[ads2]দি বার্তা, বেলজিয়াম: বাংলাদেশে সাম্প্রতিক গুপ্ত হত্যা থেকে নারী পুরুষ, যুবক বৃদ্ধ, মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান কেউই বাদ পড়ছেন না। জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে চট্টগ্রামে একজন পুলিশ সুপারের স্ত্রী, নাটোরে একজন খ্রিস্টান ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং ঝিনাইদহের নলডাঙ্গা এলাকায় ৭২ বছরের একজন বৃদ্ধ হিন্দু পুরোহিতকে দুর্বৃত্তরা হত্যা করে। এছাড়া র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহতের সংখ্যাও প্রতি মাসে ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে লন্ডনে বিবিসি রেডিও- এর সাথে এক সাক্ষাৎকারে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের রাজনৈতিক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির কথা বলেছেন। বিবিসির প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমন করার জন্য দরকার স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ। রাজনীতিতে স্থিতি ফিরিয়ে আনতে হলে একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠা করা জরুরি।
৯ জুন বিবিসি রেডিও ফোর এর জনপ্রিয় ‘বিবিসি টুডে’ প্রোগ্রামে সারাহ মন্টাগ এবং বিবিসির পলিটিকাল এডিটর নিক রবিনসনের নেয়া লাইভ সাক্ষাৎকারটি নিচে প্রশ্নোত্তর আকারে তুলে ধরা হলো।
বিবিসি: বাংলাদেশ সরকার অভিযোগ করে আসছে ৭০ বছর বয়সী হিন্দু পুরোহিত হত্যার সঙ্গে বিএনপি জড়িত। যদিও আইএস দাবী করেছে তারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এই বিষয়ে কথা বলতে আমাদের সঙ্গে রয়েছেন বিএনপির মুখপাত্র মিঃ হুমায়ূন কবির। গুড মর্নিং টু ইউ। সরকারের এই অভিযোগকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
হুমায়ূন কবির: গুড মর্নিং। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক গুপ্তহত্যা ও জঙ্গীবাদ নিয়ে বর্তমান ভোটারবিহীন সরকারের দায়িত্বশীলদের বক্তব্য পরস্পরবিরোধী, অসঙ্গতিপূর্ণ ও বিভ্রান্তিমূলক। শেখ হাসিনার উপদেষ্টা ও তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বাংলাদেশে ইসলামিক টেরোরিজম বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে ২০০৮ সালে বিদেশী পত্রিকায় নিবন্ধ লিখেছেন। গত এপ্রিলে তথ্যমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশে হাজার হাজার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সন্ত্রাসী আইএস রয়েছে। আবার কয়েক সপ্তাহ পূর্বে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, বাংলাদেশে কোনো আইএস নেই এবং সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে ধর্মীয় চরমপন্থার দাবীও সঠিক নয়। গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাবী করেছেন যে, বাংলাদেশে গুপ্তহত্যা ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের পেছনে ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের হাত রয়েছে।[ads1]
বিবিসি: তাহলে আপনি বলছেন সরকারের বক্তব্যের মধ্যে পরস্পরবিরোধী কথাবার্তা রয়েছে? তারা যে কাউকেই দোষী সাব্যস্ত করছে…। যাক, আপনাদের বিরুদ্ধে সরকারের আরেকটি অভিযোগ আপনারা সরকার গঠন করেছিলেন ধর্মভিত্তিক দল নিয়ে। আপনি কি মনে করেন এ জন্যই সরকার আপনাদের বেশি সমালোচনা বেশি করছে?
হুমায়ুন কবির: সরকার বিরোধী আন্দোলনের লক্ষ্যে কোয়ালিশন গঠন করা হয়েছিলো সোসাইটাল এলায়েন্স হিসেবে, ধর্মীয় কারণে নয়। শেখ হাসিনা সবসময় ধর্ম যোগ করে রাজনীতি করেন। আওয়ামী লীগের নিজেদের বক্তব্যতেই রয়েছে অসঙ্গতি। তাদের বক্তব্য পরস্পরবিরোধী, বিভ্রান্তিমূলকও বটে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান স্বৈরতান্ত্রিক ও একদলীয় শাসন ব্যবস্থায় বাংলাদেশে রাজনৈতিক শুন্যতার সৃষ্টি করেছে যার কারণে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে আমি মনে করি।
বিবিসি: আচ্ছা এবার বলুন, আপনারা জেনারেল ইলেকশন কেন বয়কট করেছিলেন?
হুমায়ুন কবির: বাংলাদেশে কোন প্রতিষ্ঠানই নিরপেক্ষ ও মুক্তভাবে কাজ করতে পারছে না। বাংলাদেশের সবগুলো প্রতিষ্ঠানকে রাজনীতিকরণ করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন, পুলিশ, র্যাব, বিচার বিভাগ সবাই শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের অধীনে। একজনও যোগ্য প্রার্থী নির্বাচনে দাঁড়ায়নি। ১৫৪টি আসন বিনা ভোটে পাশ এবং বাকী আসনগুলোতে ৫ শতাংশের মত ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। জনগণ সে নির্বাচন মেনে নেয়নি এবং তারা ভোট দিতেও আসেনি। তারা জানে এ নির্বাচন স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নয়। তাছাড়া দেখুন সাম্প্রতিক লোকাল ইলেকশনের অবস্থা। এ থেকেও বুঝা যায় এ সরকারের অধীনে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়।
বিবিসি: বাংলাদেশে ক্রমাগত ধর্মীয় সংখ্যালঘু লোকদেরকে হত্যা বন্ধ করতে কী করা দরকার বলে আপনি মনে করেন?
হুমায়ুন কবির: আমাদেরকে সমস্যার মূলে গিয়ে এর সমাধান বের করতে হবে। বাংলাদেশে বর্তমান ক্ষমতাসীনরা যেহেতু জনগনের ভোটে নির্বাচিত নন, তাই জনগনের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতাও নেই। তাই বাংলাদেশে বর্তমানে একটি অকার্যকর সরকার ব্যবস্থা রয়েছে যাদের প্রতি জনগনের ম্যান্ডেট নেই। চরমপন্থী সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী এবং স্বৈরাচারী সরকারের মধ্যে একটা মিল রয়েছে। সন্ত্রাসীগোষ্ঠী যেমন যে কোনো উপায়ে প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে তাদের অবস্থান প্রকাশ করতে চায় ঠিক তেমনি স্বৈরাচারী এই সরকার শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে অবৈধভাবে হলেও ক্ষমতা ধরে রাখতে চায়।[ads2]
সূত্রঃ বিবিসি