সরকারি আদেশের ভুল ব্যাখা দিয়ে বিধি বহির্ভূতভাবে যেসব মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরি ও আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করেছেন কিংবা করছেন তাদেরকে সনাক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিভিল অডিট অধিদপ্তর।
পাশাপাশি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়ে যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকুরির নির্ধারিত সময়ের চেয়ে অতিরিক্ত এক বছর কিংবা আরও বেশি সময় চাকরি করছেন তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, শিগগিরই সরকারের সিভিল অডিট অধিদপ্তরের বিশেষ নিরীক্ষা কর্মসূচি শুরু করে এদেরকে চিহ্নিত করবে।
এরইমধ্যে গত ২৬ আগস্ট সিভিল অডিট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মিয়া মোহাম্মদ শহীদ সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের কাছে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠিয়েছেন।
চিঠিতে,ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের সরকারি বেতন-ভাতা গ্রহণের নিরীক্ষা কার্যক্রম স্বচ্ছ এবং গ্রহণযোগ্য করতে নিরীক্ষাদলকে সর্বাত্মক সহযোগিতা এবং প্রয়োজনে দিক নির্দেশনা প্রদানের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়।
সূত্র জানায়, চিঠিতে মহাপরিচালক উল্লেখ করেছেন, যারা মুক্তিযোদ্ধা ও ৩০ লাখ শহীদের রক্তের সাথে বেঈমানি করছেন তাদের বিষয়টি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে সারা বাংলাদেশে নিরীক্ষা কর্মসূচির আওতায় বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখার জন্য কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, সর্বশেষ মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের ৪ আগস্টের সার্কুলারে বলা হয়, একজন কর্মচারী চাকরিতে প্রবেশের সময়ই যদি নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ঘোষণা না করে থাকেন তাহলে তিনি সাধারণ গণকর্মচারীদের চেয়ে এক বছরের বেশি চাকরি করার সুযোগ পাবেন না।
চিঠিতে বলা হয়, আইন,বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ২০০৪ সালের ১৩ ডিসেম্বরের বিজ্ঞপ্তি দ্বারা মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরির বয়স ২ বছর বৃদ্ধি করা হয়। এ আদেশের ৪ এ(২) ধারায় বলা হয়, যে সকল মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তা-কর্মচারী পিআরএলে (অবসর পরবর্তী ছুটি) আছেন তারাও এই সুবিধা পাবেন।
কিন্তু দেখা যাচ্ছে, বহু মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তা-কর্মাচারী এ আদেশের ভুল ব্যাখা করে বিধি বহির্ভূতভাবে চাকরি ও আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন এবং নিচ্ছেন, যা সম্পূর্ণ অবৈধ। অনেকে অবসরে যাবার পরও এই সুবিধা নিয়ে যাচ্ছেন, যা এ আদেশের ৪ এ(২) ধারার পরিপন্থী।তাই এসব বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হবে।
এছাড়া ২০১১ সালের ৬ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জারিকৃত সর্বশেষ পত্রে এ বিষয়ে বিস্তারিত নির্দেশনা ছিল।তাও অনুস্মরণ করা হবে।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে,ইতোমধ্যে ভুয়া সনদ নিয়ে চাকরি করেছেন এমন অনেক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার নাম পত্রপত্রিকায় মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশ করা হয়েছে।
আর ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়ে চাকুরির বয়স বাড়ানো সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি সরকারের নিরীক্ষা বিভাগের বিশেষ এ নিরীক্ষা (অডিট) কর্মসূচি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে সরকার যে কঠোর অবস্থানে রয়েছে তাও প্রমাণিত হয়েছে।