ভারতের শীর্ষ ধনী গৌতম আদানি চলতি সপ্তাহে পাঁচ হাজার কোটি ডলারের সম্পদ হারিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক বিনিয়োগবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিনডেনবার্গ রিসার্চ দুর্নীতি ও জালিয়াতি নিয়ে এক চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদনের পর আদানি গ্রুপের শেয়ারমূল্যে রীতিমতো ধস নামে।
কিন্তু এ সপ্তাহেই নিউইয়র্কভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হিনডেনবার্গ রিসার্চের বিতর্কিত এক রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পর গৌতম আদানির মালিকানাধীন বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের মূল্যে ধস নামে।তাছাড়া আদানি গ্রিন এনার্জি লিমিটেড ও আদানি টোটাল গ্যাসের মতো কিছু সহযোগী সংস্থা দৈনিক ২০ শতাংশ পতনের সীমা স্পর্শ করেছে।
বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে পাওয়ার জন্য আদানি গ্রুপ এখন যুক্তরাষ্ট্রের ওই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছে।
আদানির দুর্নীতি ও জালিয়াতি নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই অনুসন্ধান করছিল বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিনডেনবার্গ রিসার্চ। দুই বছরের অনুসন্ধানের পর মঙ্গলবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটি।
‘আদানি গ্রুপ : হাউ দ্য ওয়ার্ল্ড’স থার্ড রিচেস্ট ম্যান ইজ পুলিং দ্য লার্জেস্ট কন ইন করপোরেট হিস্ট্রি’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে আদানি গ্রুপের থলের বিড়াল বের করে দেয় হিনডেনবার্গ রিসার্চ।
এই রিপোর্ট এমন সময় সামনে এলো, যখন বাজারে ফের শেয়ার বিক্রি করে তহবিল সংগ্রহের তোড়জোড় চালাচ্ছে আদানি এন্টারপ্রাইজেস। ২০ হাজার কোটি টাকার শেয়ার বাজারে আসবে ২৭ জানুয়ারি। যা বন্ধ হবে ৩১ জানুয়ারি।
আর চাঞ্চল্যকর ওই প্রতিবেদনের জেরেই ভারতীয় ধনকুবের আদানির করপোরেট সাম্রাজ্যে পতনের সুর বেজে ওঠে। বুধ ও বৃহস্পতিবারের পর শুক্রবার সকালেই এই পতনের গতি আরও বেড়ে যায়।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের তথ্যমতে, সবশেষ দুই সেশনে ৫০ বিলিয়ন তথা পাঁচ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের বেশি বাজারমূল্য হারিয়েছে আদানি গ্রুপ।
হিনডেনবার্গ রিসার্চের ওই প্রতিবেদনের জেরেই এশিয়ার শীর্ষ ধনীর ওপর ব্যাপক চাপ তৈরি হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে ব্লুমবার্গ। তার মূল ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আদানি এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের প্রতি আস্থা হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে এরই মধ্যে তারা ২৫০ কোটি ডলারের শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন।
গ্লোবাল সিআইও অফিসের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার গ্যারি ডুগান বলেন, ইস্যুটি ভারতীয় করপোরেট খাতের কেন্দ্রে আঘাত করেছে, যেখানে বেশ কয়েকটি পরিবার-নিয়ন্ত্রিত সংগঠনের আধিপত্য রয়েছে। স্বভাবগতভাবেই তারা অস্বচ্ছ। এ অবস্থায় বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারীদের করপোরেট গভর্নেন্সের বিষয়গুলোতে আস্থা রাখতে হবে।
হিনডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গৌতম আদানির কোম্পানিগুলো কারচুপি করে তাদের শেয়ারদর বাড়িয়েছে। মূলত কোম্পানিতে প্রমোটর বা মালিকের কারসাজিতে স্টকের দাম বাজারে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানো হয়েছে বলে প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদন মতে, অন্য লোকের ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট থেকে প্রচুর শেয়ার কিনে নিজের শেয়ারের দাম বাড়িয়েছে আদানিরা, যা বিনিয়োগকারীদের চোখে ধুলো দেওয়ার সমান। হিনডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদনে প্রকাশ্যেই আদানি গ্রুপকে স্টকে তছরুপ ও হিসাবে জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ করা হয়েছে। মূলত আদানির পাঁচ কোম্পানির নাম রয়েছে এই জালিয়াতির তালিকায়।
হিনডেনবার্গের প্রতিবেদনে আরও বলছে, আদানি গ্রুপের পাঁচ বড় কোম্পানি শেয়ারবাজার থেকে ‘ডি-লিস্টিং’ তথা বাদ পড়তে পারে। এই পাঁচ কোম্পানির শেয়ারে ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত পতন হতে পারে।
বর্তমানে লিকুইডিটি ক্রাইসিস বা নগদের অভাবে ধুঁকছে এই কোম্পানিগুলো। যার ফলে বিপুল ঋণের বোঝা মেটাতে অপারগ আদানি গ্রুপ। সেই কারণেই এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারে কোম্পানি।
গত পাঁচ বছরের উত্থানে ইলন মাস্কের টেসলা ইনকরপোরেশনকেও পেছনে ফেলেছে আদানি এন্টারপ্রাইজ। এমনকি গত সেপ্টেম্বরে কিছু সময়ের জন্য হলেও বিশ্বের শীর্ষ ধনীর তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে আসেন ভারতীয় এ ধনকুবের।
ওই সময় আদানি ও তার পরিবার নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ১৫ হাজার ৪৭০ কোটি ডলার। কিন্তু সাম্প্রতিক পতনের ধাক্কায় ১০ হাজার কোটি ডলারের নিচে নেমে গেছে আদানির সম্পদ।
এই রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পর আদানি গ্রুপের সম্পদের মূল্য ৪৮০০ কোটি ডলার কমে গেছে।
এর ব্যাপক প্রভাবের কারণে শুধু ভারতে নয়, তার বাইরেও এই রিপোর্টের প্রভাব পড়তে পারে।
হিনডেনবার্গ রিসার্চের ওই বিস্ফোরক প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় আদানি গ্রুপ বলেছে, শেয়ার বিক্রির উদ্যোগকে বানচাল করতেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা প্রচারের মাধ্যমে তাদের ভাবমূর্তি নষ্টের চেষ্টা হচ্ছে।
আরও বলা হয়েছে, হিনডেনবার্গের এই প্রতিবেদন ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, গবেষণাবিহীন।’ তারা প্রতিবেদন প্রকাশের বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেবে। উত্তরে হিনডেনবার্গ অবশ্য বলেছে, তাদের প্রতিবেদন পুরোপুরি সঠিক। এর বিরুদ্ধে যে কোনো আইনি পদক্ষেপ হবে অযৌক্তিক।
jugantor