শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র আর গোলাবারুদ উদ্ধারের ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। সীমান্তে এসব অস্ত্র উদ্ধারের পর নড়েচড়ে বসেছে, প্রশাসনও। এলাকাবাসীর ধারণা, ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী কোনো সংগঠন অস্ত্র মজুদের সঙ্গে জড়িত। গেলো এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র উদ্ধারের খবর ভাবিয়ে তুলেছে, সংশ্লিষ্টদের। গোলাবারুদ উদ্ধারের ঘটনায় র্যাব-৫ (রাজশাহী অঞ্চল) বাদী হয়ে মামলা দায়ের করলেও এখন পর্যন্ত বেশিদূর এগোয়নি তার তদন্তকার্যক্রম।
জানা গেছে, হবিগঞ্জের সাতছড়ির পর র্যাবের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলাবারুদ উদ্ধার অভিযান শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে। উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নের বুরুঙ্গা কালাপানি পাহাড়ে মাটি খুঁড়ে বিপুল পরিমান অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয় টানা ৩০ ঘণ্টার অভিযানে।
কয়েকটি টিলার বেশ কটি স্থান খুঁড়ে পাওয়া গেছে ৭ দশমিক ৬২ মিলিমিটার ব্যাসার্ধের ৪৮ হাজারের বেশি পিস্তলের গুলি, ১২ দশমিক ৭ এন্টি এয়ার ক্র্যাফট গানের গোলা, ২০টি এমজি ড্রাম, ৫টি স্যাটেলাইট ফোন, ৪টি এইচএফ সেট, দুটি হেভি মেশিনগান, মেশিনগানের ব্যারেল পাঁচটি, এসএমটি একটি, লং ও শর্ট রেঞ্জের ওয়াকিটকি। এ ছাড়া মেশিনগান রাখার জন্য ব্যবহৃত ড্রাম ম্যাগাজিন পাঁচটি, টেলিস্কোপি সাইটসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম।
গত এক দশকে শেরপুরের নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতীর গাড়ো পাহাড় থেকে ৫০ হাজারেরও বেশি গুলি, অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
২০০৭ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ঝিনাইগাতীর বাকাকুড়া গ্রামের একটি বাড়ি থেকে ২৯ হাজার রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছিল তৎকালীন বিডিআর সদস্যরা। গ্রেফতার করা হয় রাসেল সাংমা নামে এক যুবককে। এরপর, একই মাসে উদ্ধার করা হয় আরো ১০ হাজার রাউন্ড গুলি।
২০১০ সালের ১৮ ডিসেম্বর একই গ্রাম থেকে উদ্ধার হয় চাইনিজ রাইফেলের ১৩ হাজার ৬৮০ টি গুলি। এর এক সপ্তাহ পর গারো পাহাড়ের জঙ্গলে পাওয়া যায় বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলা। ২০১১ সালের ৯ মে ৯৯৫ টি, ১৭ মে ৩৬৭ টি, ২৯ জুলাই ২৯০ টি, ১৩ সেপ্টেম্বর ২৫০ টি এবং ২০১২ সালের ২৯ আগস্ট ১৫১ টি গুলি উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
তবে এবারের অভিযান ছাড়িয়ে গেছে আগের সব অংক। যা ভাবিয়ে তুলেছে প্রশাসনকে।
পোড়াগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, ২৫ বছর আগে এই বর্ডারবেল্ট দিয়ে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার সদস্যরা থাকতো, এরকম রাষ্ট্রীয় বিরোধী কাজে উলফারাই জড়িত।
নালিতাবাড়ী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান লিটন মনে করেন সীমান্তে বিভিন্ন সময়ে উলফার লুকিয়ে রাখা অস্ত্রই র্যাব সদস্যরা উদ্ধার করেছে।
নালিতাবাড়ী পৌরসভার নব নির্বাচিত মেয়র আবু বকর বাক্কা বলেন, উদ্ধারকৃত অস্ত্রগুলো ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু সাইদ মোল্লা জানান, নালিতাবাড়ীতে অস্ত্র উদ্ধার পরবর্তী আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো রয়েছে। আমরা সার্বক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থল নজরদারিতে রাখছি, বিষয়গুলো আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করছি। আমরা আশা করছি অল্প সময়ের মধ্যে জানতে পারবো গোলাবারুদ ও অস্ত্রগুলো কে বা কারা এখানে মজুদ করেছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল ওয়ারীশ বলেন, গোলাবারুদ উদ্ধারের পর নালিতাবাড়ী থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে অস্ত্র আইনে মামলা হয়েছে। আমরা সে অনুযায়ী তদন্ত করছি। তবে এখন পর্যন্ত কার্যক্রম খুব বেশিদূর এগোয়নি।
উল্লেখ্য, শেরপুরের নালিতাবাড়ীর মধুটিলা ইকোপার্কের পেছন থেকে সোমবার বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ উদ্ধার করে র্যাব-৫ (রাজশাহী অঞ্চল)।
Prev Post
Next Post