ছোট একখানা বই—পাসপোর্ট। কিন্তু বিদেশযাত্রার এর বিকল্প নেই। পাসপোর্ট হারিয়ে ফেলা বা ফেলে রেখে বিমানবন্দরে যাওয়ার ঝক্কি যাঁরা নিয়মিত দেশের বাইরে যান, তাঁদের বুঝিয়ে বলার প্রয়োজন নেই। বিশ্ব প্রযুক্তিতে অনেক এগিয়ে গেছে। তবুও কেন সেই মান্ধাতা আমলের কাগজের পাসপোর্ট?
অস্ট্রেলিয়াই প্রথম কাগজে পাসপোর্টের ঝামেলা ভালোভাবে বুঝতে পেরেছে। দেশটি ‘ক্লাউড’ (অনলাইনে তথ্য সংরক্ষণ) পাসপোর্ট চালু করার পরিকল্পনা নিয়েছে। পাসপোর্টের সব তথ্য সংরক্ষণ করা হবে অনলাইনে। নির্দিষ্ট ব্যক্তির নাম, পরিচয় বা ছবি দিয়েই জানা যাবে তাঁর হালনাগাদ সব তথ্য। ক্লাউড পাসপোর্ট চালু হলে অস্ট্রেলীয়দের আর কোনো কাগজের পাসপোর্ট বহন করতে হবে না। তাঁদের পরিচয় বা মুখের ছবিই হবে পাসপোর্ট।
চলতি বছর অস্ট্রেলিয়া সরকারের অর্থায়নে দেশটিতে আয়োজিত হ্যাকারদের (এরাও কম্পিউটার প্রোগ্রামার) সম্মেলনে ক্লাউড পাসপোর্টের ধারণা পাওয়া যায়। অনেকেই অনলাইনে গান, ছবি বা ভিডিওচিত্র রাখা হয়। একইভাবে কোনো নাগরিকের আঙুলের ছাপসহ সব গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও অনলাইনে রাখা যায়। অস্ট্রেলিয়ার হ্যাকার সম্মেলনে পুরস্কারজয়ী এক প্রকল্পে এভাবেই ক্লাউড পাসপোর্টের কথা বলা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী ক্লাউড পাসপোর্ট করা হলে সহজেই এতে কোনো পরিবর্তনও আনা যাবে।
অস্ট্রেলিয়ার বহির্গমন কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, দেশটিতে প্রতিবছর ৩৮ হাজার পাসপোর্ট হারানোর অভিযোগ পাওয়া যায়। ক্লাউড পাসপোর্ট চালু হলে এমন সমস্যা আর হবে না। পাসপোর্ট বহনই না করা হলে হারাবে কীভাবে? এর পাশাপাশি নতুন পাসপোর্ট বা তথ্য হালনাগাদ করাও সহজ হবে।
কাগজের পাসপোর্ট নিয়ে অস্ট্রেলীয়দের মধ্যেই সমস্যায় ভোগেন সবাই। তাই দেশটিতে ক্লাউড পাসপোর্টের পরিকল্পনা সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে তা বিশ্বের অন্যন্য দেশগুলোর জন্যও অনুসরণীয় হবে। আর এর ফলে বর্তমানের কাগজের পাসপোর্ট ভবিষ্যতে হয়তো শুধু স্মৃতিতে থাকবে।
পাসপোর্টে তৃতীয় লিঙ্গ
নেপালের পাসপোর্টে অতিসম্প্রতি তৃতীয় লিঙ্গকে স্থান দেওয়া হয়েছে। এর আগে দেশটির পাসপোর্টে শুধুমাত্র পুরুষ ও স্ত্রী এই দুই লিঙ্গ লেখা ছিল। কোনো ব্যক্তিকে এর মধ্যে থেকে যে কোনো একটি বেছে নিতে হতো। এখন থেকে ওই দুটির সঙ্গে আরেকটি যুক্ত হলো ‘অন্যান্য’। ২০০৭ সালে দেশটির হাইকোর্টের এক রায় অনুযায়ী তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের জন্যও পাসপোর্টসহ সরকারি নথিতে স্থান দিতে বলা হয়েছে।
অবশ্য নেপালের আগেই অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের পাসপোর্টে তৃতীয় লিঙ্গের সুবিধা রেখেছে। তবে দেশ দুটি তৃতীয় লিঙ্গকে ‘এক্স’ (X) দিয়ে চিহ্নিত করেছে। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও নেপাল পাসপোর্টে যে পরিবর্তনগুলো এনেছে, তা বিশ্বের সব দেশের জন্যই অনুসরণীয়।