‘আমাকে রিমান্ডে নিয়ে কি হবে’- এ প্রশ্ন রেখে আদালতে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, ‘সবাই জানে, সারা দুনিয়া জানে, একটি বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসেছে।’
আদালতে তিনি আরও বলেন, ‘আমিতো সবকিছুই বললাম। আমাকে রিমান্ডে নিয়ে কি লাভ হবে? আর যিনি আমাকে রিমান্ডে নেবেন তিনিই বা কি বুঝবেন?’
সশস্ত্র বাহিনীকে বিদ্রোহে উসকানির অভিযোগে গুলশান থানায় দায়ের করা মামলায় ঢাকা মহানগর হাকিম মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মান্নার আইনজীবী মহসিন মিয়া পরে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘রিমান্ডে নিয়ে অযথা আমার মক্কেলকে হয়রানি করা হবে। তিনি ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এ কারণে তাকে হয়রানি করতে রিমান্ডে নেওয়া হচ্ছে।’
অপরদিকে, রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আবু বলেন, ‘মান্নাকে রিমান্ডে নেওয়ার যৌক্তিকতা আছে। তিনি অজ্ঞাত ব্যক্তির সঙ্গে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছেন। ওই অজ্ঞাতের পরিচয় জানতেই রিমান্ড চাওয়া।’
মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য গুলশান থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল বারী বুধবার বিকেলে মান্নাকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। আদালত শুনানি শেষে ১০ দিনের রিমান্ডই মঞ্জুর করেন।
বুধবার বিকেল ৩টা ৫ মিনিটে মান্নাকে ডিবি কার্যালয় থেকে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়।
এর আগে, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম কার্যালয়ে বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এক অনির্ধারিত প্রেস ব্রিফিংয়ে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, দুপুরে মান্নাকে আদালতে পাঠানো হবে।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘মঙ্গলবার মান্নার বিরুদ্ধে সেনাবিদ্রোহে উসকানি ও সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে গুলশান থানায় একটি মামলা হয়েছে। ওই মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। দশ দিনের রিমান্ড চেয়ে তাকে আদালতে পাঠানো হবে।’
মান্নাকে কখন আটক করা হয়েছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে ধানমণ্ডির স্টার কাবাবের সামনে থেকে র্যাব-২ তাকে আটক করে।’
রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে কোন বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হবে— জানতে চাইলে মনিরুল বলেন, ‘মামলায় যে বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে তার সঙ্গে প্রাসঙ্গিক বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’
আইসিটি আইনে মামলা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি তদন্তকারী কর্মকর্তার বিষয়। তদন্তে যদি মনে হয় তবে সেটি তদন্তকারী কর্মকর্তা চিন্তা করবেন।’
এর আগে, মঙ্গলবার ভোরে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে ভাতিজি শাহনামা শারমিনের বনানীর বাসা থেকে মাহমুদুর রহমান মান্নাকে আটক করা হয় বলে দাবি করেন তার স্ত্রী মেহের নিগার। তবে মঙ্গলবার সকালে মান্নাকে আটকের বিষয়টি অস্বীকার করেন মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম।
২১ ঘণ্টা পর বুধবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে র্যাবের একটি প্রতিনিধি দল মান্নাকে গুলশান থানায় নিয়ে যায়। র্যাব দাবি করে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীতে অভিযান চালিয়ে মান্নাকে আটক করেছে তারা। তবে ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মান্না কোথায় ছিলেন বা তাকে ডিবি পরিচয়ে কারা ধরে নিয়ে গিয়েছিল সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
এদিকে, মান্নার ভাইয়ের স্ত্রী বেগম সুলতানা মঙ্গলবার দুপুরে বনানী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
মাহমুদুর রহমান মান্না ও বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকার মধ্যকার ফোনালাপ এবং মান্না ও অজ্ঞাত এক ব্যক্তির ফোনালাপের দুইটি অডিও ক্লিপ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পরই মান্নাকে নিয়ে সারাদেশে তোলপাড় শুরু হয়।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার লক্ষ্যে সেনাবাহিনীকে উৎসাহিত করতে অজ্ঞাত ব্যক্তির সঙ্গে ফাইবারে উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে গুলশান থানায় ২৪ ফেব্রুয়ারি মাহমুদুর রহমান মান্নার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। উপ-পরিদর্শক (এসআই) সোহেল রানা মামলাটি দায়ের করেন।
সেনাবিদ্রোহে উসকানি ও সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে মান্না ফাইবারের মাধ্যমে অজ্ঞাত ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেন। যা ২২ ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
Next Post