ভারতের আদানি পাওয়ার গ্রুপের সঙ্গে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ চুক্তি বিবেকবান দেশপ্রেমিক মানুষকে হতবাক করেছে মন্তব্য করে তা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
রোববার (০৫ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি জানান।
‘আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ আমদানির অসম চুক্তি বাতিলের দাবিতে’ এ সংবাদ সম্মেলনে আয়োজন করে ভাসানী অনুসারী পরিষদ।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বিদ্যুৎ আমদানির নামে দেশের সম্পদ লুট করার এই চুক্তিকে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ভারত সরকারকে উপঢৌকন হিসেবে অভিহিত করেছেন। দেশে দুর্নীতি, দুঃশাসন, অর্থপাচার ও সীমাহীন লুটপাটে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। এই চুক্তি মূলত আদানির পকেট ভরার চুক্তি, একপেশে ও অত্যন্ত ব্যয়বহুল। বিবেকবর্জিত ও দেশের স্বার্থবিরোধী এই চুক্তি বাতিল করতে হবে।’
গত শুক্রবার পঞ্চগড়ে ঘটে যাওয়া সংঘর্ষ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘পঞ্চগড় জেলায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ ঠেকাতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। এই ব্যর্থতার জন্য তাদের (আহমদিয়া) জান মালের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং আহমদিয়া সম্প্রদায়ের কাছে সরকার প্রধানের ক্ষমা চাইতে হবে।’
নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘ঘৃণা করার মতো একটা শাসক ক্ষমতায় আছে। তাদের নিয়ে কোনো ভালো কথা বলার সুযোগ নেই। আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ আমদানি চুক্তিটা পুরোপুরি রাজনৈতিক ধান্ধায় করা হয়েছে।’
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী বলেন, ‘জবাবদিহিমূলক সরকার থাকলে আদানির বিদ্যুৎ চুক্তির মতো চুক্তি করা যায় না। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে ভারত সরকারকে খুশি করতে যা যা করা হয়েছে, তার মধ্যে একটা হলো আদানির সঙ্গে চুক্তি। আদানি যাতে সন্তুষ্ট হয়, সেটাই চুক্তিতে নিশ্চিত করা হয়েছে।’
লিখিত বক্তব্যে ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, ‘সর্বগ্রাসী দুর্নীতি, দুঃশাসন, অর্থপাচার ও সীমাহীন লুটপাটে জনজীবন আজ দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। এই অবস্থার মধ্যে বিবেক বর্জিত ও দেশের স্বার্থ বিরোধী বিদ্যুৎ চুক্তি, যা ভারতের আদানি পাওয়ার গ্রুপের সঙ্গে করা হয়েছে। অস্টেলিয়ার জ্বালানী বিশেষজ্ঞ টিম বাকলির বলেছেন, এই চুক্তি মুলত এশিয়ার সাবেক শীর্ষ ধনী আদানীর পকেট ভরার চুক্তি। এই চুক্তি একপেশে ও অত্যান্ত ব্যয়বহুল।’
‘বাংলদেশি কোম্পানিগুলো প্রতি ইউনিটের বিক্রয় মূল্য দরপত্রে সর্বোচ্চ ৬.৫২ পয়সা দিলেও অজ্ঞাত কারণে দেশি কোম্পানিগুলোকে না দিয়ে ৮.৭১ পয়সা অর্থাৎ অতিরিক্ত ৭০ হাজার কোটি টাকা বাড়তি মূল্যে আদানীর সাথে চুক্তি করা হয়’—বলেন রফিকুল ইসলাম বাবলু।
তিনি বলেন, ‘অদ্ভুৎ ব্যাপার হচ্ছে, আদানি যে ট্যাক্স ভারত সরকারকে দেবে, সেটা মূলত বাংলাদেশের সরকার তথা বাংলাদেশের জনগণ দেবে এবং ২৫ বছর ধরে এই ট্যাক্স পরিশোধ করতে হবে। অথচ এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিকে ভারত সরকার ২০১৯ সালে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করার কারণে ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি টাকা আদানির সাশ্রয় হবে।
‘কারণ, ঐ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লা এবং বিভিন্ন সারঞ্জামাদি আমদানির জন্য কর ছাড় থেকে প্রায় ২০০মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করবে আদানি গ্রুপ। বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে- এই ছাড়ের টাকাও তারা বাংলাদেশের কাছ থেকে আদায় করবে। এখন আদানি দাবি করছে, তারা ব্যবসায়িক বুদ্ধি খাটিয়ে এই লাভ আদায় করেছি। অথচ ন্যায্য চুক্তি হলে এই সুবিধা বাংলাদেশ সরকারের পাওয়ার কথা’— বলেন রফিকুল ইসলাম বাবলু।
তিনি বলেন, ‘কোনো কারণে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ না কিনলেও বছরে ৪৫০ মিলিয়ন ডলার দিতে হবে। দেশের কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ নেওয়ার নামে যে হরিলুটের ব্যবস্থা করা হয়েছে তার থেকেও ভয়াবহ চুক্তি হচ্ছে আদানির সঙ্গে।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্য সচিব হাবিবুর রহমান রিজু।
সারাবাংলা