বিএনপির অবরোধ-হরতাল কর্মসূচিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের হাতে নিহত ১০৭ জনের মধ্যে ৬৩ জনই বিরোধী দলের নেতাকর্মী বলে দাবি করেছে দলটি। দলটি এ হতাহতের জন্যে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দায়া করেছে। গত ৫ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত সরকারি দল ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর হাতে দলটির ৬ হাজার কর্মী আহত হয়েছে। একই সঙ্গে বিভিন্নস্থানে পেট্রোল বোমাসহ আটক হয়েছে আ’লীগের নেতাকর্মীরা। এধরনের তথ্য দিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে একটি প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্টসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কাছে।
বিএনপি বলেছে, ৫ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া অবরোধ ও হরতালে ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১০৭ জন নিহত হয়েছে। যার মধ্যে ৬৩ জনই বিএনপির ও জামায়াত ইসলামের নেতাকর্মী। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর আক্রমণে আহত প্রায় ৬ হাজার, এখন পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছে ৫১ জন। বিচারবর্হিভ’ত হত্যাকা-কে বিএনপি হত্যা হিসেবে দাবি করেছে এ প্রতিবেদনে।
দলটি দাবি করছে পেট্রোলবোমায় নিহত হয়েছে ৪৪ জন। পেট্রোল বোমা হামলা প্রতিরোধে সরকারের একাধিক মন্ত্রী থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধানরা বুকে গুলি করে হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছে তাদের বাহিনীকে। পেট্রোল বোমা সহ আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর হাতে আটক হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নিহত বিএনপিসহ বিরোধী জোটের নিহত ও আহত নেতাকর্মীদের তালিকায় বলা হয়েছে , গত ৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা দিবসের র্যালি শুরুর পূর্বে নাটরের নবাব সিরাজউদ্দলা সরকারি কলেজের ক্রিয়া সম্পাদক রাকিব মুন্সিকে গুলি করে হত্যা করে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা।
একই দিন গণতন্ত্র হত্যা দিবসের র্যালি শুরুর পূর্বে নাটোরের সিঙ্গার থানা ছাত্র দলের নেতা রায়হান হোসেন রানাকে গুলি করে হত্যা করে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা।
ওইদিন রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বরে পুলিশের গুলিতে মজির উদ্দিন (৪৫) নামে বিএনপির এক কর্মী নিহত হয়। নিহত মজির উদ্দিন চারঘাট উপজেলার মাড়িয়া বিএনপির ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন।
একই দিন শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাটর গোপালনগর মোড়ে পুলিশের গুলিতে বিএনপিকর্মী জমসেদ আলী (৩৫) নিহত হয়।
গত ৭ জানুয়ারি নোয়াখালীর সেনবাগে পুলিশের গুলিতে যুবদল কর্মী মিজানুর রহমান রুবেল আহত হন। পরে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
একই দিন নোয়াখালীর সেনবাগে পুলিশের গুলিতে ছাত্রদল নেতা মহিউদ্দিন বাবুর্চি আহত হয়ে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
গত ১৪ জানুয়ারি লোহাগড়ায় পিকেটিং করতে গিয়ে কার্ভাডভ্যান চাপায় মো. জোবায়ের (২০) নামে শিবির কর্মী নিহত হয়। কিন্ত ছাত্র শিবির থেকে দাবি করা হয়েছে পুলিশ পরিকল্পিত ভাবে তাকে হত্যা করেছে।
ওই দিন নোয়াখালির সোনামুড়ি ইউনিয়ন ছাত্রদল নেতা মোরশেদ আলম পারভেজকে গুলি করে হত্যা করে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী জাকির হোসেন।
গত ১৫ জানুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শ্যামপুর থানা ছাত্রদলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মতিউর রহমানকে র্যাবের কথিত বন্ধুক যুদ্ধে হত্যা করা হয়।
গত ১৮ জানুয়ারি চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ছয়ঘরিয়া গ্রামে সাবেক ইউপি সদস্য ও স্থানীয় বিএনপি নেতা সিরাজুল ইসলাম সিরাজকে (৪৭) বোমা মেরে ও কুপিয়ে হত্যা করে আওয়ামী লীগের কর্মীরা।
এরপর ১৯ জানুয়ারি রাজধানীর মতিঝিলে পুলিশের গুলিতে জামায়াতের সক্রিয়কর্মী, নড়াইল পৌরসভার ১ নাম্বার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. ইমরুল কায়েস (৩৫) নিহত হন।
২০ জানুয়ারি যুবদল নেতা ইসলাম হোসেনকে (৩৬) রাজশাহীতে ট্রাক চাপায় হত্যা করা হয়।
এদিন রাজধানীর খিলগাঁওয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সঙ্গে ক্রসফায়ারে খিলগাঁও থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান জনিকে (৩০) হত্যা করা হয়।
২১ জানুয়ারি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার বিএনপি নেতা জিল্লুর রহমানকে হত্যা করে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা।
এর আগে ২০ জানুয়ারি রাজধানীর খিলগাঁওয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সঙ্গে ক্রসফায়ারে খিলগাঁও থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান জনিকে (৩০) হত্যা করা হয়।
২২ জানুয়ারি ছাত্রদল নেতা মাহাবুবুর রহমান বাপ্পি তার দুলাভাইয়ের বাসায় বোনের সাথে দেখা করতে গেলে বোমা হামলায় নিহত হন ।
২৩ জানুয়ারি কুমিল¬ার দাউদকান্দি উপজেলায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পুটিয়া নামক স্থানে র্যাবের ক্রসফায়ারে ছাত্রদল নেতা সোলাইমান উদ্দিন জিসানকে(২৬) হত্যা করা হয়। নিহত জিসান লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের লতিফপুর গ্রামের মৃত আবু বকরের ছেলে। তিনি জেলা ছাত্রদলের সাবেক পাঠাগার বিষয়ক সম্পাদক।
২৬ জানুয়ারি রাজধানীর রামপুরায় র্যাবের ক্রসফায়ারে বিএনপি সমর্থক আব্দুল কালাম আজাদকে হত্যা করা হয়। তার তিনটি মেয়ে সন্তান রয়েছে।
২৬ জানুয়ারি রাজধানীর রামপুরায় র্যাবের ক্রসফায়ারে বিএনপি সমর্থক সুলতান বিশ্বাসকে হত্যা করা হয়। ২১ জানুয়ারি গাজিপুর থেকে সে নিখোঁজ হয়। তার একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।
২৭ জানুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সিটি কলেজ শাখা শিবিরের সভাপতি আসাদুল¬াহ তুহিন ট্রাক চাপায় নিহত হয়। পরিবার থেকে দাবি করা হয় ২৬ জানুয়ারি ঘুমন্ত অবস্থায় র্যাব তাকে ধরে নিয়ে যায়।
২৭ জানুয়ারি ভোলা চরফ্যাশন ৬ নং ওয়ার্ড ছাত্রদল নেতা হারুনুর রশিদকে হত্যা করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী কামাল হোসেন ও তার দলবল। ঐ সময় রশিদের মা সন্তানকে বাঁচাতে এগিয়ে আসলে তাকেও আহত করে তারা।
একই দিন রাজশাহী নগরীর বিনোদপুর ইসলামিয়া কলেজের শিক্ষক ও জামায়াত কর্মী নুরুল ইসলাম শাহীন (৪৫) পুলিশের ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন। নগরীর মালোপাড়ার নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অফসেট প্রেস থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তাকে আটক করা হয়।
২৯ জানুয়ারি সাতক্ষীরায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুক যুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন আরো একজন। নিহত ব্যক্তির নাম রফিকুল ইসলাম (৩৮)। আগের দিন নওয়াকাটি থেকে পাটকেলঘাটা থানা পুলিশ রফিকুল ইসলামকে গ্রফতার করা হয়।
২৯ জানুয়ারি ময়মনসিংহের নান্দাইলে আসিফ পারভেজ টুকুন (২০) নামে এক ছাত্রদল নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নিহত পারভেজ উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য।
২৯ জানুয়ারি রাজশাহী থানা হাজতে নির্যাতনে পর অচেতন হয়ে পড়লে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিহত হন আইনুর রহমান মুক্তা (৫৫)। মহানগর বি এন পি’র ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
২৯ জানুয়ারি পুলিশের গুলিতে আহত ছাত্র শিবিরের কর্মী মো: সাকিব হাসান ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। সাকিব চট্টগ্রাম লোহাগড়া উপজেলার শিবিরের নেতা ছিলেন।
২৯ জানুয়ারি সদরঘাটে একটি লঞ্চ থেকে ডিবি পরিচয়ে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর দিন ৩০ জানুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে ছাত্রদল নেতা আরিফুল ইসলাম মুকুলের লাশ পাওয়া যায়। মকুল ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে যুবদল নেতা ইমাম হোসেন রুবেলকে পিটিয় হত্যা করে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীরা। নিহত মো. ইমাম হোসেন রুবেল দক্ষিণ বগাচতর স্থানীয় ওয়ার্ড যুবদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
৩০ জানুয়ারি যশোরের চৌগাছা উপজেলা বিএনপির কর্মী আব্দুস সামাদ মোল্লার মৃতদেহ নদীতে ভাসতে দেখা যায়।
৩০ জানুয়ারি ঢাকার মিরপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় পুলিশের ক্রসফায়ারে শিবির নেতা ইমদাদুল নিহত হন।
২ ফেব্রুয়ারি সিরাজগঞ্জ উল্লাপাড়া উপজেলার পুলিশের গুলিতে আহত সাইদুল ইসলাম (৫৫) মারা যান। তিনি উল্লাপাড়া উপজেলা জামায়াতের রোকন।
৩ ফেব্রুয়ারি যশোরের মনিরামপুর যুবদল নেতা ইউসুফ মিয়া ট্রাকের চাপায় নিহত হয় বলে দাবি করে পুলিশ। পরিবার দাবি করে পুলিশ তাদের আটক করে নিয়ে যায়।
৪ ফেব্রুয়ারি খুলনার সরকারি বিএল কলেজের ছাত্রাবাসের একটি কক্ষ থেকে ছাত্রদল নেতা এসকে আবু সাঈদের লাশ উদ্ধার করা।
৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হয় সাখাওয়াত হোসেন রাহাত।
একই দিন কারওয়ানবাজার এলাকায় কাঁচামাল বিক্রেতা জাহিদুল ইসলাম জিহাদকে (২১) রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইল এলাকায় র্যাবের সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়।
এদিন ফেব্রুয়ারি ভাষা নটেক বালুরমাথা এলাকে থেকে বিএনপির সমর্থক আল আমিনের লাশ পাওয়া যায়। পরিবারের দাবি গত ২৮ জানুয়ারি থেকে নিখোঁজ হন আল আমিন।
একই দিন ভাষানটেক থেকে বিএনপির সাবেক মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের আপন ভাগ্নে গাজি মোহাম্মদ নাহিদের গুলিবিদ্ধ লাশ প্ওায়া যায়। পরিবারের দাবি নাহিদকে আটক করে পুলিশ তার পরিবারের কাছে ৫ লাখ টাকা দাবি করে কিন্তু পরিবার তা দিতে না পারায় তাকে হত্যা করে পুলিশ।
ঢাকার মিরপুরে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মনির হোসেন নামে এক যুবক (২৩) নিহত হয়। মনির হোসেনর পরিবারের দাবি গত ৪ ফেব্রুয়ারি মিরপুরের এক মেস থেেেক পুলিশ আটক করে।
৬ ফেব্রুয়ারি বেগমগঞ্জে যুবদল নেতা মো: সোহেলকে গুলি করে হত্যা করে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা।
৬ ফেব্রুয়ারি যশোরে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর একজন কর্মী শহীদুল ইসলাম নিহত হন। পুলিশ তাকে হত্যা করার তিনদিন আগে গ্রেপ্তার করে।
৬ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার চৌদ্দাগ্রাম উপজেলা শিবির নেতা শাহাবুদ্দিন পাটোয়ারিকে ক্রসফায়ারে হত্যা করে পুলিশ।
৬ ফেব্রুয়ারি রাজশাহি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবির নেতা শাহাবুদ্দিন রিপনকে ক্রসফায়ারে হত্যা করে পুলিশ।
একই দিন যাত্রাবাড়িতে জামায়াত নেতাকে না পেয়ে তার মেয়ে সাদিয়াকে হত্যা করে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা।
বিস্তারিত আসছে …