ড. হোসেন জিল্লুর রহমান। শিক্ষাবিদ, অর্থনীতিবিদ ও বেসরকারি সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান ব্র্যাকের চেয়ারম্যান। প্রধান নির্বাহী, বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিপিআরসি। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা। বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, যুক্তরাজ্য আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিভাগ, ডেনিশ আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা, সুইডিশ আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতা সংস্থা, টেকসই উন্নয়ন কমিশন, অ্যাকশন এইড, জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও জাতীয় সংস্থার পরামর্শকও ছিলেন।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, গরিব মানুষের বেঁচে থাকার প্রসঙ্গ নিয়ে মুখোমুখি হন জাগো নিউজের। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের আজ থাকছে প্রথমটি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু।
কষ্টের তো বহু ধরন আছে। যেমন- একজন মানুষ বড় কষ্টে আছে, অথচ সে কষ্টের কোনো স্বীকৃতি নেই। চরম কষ্টে থাকার পরেও মানুষকে শুনতে হচ্ছে, তারা অনেক সুখে আছে।
জাগো নিউজ: ‘বাজারে গিয়ে মানুষ কাঁদছে’ খোদ সরকারের এক প্রতিমন্ত্রী এমন মন্তব্য করেছেন। গরিব মানুষের বেঁচে থাকা কীভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন?
ড. হোসেন জিল্লুর রহমান: গরিব মানুষ কীভাবে বেঁচে আছে, এটি বোঝার জন্য বিশেষ বিশ্লেষণের প্রয়োজন নেই। চোখ-কান খোলা রাখলেই গরিব মানুষের কান্না দেখতে পাওয়া যায়। টিসিবির ট্রাকের কাছে মানুষের লম্বা লাইন দেখলেই বোঝা যায় মানুষ কত কষ্টে আছে। মানুষ যে কত কষ্টে আছে, তা নিয়ে বিতর্কের অবকাশ নেই। বাজার পরিস্থিতি নিয়েই যে মানুষ শুধু কষ্টে আছে, তা নয়। লোডশেডিং নিয়েও তো মানুষ এই গরমে চরম কষ্টে আছে। কষ্টের তো বহু ধরন আছে। যেমন- একজন মানুষ বড় কষ্টে আছে, অথচ সে কষ্টের কোনো স্বীকৃতি নেই। চরম কষ্টে থাকার পরেও মানুষকে শুনতে হচ্ছে, তারা অনেক সুখে আছে।
বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের ব্যাপার আছে। যখন পরিস্থিতি খারাপ হয়, তখন বলে কিছু করার নেই। বৈশ্বিক কারণ, যুদ্ধের কারণ দেখানো হয়। যখন বাজার পরিস্থিতি ভালো হয়, তখন ঠিকই দায়িত্বশীলরা ক্রেডিট নিয়ে বলেন তাদের কারণে ভালো হচ্ছে। আমি মনে করি, মানুষ যে বড় কষ্টে আছে এ বাস্তবতা স্বীকার করা দরকার। দারিদ্র্য নিয়ে সরকারের নতুন পরিসংখ্যান দেখলাম। দারিদ্র্যের পরিসংখ্যান নিয়ে সরকার এক ধরনের অস্বস্তিতে আছে।
দারিদ্র্যসীমার ওপরে যারা আছেন মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্তরা বড় কষ্টে আছে। শুধু তো খাদ্যদ্রব্য নিয়ে মানুষ কষ্টে নেই। প্রত্যেকটা জিনিসের দামই বেড়েছে।
জাগো নিউজ: আপনি বলছেন, দারিদ্র্য নিয়ে সরকার অস্বস্তিতে আছে। কিন্তু বাস্তবতা তো ভিন্ন। সরকার উন্নয়ন, মানুষের জীবনযাপন নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছে।
ড. হোসেন জিল্লুর রহমান: ‘দারিদ্র্য’ শব্দটি সরকার আসলে শুনতে চায় না। সরকার মনে করে তার উন্নয়নের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে দারিদ্র্য শব্দটি। সরকারের ভাষায় দরিদ্র মানুষ কমছে। কিন্তু আপনি যদি একটি ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কাছে গিয়ে জানতে চান, আপনার গরিবদের জন্য কয়টি ভাতা কার্ড দরকার? সে লাফিয়ে উঠে বলবে, যত আছে দিন। তার আরও আরও দরকার। অথচ দারিদ্র্য প্রসঙ্গ উঠলেই সরকার অস্বস্তিবোধ করে।
আসলে শব্দের অহেতুক বিতর্কে গিয়ে কোনো লাভ নেই। আমি কষ্ট শব্দটিই ব্যবহার করবো। শুধু গরিবরাই কষ্টে নেই। নিম্ন মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্তরাও নানাভাবে কষ্টে আছে।
শহর অঞ্চলে কষ্টের পরিধিটা আরও বেশি। আমরা এটি আগে থেকে বলে আসছিলাম। সরকার স্বীকার করেনি। কারণ গ্রামের একজন মানুষ কোনো না কোনোভাবে তার কষ্টটা লাঘব করতে পারে। শহরে সে সুযোগটি কম। সরকার যদিও এখন এটি স্বীকার করছে।
জাগো নিউজ: বৈশ্বিক কারণ, চলমান যুদ্ধও এই কষ্টের জন্য দায়ী। অন্তত সরকার তাই বোঝাতে চায়?
ড. হোসেন জিল্লুর রহমান: এই পরিস্থিতির জন্য অনেক কারণই দায়ী। কিন্তু বাজার মনিটরিং তো সরকারের দায়। এখানে কী হচ্ছে? আপনি খাদ্যদ্রব্যের ওপর জোর দিচ্ছেন। কিন্তু সব জিনিসের দামই তো বাড়ছে। বিদ্যুতের দাম বাড়ছে। যাতায়াতের দাম বাড়ছে। শিক্ষা উপকরণের দাম বাড়ছে। সব জায়গায় তো আপনি যুদ্ধ এনে সামলাতে পারবেন না।
জাগো নিউজ: উন্নয়ন হচ্ছে, মানুষের আয় বাড়ছে?
ড. হোসেন জিল্লুর রহমান: সরকারের উন্নয়ন নীতিমালা কাদের মাথায় রেখে নিতে হচ্ছে, সেটা আগে বিবেচ্য। সরকারি কমকর্তা-কর্মচরীদের জন্য মহার্ঘভাতা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। বেতন বাড়ানোর কথা বলছে। তারা তো সুরক্ষিত। সাধারণ মানুষ তাহলে কী করবে? সাধারণ মানুষের জন্য সরকার যে ব্যবস্থা নিচ্ছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল।
আসলে শব্দের অহেতুক বিতর্কে গিয়ে কোনো লাভ নেই। আমি কষ্ট শব্দটিই ব্যবহার করবো। শুধু গরিবরাই কষ্টে নেই। নিম্ন মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্তরাও নানাভাবে কষ্টে আছে।