শিক্ষা সফর ও ফুল চাষ শিখতে বিদেশ যাবেন ২০ কর্মকর্তা। এ জন্য ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। ফুল গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পে এমন প্রস্তাব দেওয়া হয়। তবে এতে ভেটো দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। গত ২৪ মে প্রকল্পটির ওপর অনুষ্ঠিত হয়েছে পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) সভা। সেখানেই এই ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয় বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বিদেশে প্রশিক্ষণের জন্য দুই ব্যাচে ১০ কর্মকর্তার ব্যয় ধরা হয় ৪ কোটি ৮১ লাখ ৬২ হাজার টাকা। সেই হিসাবে প্রত্যেকের জন্য ব্যয় হওয়ার কথা প্রায় ৪৮ লাখ টাকা। পাশাপাশি দুই ব্যাচে আলাদা ১০ কর্মকর্তার বিদেশে শিক্ষা সফরের জন্য প্রস্তাব করা হয় ২ কোটি ৭১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এতে প্রত্যেকের জন্য ব্যয় ধরা হয় প্রায় ২৭ লাখ টাকা।
পকিল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সারাবাংলাকে বলেন, ‘যেকোনো অপচয় রোধে কাজ হচ্ছে। গত এনইসি বৈঠকেও প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, অহেতুক বিদেশ সফর ও বিদেশ প্রশিক্ষণের দরকার নেই। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনে প্রকল্প প্রস্তাবের খুঁটিনাটি ব্যয় প্রস্তাব খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা অত্যন্ত দক্ষ। তারা এখন মোটা দাগে বরাদ্দ প্রস্তাব অনুমোদন দেয় না। তারা খরচ পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার-বিশ্লেষণ করে তবেই অনুমোদনের সুপারিশ করছে।’
পিইসি সভা সূত্র জানায়, সভায় পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রস্তাবিত ডিপিপিতে বৈদেশিক প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা সফর বাবদ যথাক্রমে ৪ কোটি ৮১ লাখ ৬২ হাজার টাকা ও ২ কোটি ৭১ লাখ ৪০ হাজার টাকা রাখা আছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা সফর বাদ দেওয়া যেতে পারে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে ফুল ও শোভাবর্ধনকারী উদ্ভিদের গবেষণা জোরদারের জন্য ২০২৭ সালের মধ্যে একটি আধুনিক গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করা। দেশীয় ফুল ও শোভাবর্ধনকারী উদ্ভিদের উন্নত জাত, আধুনিক চাষ ও বংশ বিস্তার পদ্ধতি উদ্ভাবন এবং বিদেশি ফুল প্রবর্তনের মাধ্যমে ২০২৭ সালের মধ্যে ফুল ও শোভাবর্ধনকারী উদ্ভিদের উৎপাদন ১০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হবে। পাশাপাশি কার্যকর সংগ্রহোত্তর পদ্ধতি উদ্ভাবনের মাধ্যমে ফুল ও শোভাবর্ধনকারী উদ্ভিদের সংগ্রহোত্তর ক্ষতি ২০২৭ সালের মধ্যে ১৫ শতাংশ হ্রাস করা হবে।
পিইসি সভার কার্যপত্রে পরিকল্পনা কমিশনের মতামত উল্লেখ করে বলা হয়, প্রকল্পটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এ পর্যন্ত তিন বার প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সর্বশেষ তৃতীয় পিইসি সভা হয় ২০২১ সালের ২০ ডিসেম্বর। তৃতীয় পিইসি হওয়ার এক বছর তিন মাস পর গত ১৪ মার্চ পুনর্গঠিত ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) পরিকল্পনা কমিশনে পাওয়া যায়। প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য যে কমিটি করা হয়েছে তার সদস্যদের নাম ও পদবি পাওয়া যায়নি।
বিভিন্ন ব্যয় প্রস্তাবের বিষয়ে বলা হয়, প্রকল্পের আওতায় সেমিনার ও কর্মশালা ৭১ লাখ ৮০ হাজার, প্রচার ও বিজ্ঞাপন ব্যয় ১২ লাখ, সাইনবোর্ড ও ট্যাগগুলো আট লাখ ৮০ হাজার টাকা ব্যয় হবে। এছাড়া অডিও-ভিডিও এবং চলচ্চিত্র নির্মাণ পাঁচ লাখ টাকা, বইপত্র ও সাময়িকী পাঁচ লাখ টাকা, অভ্যন্তরীণ ভ্রমণ ব্যয় ৩০ লাখ টাকা , পেট্রোল ওয়েল লুব্রিকেন্ট ২০ লাখ টাকা, গ্যাস ও জ্বালানি ৩৫ লাখ টাকা, প্রদর্শন খামার এক কোটি টাকা, মুদ্রণ ও বাঁধাই পাঁচ লাখ টাকা, অন্যান্য মনিহারি ১৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং ব্যবহার্য দ্রব্যাদি খাতে ১৭ লাখ টাকা রাখা হয়েছে। এগুলো যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারণ করা যেতে পারে।
এছাড়া প্রস্তাবিত প্রকল্পে আবাসিক ভবন খাতে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য চার তলা সিঙ্গেল একোমোডেশন ভবন বাবদ ৪ কোটি ৬১ লাখ ৯০ হাজার টাকা, বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ বাবদ ৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা এবং প্রধান গেট গেট নির্মাণ বাবদ ৫০ লাখ টাকা রাখা হয়েছে। এসব ব্যয় নিয়েও আলোচনা হয় পিইসি সভায়। এতে সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লি প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) এ কে এম ফজলুল হক।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, কনসালটেন্সি ও পরামর্শক কেন প্রয়োজন সেটির বিষয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। পরামর্শক প্ল্যান প্রণয়ন, ভবন নির্মাণ, গ্রিন হাউজ, কোল্ড হাউজ খাতটি তৃতীয় পিইসি সভার সিদ্ধান্তের বাইরে নতুন করে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রকল্প প্রস্তাবে কিছু ক্রুটি ধরা হয়েছে। এর মধ্যে মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ৪৫ লাখ টাকা রাখা হয়েছে। কিন্তু এটির ব্যয় বিভাজন ডিপিপিতে পাওয়া যায়নি।
প্রস্তাবিত ডিপিপিতে ছয় তলা ফাউন্ডেশনসহ আবাসিক ভবন নির্মাণ এবং ফাউন্ডেশনসহ চার তলা অবকাঠামো রাখা হয়েছে। কিন্তু ডিপিপিতে এই অবকাঠামোগুলোর কোনো ড্রয়িং বা ডিজাইন নেই বলেও জানান সংশ্লিষ্টরা।
সারাবাংলা