বাংলাদেশে চলমান সংকট নিরসনের জন্য জাতিসংঘ চাইছে যত দ্রুত তার সমাধান হোক। সেটা যত কম সময়ে হোক। কিন্তু তা না হওয়ায় সংকট সমাধানের জন্য নানামুখী উদ্যোগ নিতে চাইছে। এই জন্য প্রয়োজনীয় যে কোন ধরনের পদক্ষেপ নিবে। প্রয়োজনে বিষয়টিতে সিদ্ধান্ত নিতে এটা সিকিউরিটি কাউন্সিলের বৈঠকেও তুলবে। সেখানে সিকিউরিটি কাউন্সিলের সদস্যরা একমত হতে পারেলে যত দ্রুত সম্ভব সেটা নিবে।
এই ব্যাপারে বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানায়, জাতিসংঘের কোন উদ্যোগকে সরকার স্বাগত জানাবে না। বাংলাদেশের সংকট সমাধানের জন্য বান কি মুনের দ্বারা নিযুক্ত প্রতিনিধি অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোকে আমন্ত্রণও জানাবেন না। তিনি আসতে চাইলেও তাকে আসার জন্য অনুমতি দিবেন না। কারণ সরকারের কেউ তার সঙ্গে কোন ধরনের বৈঠকে বসবেন না। সরকার জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক শক্তি ও বিএনপি জোট কারো সঙ্গে সংকট সমাধান নিয়ে বসতে রাজি নয়। তারা বসতে চাইলে সরকার যে সঠিক পথে আছে, সাংবিধানিকভাবে নির্বাচন করেছে, এখন নতুন করে নির্বাচন করবে না, জনগণও সেটা চায় না। বিএনপির আন্দোলনের সঙ্গে জনগণের সম্পৃক্ততা নেই সেটাও বোঝাচ্ছে। সেই সঙ্গে এটাও বলছে, বিএনপি সন্ত্রাসী ও জঙ্গী সংগঠন। তাদের সঙ্গে সরকার বসতে পারে না। সমঝোতাও করতে পারে না। ইতোমধ্যে সরকারের তরফ থেকে এই বার্তা জাতিসংঘের কাছেও পাঠানো হয়েছে।
এদিকে বিএনপির সূত্র জানায়, বিএনপি জাতিসংঘের সহযোগিতায় সংকটের নিরসন চাইছে। এই জন্য যোগাযোগও করছে। জাতিসংঘের যে কোন উদ্যোগকে বিএনপি স্বাগত জানাবে।
সরকারের নীতি নির্ধারকরা মনে করছেন, কোন ভাবেই তারা কারো সঙ্গে বিএনপির দাবি নিয়ে সংলাপে বসবে না। এর কারণ সরকার সংলাপে বসলেই সরকারের দুর্বলতা প্রকাশ পাবে। আর সেটা প্রকাশ হওয়ার কারণেই সরকার এখন কোন ঝুঁিক নিতে চাইছে না। সরকারের অবস্থান বান কি মুনকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চিঠি দিয়েও স্পষ্ট করেছেন। কোন ধরনের আলোচনায় বসছেন না। কেন বসবেন না এরও ব্যাখ্যা করেছেন। বিএনপিকে এখন সরকারের তরফ থেকে সন্ত্রাসী ও জঙ্গী সংগঠন হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করারও চেষ্টা চলছে। এই জন্য বার বার বলা হচ্ছে সরকার সন্ত্রাসী ও জঙ্গীদের সঙ্গে বৈঠকে বসবে না।
সূত্র জানায়, সেটা বেশ জোরালো ভাবেই প্রতিষ্ঠিত করার জোর চেষ্টা চলছে। এই ব্যাপারে বিভিন্ন ভাবে জাতিসংঘকে বোঝানোর চেষ্টা চলছে। এছাড়াও সরকার যে সাংবিধানিক নিয়ম ও ধারাবাহিকতা রক্ষা করেই নির্বাচন করেছে। সেটাও বলছে।
জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. আব্দুল মোমেন বলেছেন, জাতিসংঘের বিধান অনুযায়ী এর সদস্য রাষ্ট্রগুলো কোন সন্ত্রাসী ও জঙ্গী গোষ্ঠীকে প্রশ্রয় দিবে না। তাদের সঙ্গে কোন সম্পর্ক রাখবে না। তাদেরকে প্রতিহত করবে। সেই জন্য বাংলাদেশ সরকারও কাজ করছে। এই সিদ্ধান্ত যখন নেওয়া হয় তখন বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি হিসাবে প্রতিমন্ত্রীও জাতিসংঘের ওই অধিবেশনে অংশ নেন। তিনি বলেন, বিএনপি ও জামায়াত এখন দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করে যে কাজ করছে সেটা কি আসলে রাজনৈতিক কর্মসূচি। তারা দিনের পর দিন হরতাল, অবরোধ করছে। পেট্রোল বোমা দিয়ে মানুষ মারছে। আগুনে পুড়ে যাচ্ছে মানুষ। এইভাবেতো চলতে পারে না। তারা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করছে। জঙ্গীবাদকে ম“ দিচ্ছে। এই কারণে আমরা মনে করি বিএনপি সরকারের উপর এই ব্যাপারে যে দায় চাপাতে চাইছে, সরকারের মদদে হচ্ছে এটা কোন ভাবেই ঠিক না। আমরা জাতিসংঘকে সেটাই বোঝানোর চেষ্টা করছি। এদিকে বেগম খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ট একটি সূত্র জানায়, যিনি জাতিসংঘের সঙ্গেও যোগাযোগ রক্ষা করছেন যুক্তরাষ্ট্রে বসে। তিনি বলেন, সরকার বিএনপি ও জামায়াতকে যেভাবে সন্ত্রাসী ও জঙ্গীবাদী হিসাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছে সেটা জাতিসংঘ বিশ্বাস করছে না। সরকার যে সব অভিযোগ করছে, এর প্রেক্ষিতে আমরাও জবাব দিচ্ছি। এই কারণে জাতিসংঘ নিজেও তাদের সোর্সে খোঁজ খবর রাখছে। এরপর তারা বাংলাদেশে উদ্যোগ নিচ্ছে।
বিএনপির একটি সূত্র জানায়, বিএনপি এখনও সরকারকে সময় দিচ্ছে। সরকার এই সময়ের মধ্যে সমস্যার সমাধান না করলে বিএনপি আর সময় দিবে না। সেই জন্য জাতিসংঘের সরাসরি হস্তক্ষেপ চাইবে। সেটা করার আগে তারা সংকট সমাধানের জন্য সরকারকে সংলাপ করানোর জন্য সহযোগিতা চেয়ে আসছে। বিএনপি চেয়ারপারসন মনে করছেন সংকটের সমাধান জাতিসংঘের মাধ্যমেই হবে। না হলে হবে না কারণ সরকার কোন উদ্যোগ নিবে না। ২০১৯ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবে। এই ব্যাপারে বিএনপি চেয়ারপারসনের ঘনিষ্ট একটি সূত্র জানায়, মার্চ মাস হয়তো সরকারকে সময় দেওয়া হবে। এরপরও সরকার সমঝোতা না করলে আমরা অসহযোগে যাবো। তখনই সরকার সমঝোতা না করলে এরপর আর সময় দেওয়া হবে না। এরপর দেশের সার্বিক অবস্থা তুলে ধরে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ চাওয়া হবে। সেটা হলে জুনের ১৫ তারিখের আগেই জাতিসংঘ বাংলাদেশের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করার মতো ব্যবস্থা নিবে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের একজন উপদেষ্টা বলেন, সংকট সমাধানের জন্য আমরা কোন উপায় দেখছি না। সরকার কোন কিছুই মানতে চাইছে না। এই জন্য আমরা মনে করি জাতিসংঘ এই ধরনের সংকট নিরসন করে সবার অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। সরকার যতই বলুক না কেন জাতিসংঘ হস্তক্ষেপ করতে পারে না। কিন্তু জাতিসংঘ যখন হস্তক্ষেপ করার সিদ্ধান্ত নিবে তখন কোন কিছুই তার জন্য কোন সমস্যাই হবে না। সিকিউরিটি কাউন্সিলেরও অনুমতি নিতে বেগ পেতে হবে না। আমরা জাতিসংঘের উপর আর জনগণের উপর আস্থা রাখতে চাই। এখন সরকারের উপর কূটনীতিকদের উপর চাপ বাড়ছে। জাতিসংঘেরও চাপ বাড়ছে। এই অবস্থায় সরকার স্পষ্ট করে দিয়েছে বিএনপির সঙ্গে কোন সংলাপ না করার। এখন এর বিকল্প ব্যবস্থা হিসাবে কিভাবে সংকট সমাধানের কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া যাবে সেই বিষয়ে আলোচনাও চলছে।
জাতিসংঘের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে বিএনপির এমন একটি সূত্র জানায়, আমরা আমাদের তরফ থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছি সংকটের সমাধান জাতিসংঘের মাধ্যমেই হতে হবে। কারণ সরকারের সংকট সমাধানের জন্য ২০১৯ এর আগে সংলাপ করার কোন পরিকল্পনা নেই। সেটা জানিয়ে এটাও বলা হয়েছে প্রয়োজনে জাতিসংঘ হস্তক্ষেপ করলেও বিএনপি সমর্থন দিবে।
জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. আব্দুল মোমেন বলেন, বিএনপি জাতিসংঘের হস্তক্ষেপের কথা যতই বলুক না কেন কোন কাজ হবে না। কারণ আমরা তাদের হস্তক্ষেপের মাধ্যমে সংকটের সমাধান চাইছি না। আমাদের সমস্যা আমরা নিজেরাই সমাধান করবো। সেই জন্য সরকার প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিবে। তাছাড়াও জাতিসংঘ এখন চাইলেও হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। তারা হস্তক্ষেপ করতে হলে সিকিউরিটি কাউন্সিল কিংবা জেনারেল এ্যাসেম্বলিতে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সেই ধরনের কোন কথা এখনও পর্যন্ত আমাদের জানা নেই। এই জন্য জুন মাসেই জাতিসংঘ বাংলাদেশের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবে এটা বলা যায় না। বিএনপি অনেক ধরনের চেষ্টা করতে পারে। সেটা করলেই কি সফল হবে।