ফেসবুক নিয়ে সংসারে বিরোধ?

0

8d2fa2546a7c04e917db71d32ac0d16d-5পারিবারিক আদালতে একজন স্ত্রী বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেছেন। তিনি আদালতে তালাকের ডিক্রি চেয়েছেন এ কারণে যে, তাঁর স্বামী ফেসবুকে অন্য নারীদের সঙ্গে চ্যাট করেন এবং অন্য নারীদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক রয়েছে। আদালতের সমন পেয়ে তাঁর স্বামী লিখিত জবাবে উল্লেখ করেন, তাঁর স্ত্রী অযথাই তাঁকে সন্দেহ করছেন। তিনি দাবি করেন, ফেসবুকে তাঁর কয়েকজন বান্ধবী রয়েছেন বটে, কিন্তু তাঁরা ফেসবুক বন্ধু ছাড়া আর কেউ নন। তাই তিনি এই বিচ্ছেদ চান না। আদালতে মামলা মামলার গতিতে চলতে লাগল। নিয়ম অনুযায়ী পারিবারিক আদালতে বিচার শুরু হওয়ার আগে বিচারকের দুই পক্ষকে নিয়ে তাঁর খাসকামরায় আপস-মীমাংসা করার রীতি রয়েছে। আদালতে এই স্বামী-স্ত্রী দুজনেই এলেন। বিচারক তাঁদের সঙ্গে কথা বললেন। কার কী অভিযোগ শুনলেন। স্ত্রীর দাবি, তাঁর স্বামীর চরিত্র ফেসবুকের কারণে নষ্ট হয়ে গেছে। এখন আর এই স্বামীর ঘর করবেন না। স্বামী তো এ কথা মানতে নারাজ। অবশেষে অনেক আলাপ-আলোচনার পর স্বামী প্রস্তাব দিলেন কী করলে এই বিচ্ছেদের আবেদন তাঁর স্ত্রী প্রত্যাহার করবেন। স্ত্রী দাবি করলেন, ফেসবুকের পাসওয়ার্ড তাঁকে দিতে হবে। স্বামী রাজি হলেন। বিচারক তাঁদের তিন দিন সময় দিলেন এবং তিন দিন পর তাঁদের মতামত জানাতে বললেন। তাঁরা দুজনেই তিন দিন পর আদালতে এলেন এবং বললেন যে ফেসবুক নিয়ে তাঁদের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝি হয়েছিল। স্ত্রী তাঁর বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন প্রত্যাহার করতে চান। আদালত প্রত্যাহারের অনুমতি দিলেন।
আরেক দম্পতির প্রায় চার বছর হলো বিয়ের। দুজনেই উচ্চবিত্ত পরিবারের। তাঁদের এক বছরের একটি মেয়েও হয়েছে এর মধ্যে। বিয়ের শুরু থেকেই বিভিন্ন তুচ্ছ বিষয় নিয়ে তাঁদের মধ্যে ঝগড়া লেগেই থাকে। কিন্তু ঝগড়া পর্যন্ত বিষয়টি আর সীমাবদ্ধ থাকে না। কিছু হলেই ফেসবুকে একজন আরেকজনকে নিয়ে বাজে মন্তব্য পোস্ট করে থাকেন। বিশেষ করে স্বামী কিছু হলেই স্ত্রীর বিরুদ্ধে নানা অশালীন মন্তব্য পোস্ট করেন। আবার ঝগড়াঝাঁটি মিটে গেলে এই পোস্ট কখনো কখনো মুছেও দেন। সম্প্রতি আবার তাঁদের মধ্যে বড় ধরনের ঝগড়া হয় এবং স্ত্রী ও তাঁর মাকে নিয়ে মানহানিকর ও অশালীন মন্তব্য পোস্ট করেন দেন স্বামী। সঙ্গে কিছু অশ্লীল ছবিও। এ নিয়ে স্ত্রী ততটা মুখ না খুললেও তাঁর মা ছেলেটির বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা ঠুকে দেন থানায়। এবার এ নিয়ে ছেলেটি পড়ে গেল পুলিশি ঝামেলায়। তাঁর স্ত্রীও বেঁকে বসলেন। এদিকে ছেলেটি গ্রেপ্তার হলেন। পরিশেষে স্ত্রী স্বামীকে তালাক দেন।
এ কথা বলার আর খুব বেশি প্রয়োজন নেই যে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ফেসবুক কীভাবে জড়িয়ে গেছে। কিন্তু এই ফেসবুক যখন দাম্পত্য জীবনে অশান্তি নিয়ে আসে এবং এ নিয়ে মামলা-মোকদ্দমায় জড়িয়ে পড়া হয়, তখন ফেসবুক যেন একটি অভিশাপ হয়ে ওঠে। ফেসবুকের কারণেই হোক আর যেকোনো কারণেই হোক, আইনের চোখে অপরাধ অপরাধই। আর সংসারে আইনি ঝামেলা ঢুকে গেলে এ থেকে নিস্তার পাওয়া অতটা সহজ নয়।

কী করণীয়
ফেসবুক নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব বা বিরোধ হলে প্রথমেই আইনের আশ্রয় নেওয়ার চিন্তা না করে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করা উচিত। সামান্য কোনো সন্দেহ বা ঝগড়া নিয়ে কিছু পোস্ট করা হলেও আইনের চোখে অপরাধ হলে এ নিয়ে মামলা-মোকদ্দমা করার অধিকার অপরজনের রয়েছে। তাই সংসারের ঝগড়া ফেসবুকে না এনে এবং প্রতিহিংসাপরায়ণ না হয়ে সুষ্ঠুভাবে সমাধানের দিকে যাওয়া উচিত। অনেক সময় দেখা যায়, বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে গেলেও আগের স্বামী বা স্ত্রী ছবি পোস্ট করেন এবং অন্যজনকে বিরক্ত করার ঘটনা ঘটে। এটা কিন্তু মারাত্মক অপরাধ। আবার ইনবক্সে আপত্তিকর ছবি বা ভিডিও দেখিয়ে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখান। এগুলো সইবার অপরাধের শামিল এবং এই অপরাধের শাস্তি সর্বনিম্ন সাত বছর এবং এটা জামিন অযোগ্য অপরাধ।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More