য আন্তর্জাতিক যুদ্ধপরাধ ট্রাইবুনালের নামে আদালত গঠন করা হয়েছে। গঠিত এই আদালতের ব্যাপারে দেশে ও দেশের বাহিরে সর্বমহলে বিচার ব্যাবস্থার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও অবৈধ সরকার যুদ্ধাপরাধে (!) অভিযুক্ত আসামীদের হত্যায় মরিয়া হয়ে উঠেছে।

৪৩ বছর পর ও অবৈধ সরকারের দেশ পরিচালনাঃ
একটি দেশের বয়স যত বড়তে থাকে তার ঐক্যে, সংহতি ,গণতন্ত্র,বিচার ব্যাবস্থা, রাষ্ট্রপরিচালনা সুদৃঢ় হতে থাকে দেশের প্রজাতন্ত্রিক পদ্ধতির উপর। আমাদের দেশটি গণপ্রজাতান্ত্রিক সরকার নামে পরিচিত। নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে গণতন্ত্রের পথে দেশ হাটা শুরু করলেও শাসক গোষ্টিরা ক্ষমতা কুক্ষিগত করার প্রয়োজনে গণতন্ত্র-স্বৈরতন্ত্র এক সাথে সব গুলিয়ে ফেলে। এখন ও আমাদের বলতে হয় দেশে অবৈধ ও অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতা পরিচালনা করছে। সরকারের মদদ পুষ্ট প্রশাসন যন্ত্র সরকারের নির্দেশে নির্বিচারের তার দেশের নাগরিকের উপর গুলি চালচ্ছে। এখানে জনমত উপেক্ষা করে আইনকে নিজেদের করায়ত্তে এনে জনগণের উপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। দেশে কেয়ারটেকার ব্যাবস্থা প্রতিষ্টার জন্য যে দল আন্দোলন করেছিল আবার ক্ষমতাকে চিরায়ত করার জন্য সেদলই সে ব্যাবস্থা বাতিল করে দিয়ে নিজেদের গৃবে নির্বাচন আয়োজন করে ৫% ভোটকে ৭৫% ভোট বানিয়ে নেহায়াত জনগণের সতঃস্ফুর্ত অংশ গ্রহন (!), জনগণের রায় প্রতিফলিত হয়েছে বা জনগণ মেন্ডেন দিয়েছে বলা প্রচার করা এর চাইতে নিজের বিবেক ও জনগণের সাথে সম্মুখ যুদ্ধ ঘোষনা ছাড়া কি বলা যেতে পারে?

নৈতিকতা বিবর্জিত শিক্ষাব্যবস্থার ও সৎ ও দক্ষ দেশ প্রেমিক নেতৃত্বের অভাবঃ
উপরের বর্ণিত যত অপ্রাপ্তি সকল অপ্রাপ্তির মূল গলদ নেতৃত্বের । নেতৃত্ব যদি সৎ ,যোগ্য ও দেশ প্রেমিক না হয় তাহলে সে দেশে নানা মুখী অরাজকতা ও অশান্তি লেগেই থাকে। কাঙ্খিত নেতৃত্ব এমনি এমনি তৈরী হয়না ,এর জন্য প্রয়োজন নৈতিক শিক্ষা। আর সে শিক্ষা পরিধি মূল গোড়া আমাদের শিক্ষানিকেতন,সমাজ ও পরিবার। যে কোন উৎপাদন কেন্দ্রের মুল ইঞ্জিনে যদি গরবর থাকে সেখান থেকে টেকসই সামগ্রী উৎপাদন সম্ভব নয়। এখনো দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় বৃটিশ বেনিয়াদের স্বার্থ হাসিল করার প্রয়াসে একদল কেরানী আর ভোগবাদী মানুষ সৃষ্টি করার বেকল ইঞ্জিন দিয়ে দেশের শিক্ষাব্যস্থা চলছে। রক্তে মাংসে নামে মুসলমান হলেও আমাদের রন্দ্রে রন্দ্রে জাহেলিয়াতের বিষ বাষ্প অনুপ্রবেশ করেছে সাংঘাতিক ভাবে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় নৈতিক শিক্ষা নাম মাত্র থাকলেও এখানে পুঁজিবাদ ও ধর্মনিরেপেক্ষতার শিক্ষা দেয়া হয়। অথচ মহান সৃষ্টি কর্তা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পৃথিবীর সর্বশেষ্ট মানব হয়রত মুহাম্মদ (সঃ) প্রথম যে শিক্ষা দিয়েছিলেন তা হলো “পড় তোমার প্রভুর নামে যিনি তোমাকে শিক্ষা দিয়েছেন।” আল-কুরআন। আমাদের শিক্ষাব্যাবস্থাতে আগামী প্রজন্ম কতিথ আধুনিক শিক্ষা লাভ করতে গিয়ে আল্লাহদ্রোহী হয়ে পড়ছে। সমাজ ও পরিবারে চলছে বুদ্ধি সংকট। এখানে নিজেদেরকে আল্লাহর সুন্তুষ্টির উপযোগী কত বেশী করা যায় তার চাইতে দুনিয়ার বাজারে যে কোন মূল্যে নিজের পতিপত্তি কিভাবে বাড়ানো যায় তার উলঙ্গ প্রতিযোগীতা চলছে। এই প্রতিযোগীতায় সন্তানের বাহ্যিক অর্জনের ( শিক্ষাগত যোগ্যতা, ব্যবসা-বানিজ্য, অর্থ পতিপত্তি) জন্য যত আয়োজন, সন্তানের আভ্যন্তরীণ সুন্দর্য্য ( নৈতিক চরিত্র,মানবিক মূল্যবোধ, পরকালীন সচেতনতা) বৃদ্ধির ব্যাপারে সমাজ বা পরিবারে কোন তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়না। যারা একটু আধটু চেষ্টা করে সমাজের এমন নাজুক পরিস্থিতিতে তাদের প্রচেষ্টায় ও ভাটা পড়েছে। দুনিয়ার সাময়িক আয়োজনের পেছনেই ছুটতে ছুটতে তারা হাঁফিয়ে উঠেছে। মানব জীবনের চুড়ান্ত পরিণিতির বিষয়ে অবিশ্বাস বা অজ্ঞতার কারণেই বিশ্বমানবতার এমন বেহাল দশা। তাই এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষাব্যবস্থায় ইসলামী করণ ব্যতিত প্রত্যাশিত নেতৃত্ব ও সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্টা করা সম্ভব নয়। জাতির এমন বেহাল পরিস্থিতিতে কেউ সাহসিকতার সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য নেতৃত্বে আসা জরুরী।

দেশের এমন করুণ পরিস্থিতিতে ভাল মানুষের মন কাঁদে। তারা দেখেও না দেখার ভান করে,এড়িয়ে চলে। স্বদেশের প্রতিটি অপ্রত্যাশিত দুর্যোগ তাদের রঙ্গিন স্বপ্ন গুলো দুমড়ে মুচড়ে শেষ করে দিচ্ছে। যারা ভাল, যাদেরকে তাদের পরিবার প্রতিবেশী সমাজ ভাল বলে আখ্যায়িত করে । তারা যদি প্রত্যাশিত ভুমিকায় অবতীর্ণ হয়ে সমাজের কোন পরিবর্তন করতে না পারে তাহলে সে ভাল দিয়ে কি হবে? স্বপ্নচারীর মত স্বপ্ন দেখা নেহায়াত বোকামী যদিনা সে স্বপ্নকে বাস্তবে রুপায়িত করার কোন প্রচেষ্টা অব্যাহত না থাকে। ৪৩ বছরের দুর্যোগের ঘনঘটা আর নানা অপ্রাপ্তিতে আমরা বেদনাহত হই,মুষড়ে পড়ি। এরপর ও অজানা এক শক্তিতে বুক বেঁধে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাহস আমাদের তাড়িত করে। আমাদের ১৬ কোটি মানুষের যদি জাগাতে পারি,ঘুনে ধরা সমাজের সকল অনাচার গুলো সুধরে নিতে পারি, নৈতিক শিক্ষার বলে বলিয়ান করতে পারি তাহলে আমারাই হব আমাদের তুলনা। সেই বিশ্বাসে আমাদের পথ চলা হোক দুর্বার, দুর্দমনীয়,অপ্রতিরোধ্য।আমীন।

সূত্রঃ abdulzabbar.info

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More