চলমান ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার রেকর্ড হয়েছে। একই সঙ্গে নতুন রেকর্ড হয়েছে বিনা ভোটে ‘প্রথমবার’ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার। গেল চার ধাপসহ মোট পাঁচটি ধাপ মিলিয়ে এমন চেয়ারম্যানের সংখ্যা প্রায় ২০০ জন। এর মধ্যে আগামী ২৮ মে অনুষ্ঠেয় পঞ্চম ধাপের ভোট শুরুর আগেই ৪২ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতরাও আছেন। এদের সবাই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের। প্রথমবার দলীয় মনোনয়ন পেয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান হয়েছেন এদের সবাই। সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটাররা তাদের ‘রাজ কপালী’ ও ‘ছক্কা চেয়ারম্যান’ বলে অভিহিত করছেন।
চার ধাপে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী ১৫২ চেয়ারম্যান: ইউপির অনুষ্ঠিত চারটি ধাপের ভোটে ক্ষমতাসীন দলের ১৫২ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে গেছেন ভোট ছাড়াই। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক চেয়ারম্যান হয়েছেন প্রথম ধাপে। এই ধাপে আওয়ামী লীগের ৫৪ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের ৪৯৪ জন ও বিএনপির ৫০ জন। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন ১০৯ ইউপিতে। দ্বিতীয় ধাপে আওয়ামী লীগের ৩৪ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া ভোটে নৌকা প্রতীকের ৪১৯ জন ও ধানের শীষের ৬৩ জন বিজয়ী হন। ১১৭ ইউপিতে জয় পান স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তৃতীয় ধাপের ভোটে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের ২৯ জন। এই ধাপে ভোটে চেয়ারম্যান হয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের ৩৬৬ জন এবং বিএনপির ৬০ জন। আর স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয় পান ১৩৯ ইউপিতে। সর্বশেষ চতুর্থ ধাপে আওয়ামী লীগের ৩৫ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। আর ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন নৌকা প্রতীকের ৪০৫ জন, ধানের শীষ প্রতীকের ৭০ জন। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হন ১৬১টি ইউপিতে।
পঞ্চম ধাপেও ভোটের আগে ৪২ জন জয়ী: আগামী ২৮ মে অনুষ্ঠেয় পঞ্চম ধাপের নির্বাচনেও ভোটের আগেই ৪২ জন জয়ী হয়ে আছেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। এই ধাপে চূড়ান্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন ৩ হাজার ২৫৪ চেয়ারম্যান প্রার্থী। এর মধ্যে বিএনপির প্রার্থী ৬২৯ জন। আর আওয়ামী লীগের ৭২৬ জন। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির ১৭৭ জন রয়েছেন প্রতিযোগিতায়। বাকি ১ হাজার ৫২৭ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী। ইসির কর্মকর্তারা জানান, আগামী ২৮ মে পঞ্চম ধাপে ৭২৯ ইউপিতে ভোটগ্রহণ হবে। ২১ এপ্রিল ৭৩৩ ইউপির তফসিল ঘোষণা করা হলেও নানা জটিলতার কারণে ৫টি তফসিল থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। ১২ মে এসব ইউপিতে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় পার হয়েছে। ১৩ মে থেকে নির্বাচনী এলাকাগুলোতে প্রচার-প্রচারণা চলছে। এ ধাপে অংশ নেয়া অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জাসদের ২১ জন, ওয়ার্কার্স পার্টির ১৩ জন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ১২২ জন, ইসলামী ফ্রন্টের ১১ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী রয়েছেন।
ভোটের হিসাবেও আওয়ামী লীগের রেকর্ড: এদিকে ভোটের হিসাবেও সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে ক্ষমতাসীনরা। সর্বশেষ অনুষ্ঠিত ইউপির চতুর্থ ধাপের ভোটে বিএনপির ৭ গুণ বেশি ভোট পেয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। ৭০৩ ইউনিয়ন পরিষদে এক কোটি ১৫ লাখ ৫০ হাজার ৮৫৯ ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ৮৯ লাখ ৪৭ হাজার ৭৪০ জন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ পেয়েছে ৪৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ ভোট। বিএনপি ভোট পেয়েছে ১৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ আর স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ভোট পেয়েছেন ৩৩ দশমিক ১৯ শতাংশ। এর আগের ধাপগুলোতেও বিএনপির তুলনায় কয়েকগুণ ভোট বেশি পেয়ে রেকর্ড গড়েছে ক্ষমতাসীন দল।
উল্লেখ্য, চার হাজারেরও বেশি ইউপির মধ্যে ইতিমধ্যে আড়াই হাজারের মতো ইউপির ভোট শেষ হয়েছে। চার ধাপের ভোটে আওয়ামী লীগ মনোনীত ১ হাজার ৮৩৬ জন ও বিএনপির ২৪৩ জন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। আগামী জুনে ষষ্ঠ ধাপ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ইউপি নির্বাচন শেষ হচ্ছে।
Prev Post
Next Post