একটি বেনামী পোস্টারে ছেয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। পোস্টারটিতে খালেদা জিয়াকে মুরতাদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এবং দেশের মুমিন মুসলমাদের কাছে আহবান জানান হয়েছে খালেদা জিয়াকে প্রতিহত করার জন্য।
এরই মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামের অলিগলিতে সাটান হয়েছে এই পোস্টার। যেখানে দুটি পোস্টার লাগালেই চলে, সেখানেও লাগান হচ্ছে চার থেকে ছয়টি।
পোস্টারটিতে প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়া হয়েছে দেশের নাগরিকদের কাছে। খালেদা জিয়ার কাছে ইসলাম কি সুরক্ষিত? এই প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে মুমিন মুসলিমগণের কাছে আহবান জানান হয়েছে, মুরতাদ খালেদা জিয়ার অনৈসলামিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি পুত্রের কুলখানির দিনে গঙ্গা যমুনা শাড়ি পড়ে ২০ বছরের যুবতী সেজে দেখা করেছেন পরপুরুষের সাথে। খালেদা জিয়া একজন মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও পরপুরুষের সামনে মাথায় কাপড় পর্যন্ত দেন না। সুতরাং খালেদা জিয়ার কাছে ইসলাম নিরাপদ নয়।
পোস্টারের ভাষ্য ও আওয়ামী লীগের রাজনীতি
বিগত চার বছরের আওয়ামী লীগের বিএনপি বিরোধিতার প্রধান ইস্যুই ছিল ইসলামী জঙ্গীবাদ। আওয়ামী লীগ বলতে চেয়েছে, বিএনপি ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশে উগ্র ইসলামী দলগুলো জঙ্গীবাদের বিস্তার ঘটাবে। বর্তমানে আওয়ামী লীগের নেতারা হরহামেশাই বলছেন, আওয়ামী লীগের সাথে আইএসের কোন পার্থক্য নাই। অথচ সেই খালেদা জিয়াকেই মুরতাদ ঘোষণা করে পোস্টার সাটান হলো সারা দেশে! তাহলে কি আওয়ামী লীগ বিএনপি বিরোধিতার একটি রাজনৈতিক ইস্যু হারাতে চললো?
সুফী সমাবেশে শেখ হাসিনার বক্তব্য ও পোস্টারের ভাষা
পোস্টারটির ভাষ্যের সাথে শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক বক্তব্যেরও রয়েছে অস্বাভাবিক মিল। ঢাকায় আন্তর্জাতিক সুফি সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নিরাপরাধ `মানুষ পুড়িয়ে মেরে` বিএনপি জামায়াত ইসলাম ধর্মের অবমাননা করছেন। তিনি আরও বলেন, `মানুষকে কি মানুষ পুড়িয়ে মারতে পারে? তারা ইসলাম ধর্মের নামে রাজনীতি করে কিভাবে একজন মুসলমান আরেকজন মুসলমানকে এভাবে পুড়িয়ে হত্যা করে।` তিনি এই হত্যাযজ্ঞ প্রতিরোধে গ্রাম-গঞ্জে আলেম সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানয়েছেন। পোস্টারটিতে যেভাবে ইসলামের অবমাননারোধে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আলেম সমাজকে রুখে দাড়াতে আহবান জানান হয়েছে ঠিক একইভাবে শেখ হাসিনাও আলেম সমাজের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
কেবল সুফী সমাবেশেই নয় বিএনপির চলমান অবরোধ শুরু হওয়ার পর থেকেই খালেদা জিয়াকে ইসলামবিরোধী হিসেবে দেখান শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। এবছর বিশ্ব ইজতেমা শুরু হলেও অবরোধ প্রত্যাহার না করায় বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ইসলামবিরোধী বলে মন্তব্য করেছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ।
পোস্টারটি কে লাগাচ্ছে?
পোস্টারের ভাষা ও পোস্টারিংয়ের প্রবণতা থেকে কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট। প্রথমতঃ পোস্টারটি প্রকাশের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে। দ্বিতীয়তঃ কোন ব্যক্তি নয় বরং সংগঠনই কাজটি করছে।
নিজেদের পরিচয় গোপন করে পোস্টারটি সারাদেশে সঙ্ঘবদ্ধভাবে সাটা হচ্ছে। অর্থাৎ এইটি কোন বিচ্ছিন্ন ব্যক্তি বা সংগঠনের মনের খেয়াল নয়। পরিকল্পিতভাবে দেশব্যাপী কোন একটি সংগঠিত শক্তি বিপুল অর্থব্যয় করে কাজটি করছে। এমনকি পোস্টারটি লাগান হচ্ছে যথাযথ গোপনীয়তা বজায় রেখে। কিন্তু খালেদা জিয়াকে নিয়ে পোস্টার লাগাতে গোপনীয়তা বজায় রাখতে হবে কেন? এই সংগঠনটি বা কোনটি?
দুইটি পক্ষ থেকে এই পোস্টারটি ছাপান হতে পারে। পোস্টারটি ছাপাতে পারে কোন উগ্র ইসলামী সংগঠন। কিন্তু ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর বিএনপি ও খালেদা জিয়ার বর্তমানে স্বার্থগত কোন দ্বন্দ্ব নাই। উপরন্তু, বিএনপি গত কয়েক দশক ধরেই ইসলামী দলগুলোর বন্ধুর ভূমিকা পালন করে এসেছে। একারণে খালেদা জিয়াকে মুরতাদ ঘোষণা করলে কোন ইসলামী দলই কৌশলগতভাবে সুবিধা লাভ করতে পারবে না।
তাহলে, কে, কেন প্রচার করছে এই পোস্টার?
বিএনপির কোন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মুসলিমদের খেপিয়ে তুলতে এই ধরণের পোস্টারিং করতে পারে। কিন্তু যে পক্ষই এই পোস্টারটি ছাপিয়ে থাকুক, এতে খালেদা জিয়ার ওপর একটি ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তিই আরোপ করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন রাজনীতি পর্যবেক্ষকরা।