প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য মোট ২৮ হাজার ২৯৩ কোটি ৩৮ লাখ ৭৬ হাজার টাকা ব্যয় হবে। এটি একটি বড় প্রকল্প। প্রকল্পের সব টাকা বাংলাদেশের মানুষের কষ্টার্জিত। তবে পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন করতে গিয়ে দেশের অন্য কোনো উন্নয়ন প্রকল্প বাধাগ্রস্ত বা ক্ষতি হবে না। প্রত্যেক প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে, টাকার কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
সংসদে আজ বুধবার প্রশ্নোত্তরে পীর ফজলুর রহমানের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। বিকেলে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠকের শুরুতে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বড় প্রকল্প নেয়ার মতো আর্থিক সক্ষমতা বাংলাদেশ অর্জন করেছে। কাজেই অন্য কোনো প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। তিনি বলেন, সব টাকা দেশের মানুষের কষ্টার্জিত অর্থ। কারো আর্থিক সাহায্য-সহযোগিতা এতে নেই। দক্ষিণ বাংলার মানুষের সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগ সহজ করা এবং বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সড়ক নেটওয়ার্কে যুক্ত করার লক্ষ্যে নির্মাণাধীন এ প্রকল্পে ব্যয় হবে মোট ২৮ হাজার ২৯৩ কোটি ৩৮ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। এর প্রতিটি রড, ইট, পাথর, সিমেন্ট আমাদের জনগণের টাকায় কেনা বলে মন্তব্য করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বব্যাংকের আনীত অভিযোগের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করে। দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তে কথিত দুর্নীতি ষড়যন্ত্রের অভিযোগ ভিত্তিহীন প্রমাণ হয়। পরে বিশ্বব্যাংক একপর্যায়ে এ প্রকল্পে পুনরায় ফিরে আসার ঘোষণা দিলেও নতুন নতুন শর্ত আরোপ করে দীর্ঘসূত্রতার পথ অবলম্বন করায় আমরা দেশ ও জনগণের স্বার্থে তাদের ঋণ নেইনি। পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ সন্তোষজনকভাবে এগিয়ে চলছে এবং ২০১৮ সাল নাগাদ এ সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া সম্ভব হবে বলে সংসদকে জানান তিনি।
এক কোটি লোকের কর্মসংস্থান
দিদারুল আলমের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী সংসদকে জানান, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে ৭৫ হাজার একর জমিতে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, এক কোটি লোকের কর্মসংস্থান এবং আরো ৪০ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয় বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) কাজ করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেজাকে এ পর্যন্ত চারটি বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের জন্য লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। এগুলো হলোÑ নরসিংদীর এ কে খান অর্থনৈতিক অঞ্চল, মুন্সীগঞ্জের আবদুল মোমেন অর্থনৈতিক অঞ্চল, নারায়ণগঞ্জের মেঘনা ইকোনমিক জোন ও মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোন।
প্রধানমন্ত্রী আরো জানান, বিদ্যমান বিনিয়োগ পরিবেশের সুযোগ গ্রহণ করে এ পর্যন্ত এ কে খান অর্থনৈতিক অঞ্চলে ২০ মিলিয়ন ইউএস ডলার, আবদুল মোমেন অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৩০ মিলিয়ন ইউএস ডলার, মেঘনা ইকোনমিক জোন ৫৬ মিলিয়ন ইউএস ডলার, মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোনে ১৮ দশমিক ৯২ মিলিয়ন ইউএস ডলারসহ মোট ২২০ দশমিক ৯২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে।
এর ফলে লক্ষাধিক লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। এ ছাড়া বিনিয়োগ সংক্রান্ত পারস্পরিক সম্পর্ক ও শিল্পে সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশ ৩১টি দেশে সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় পুঁজি বিনিয়োগে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। অনাবাসী বাংলাদেশীদের বিদেশী বিনিয়োগকারী হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারি ইপিজেড সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। ঈশ্বরদী ইপিজেডে নতুন ১২৮টি ও মংলায় ৭৪টি শিল্প প্লট তৈরি করা হয়েছে। শিল্প স্থাপনে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি ও রাস্তাঘাট সংবলিত শিল্পপ্লট প্রদান ও ঋণ সহয়তা করা হচ্ছে।
বরিশাল পর্যন্ত রেললাইন
সদস্য রুস্তম আলী ফরাজীর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন সরকার এসে দেশের দক্ষিণ অঞ্চলকে বঞ্চিত করেছে। কেননা, দক্ষিণের মানুষ নৌকায় ভোট দিয়েছিল। তাই বর্তমান সরকার দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। পদ্মা সেতু হচ্ছে। আমরা মাওয়া থেকে ভাঙ্গা হয়ে পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেল সংযোগ দিচ্ছি। এর পরে পায়রা বন্দর থেকে বরিশাল শহরকে রেল নেটওয়ার্কের মধ্যে আনা হবে।