আজ পয়লা ফালগুন। বসন্তের প্রথম দিন। বসন্ত মানেই নতুন প্রাণের কলরব। ‘বনানী সেজেছে সাকী ফুলের পেয়ালা নিয়ে হাতে’। কোকিলের কুহুতান, দখিনা হাওয়া, ঝরা পাতার নূপুর নিক্বণ, প্রকৃতির মিলন সবই এ বসন্তে। এমন মধুর দিনে কবি তাই বলেছেন, ‘সে কি আমায় নেবে চিনে, এই নব ফালগুনের দিনে জানিনে?’ অথবা ‘রোদন ভরা এ বসন্ত, সখী বুঝিনি কখনো আগে/মোর বিরহ বেদনা জাগিল কিংশুক রক্তিম রাগে।’
আবহমান বাংলার ঋতু বৈচিত্র্যের উল্লেখযোগ্য ঋতু বসন্ত। এ ঋতুকে বলা হয় ঋতুরাজ। বঙ্গাব্দের শেষ দুই মাস ফালগুন ও চৈত্র মিলিয়ে বসন্ত ঋতু। বাংলার প্রকৃতি, আমাদের ভাষা, সমাজ, সংস্কৃতি ও সাহিত্যের বড় স্থান দখল করে আছে বসন্ত। বসন্ত মিলনের ঋতু, আবার বিরহেরও ঋতু। শীতের জবুথবু প্রকৃতির অবসান ঘটিয়ে দণি সমীরণের প্রবাহ শুরু হয় বসন্তে, এর সাথে দোলায়িত হয় মানুষের মনও। জীবন রসায়নে যেন কী এক পরিবর্তন আসে। হৃদয়ে সৃষ্টি হয় প্রণোদনা, নাড়া দেয় এক অব্যক্ত আবহ। কেবল মানব-মানবীর মনেই শুধু নয় বৃরাজি, পী ও প্রাণিকূলেও এ হাওয়া দোলা দেয়। কবির সেই চিরায়ত বাণী ‘আহা, আজি এ বসন্তে, এতো ফুল ফোটে, এতো বাঁশী বাজে, এতো পাখি গায়।’
এ সময়েই শীতের জীর্ণতা সরিয়ে ফুলে ফুলে সেজে ওঠে প্রকৃতি। গাছে গাছে নতুন পাতা, স্নিগ্ধ সবুজ কচি পাতার ধীরগতিতে বাতাসের সাথে বয়ে চলা জানান দেয় নতুন কিছুর।
শহরের নাগরিক জীবনে বসন্তের আগমন বার্তা নিয়ে আসে অন্যরকম এক অনুষঙ্গ। ইট-পাথরের নগরীতে ‘ফুল ফুটুক আর নাই ফুটক’ একালের তরুণ-তরুণীরা কিন্তু বসে থাকতে রাজি নন। গায়ে হলুদ আর বাসন্তী রঙের শাড়ি জড়িয়ে হাতে হাত রেখে তারা বেরিয়ে পড়েন। পাঞ্জাবি পরা তরুণেরাও এদিন নিজেদের রঙিন সাজে সাজাতে কম যান না। বসন্ত তারুণ্যেরই ঋতু, যৌবনে দেয় রাজটীকা।
তরুণ-তরুণীরা আজ বাংলা একাডেমি আয়োজিত একুশের বইমেলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, শাহবাগ, চারুকলা চত্বর, পাবলিক লাইব্রেরি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মাতিয়ে রাখবে সারা দিন। তারা বাসন্তী রঙের পোশাকে নিজেকে রাঙিয়ে নেবেন। তরুণীরা বাসন্তী রঙের শাড়ি পরে খোঁপায় গাঁদা, পলাশসহ নানা ফুল গুঁজে আর তরুণেরা বাসন্তী রঙের পাঞ্জাবি ও ফতুয়ায় নতুন করে নিজেদের সাজিয়ে নেমে আসবে পথে পথে।
নগরীর বিভিন্ন উদ্যান, ফাস্টফুড, ক্যাফেও মুখর থাকবে। ফোন, ফেসবুক, টুইটার ইত্যাদি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও চলবে তাদের বসন্তের শুভেচ্ছা বিনিময়।