পুলিশের ভেতরেই আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ; পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের ক্ষোভ
প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রস্তাবনা অনুমোদনের ছয় মাসেও মাঠে গড়ায়নি রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) গঠন প্রক্রিয়া। পুলিশের ভেতরেই আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে বিষয়টি চূড়ান্ত হয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে থাকলেও অর্থ মন্ত্রণালয়ে যাচ্ছে না। ফলে গত বছর ডিসেম্বরের মাঝামাঝি আরএমপি ঘোষণা হওয়ার কথা থাকলেও চলতি বছরের জুন মাসেও তা ঝুলে আছে। গত বছর নভেম্বর মাসে প্রস্তাবনাটি অনুমোদন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় পাস করেও পদ না থাকায় পদোন্নতিবঞ্চিত হয়ে আছেন পুলিশের শত শত কর্মকর্তা। এতে রংপুর মহানগরী এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
পুলিশ সূত্র জানায়, সিটি করপোরেশনের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ গঠনের প্রস্তাব তৈরি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠায় স্থানীয় পুলিশ। প্রস্তাবনায় মহানগরী ও এর আশপাশ এলাকায় ছয়টি থানা গঠন করার কথা বলা হয়। প্রস্তাবিত থানাগুলো হচ্ছে কোতোয়ালি, হাজীরহাট, পরশুরাম, তাজহাট, মাহীগঞ্জ ও হারাগাছ। এই মেট্রোপলিটনে সাত থেকে আট হাজার জনবল থাকার কথাও প্রস্তাবনায় দেয়া হয়। এর মধ্যে একজন কমিশনার, এক বা দুইজন এডিশনাল কমিশনার, একজন হেডকোয়ার্টার ডিসি, দুইজন ডিভিশন (উত্তর-দণি হলে) ডিসি, দুই বা চারজন ডিভিশন ডিসির অন্তর্গত এএসপি, থানায় চার থেকে ছয়জন ওসি, সাবইন্সপেক্টর ৭০০ থেকে ৮০০ জন, অ্যাসিস্ট্যান্ট সাবইন্সপেক্টর ১৪০০ থেকে ১৫০০ এবং বাকিরা কনস্টেবল। সূত্র মতে মেট্রোপলিটন কর্মপরিধি রংপুরের সিটি এলাকা ছাড়াও আশপাশে আরো কিছু এলাকা বর্ধিত করারও চিন্তাভাবনা করা হয়।
পুলিশ সূত্র জানায়, গত বছর ২৪ নভেম্বর সোমবার রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে পুলিশের মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার, প্রশাসনিক কর্মকর্তা (রংপুর রেঞ্জের প্রথম ও সাবেক ডিআইজি) বিনয়কৃষ্ণ বালা, সাবেক জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানের উপস্থিতিতে একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়। ওই বৈঠকেই রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রস্তাবনায় অনুমোদন স্বার করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২৬ নভেম্বর অনুমোদিত প্রস্তাবনাটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। সেখান থেকে সরকারি আদেশ হওয়ার পর তা অর্থমন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পর রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ ঘোষিত হওয়ার কথা। কিন্তু নতুন সরকার গঠনের পাঁচ মাস হতে চললেও চূড়ান্ত পর্যায়ে থাকা রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রতিষ্ঠার বিষয়টি আলোর মুখ দেখছে না।
পুলিশ সূত্র জানায়, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) প্রস্তাবনায় প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন স্বার হওয়ার পর পরই পুলিশে কর্মরত কর্মকর্তারা বেশ খুশি হয়েছিলেন। নাম গোপন রাখার শর্তে ডিএমপি, আরএমপি, সিএমপি, কেএমপিতে কর্মরত একাধিক চৌকস পুলিশ কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে জানান, আমরা পরীায় পাস করার পরও নতুন পদ সৃষ্টি না হওয়ায় পদোন্নতি পাচ্ছি না। প্রধানমন্ত্রী রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রস্তাবনা অনুমোদনের পর আমরা আশান্বিত হয়েছিলাম। এই মেট্রোপলিটন পুলিশ ঘোষণার পরপরই আমরা পদোন্নতি পেয়ে সেখানে যোগ দিতে পারব। কিন্তু বিষয়টি একেবারেই শেষ প্রান্তে এসে কেন আটকে গেল তা বুঝতে পারছি না। এতে আমরা আশাহত।
পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়, মূলত মেট্রোপলিটন হলে অনেকেই পদোন্নতি ও পদপদবি পাবেন, বিষয়টি পুলিশের ভেতরেই অনেকে বাঁকা চোখে দেখেন। ফলে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার মারপ্যাঁচে বিষয়টি আটকে রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে কার্যকর উদ্যোগের দাবি জানান সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে পুলিশের রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি (ভারপ্রাপ্ত) হুমায়ুন কবির জানান, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ গঠন প্রক্রিয়ায় চূড়ান্ত পর্যায়ে প্রক্রিয়াধীন আছে। আশা করি শিগগির তা বাস্তবায়ন হবে।
এ দিকে প্রস্তাবটি অনুমোদন হয়ে সরকারি আদেশের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে রংপুর বিভাগীয় প্রশাসন। রংপুর বিভাগীয় কমিশনার দিলওয়ার বখ্ত বলেন, নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আছে। অচিরেই হয়ে যাবে।