‘রীতিনীতি ভঙ্গ করলে কূটনীতিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে’ বলে জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের দেয়া বক্তব্যে বিদেশি দূতাবাস ও কূটনীতিকদের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের অত্যন্ত বন্ধু ও উন্নয়ন সহযোগী কয়েকটি দেশের কূটনীতিকরা মনে করছেন, নির্দিষ্ট কোনো দেশ বা কূটনীতিকের কথা উল্লেখ না করে ঢালাও বক্তব্যে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কাছে গোটা কূটনীতিক সমাজকেই হেয় করা হয়েছে। জেনেভা কনভেনশন এবং বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি অনুযায়ীই তারা বাংলাদেশে এসেছেন ও অবস্থান করছেন। তাই এ ধরনের কোনো সমস্যা হলে তা সরাসরি তাদের দেশ ও দূতাবাসে জানানোই উভয়ের জন্য ভালো বলেও তারা মনে করছেন। সোমবার জাতীয় সংসদে শেখ সেলিমের বক্তব্য সম্পর্কে গতকাল মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে টেলিফোন করে কয়েকটি দেশের দূতাবাস ও কূটনীতিকরা খোঁজ-খবর নিলে তাদের এ মনোভাবের কথা প্রকাশ পায়। সূত্রের খবর, আঞ্চলিক অনুবিভাগ ও রাষ্ট্রচার অনুবিভাগের কাছে দূতাবাসগুলোর বিদেশি কূটনীতিকরা মূলত জানতে চান, ‘কোন প্রেক্ষাপটে বা কি কারণে বাংলাদেশে কর্মরত সব কূটনীতিককে এককাতারে রেখে সংসদে এ ধরনের বক্তব্য এসেছে।’ যদিও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি নিয়ে ওই কূটনীতিকদের ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। তবে শিগগিরই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি ‘সাধারণ ব্রিফিংয়ের’ আয়োজন করে সামগ্রিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করার আশ্বাস তাদের দেয়া হয়। বিষয়গুলো গতকাল পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সচিবকেও জানানো হয়। শেখ সেলিমের বক্তব্য নিয়ে বিদেশি কূটনীতিকরা যুক্তি দিচ্ছেন, সংসদের মতো স্থানে যেখানে কূটনীতিকদের কথা বলার কোনো সুযোগ নেই, সেখানে কূটনীতিকদের প্রতি সরাসরি এ ধরনের বক্তব্য অনাকাক্সিক্ষত। এদিকে পুরো বিষয়টি দূতাবাসগুলোর পক্ষ থেকে কূটনৈতিক কোরের ডিনকে জানানো হয়েছে বলে কূটনৈতিক সূত্রের খবর। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কয়েকটি অনুবিভাগে বিদেশি দূতাবাসের কূটনীতিকরা টেলিফোন করেন। এদের মধ্যে অন্তত দুইজন রাষ্ট্রদূত রয়েছেন। এছাড়া রাষ্ট্রাচার অনুবিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখাতেও বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নিয়েছেন কয়েকটি দেশের দূতাবাসের কর্মকর্তারা। পশ্চিমা কয়েকটি দেশ দেখাশোনা করেন এমন একটি অনুবিভাগের একজন মহাপরিচালক গতকাল বিকালে এ প্রতিবেদককে জানান, জাতীয় সংসদে শেখ ফজলুল করিম সেলিমের বক্তব্য নিয়ে জানতে আগ্রহী হয়ে আমার কাছে ফোন করেছিলেন একজন রাষ্ট্রদূত। ওই রাষ্ট্রদূত জানতে চান, ‘আসলে শেখ সেলিম কী বিষয়ে কথা বলেছেন। কারণ, পত্রিকায় যতটুকু বক্তব্য এসেছে, তাতে পুরো বিবরণ নেই। সংসদে কী সুনির্দিষ্ট কোনো দেশের ব্যাপারে সুস্পষ্ট কোনো অভিযোগ এসেছে?’ মহাপরিচালক বলেন, ‘রাষ্ট্রদূত জানতে চেয়েছেন, হঠাৎ করে সংসদে তাদের নিয়ে কথা হলো কেন?’ এদিকে একই ধরনের বিষয় নিয়ে অন্য কয়েকটি আঞ্চলিক অনুবিভাগ ও রাষ্ট্রাচার অনুবিভাগের মধ্যম সারির কর্মকর্তাদের কাছে সংশ্লিষ্ট কয়েকটি দূতাবাসের কূটনীতিকরা টেলিফোন করে একই ধরনের বিষয় সম্পর্কে জানতে আগ্রহ দেখিয়েছেন বলেও সূত্রের খবর। বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিকদের শিষ্টাচার মেনে চলার আহ্বান জানান আওয়ামী লীগের সভাপতি-লীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপি। ‘রীতিনীতি ভঙ্গ করলে কূটনীতিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে’ বলে উল্লেখ করে তিনি। জাতীয় সংসদের সোমবারের অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন শেখ সেলিম। বিরোধীদলে না থাকলেও খালেদা জিয়ার সঙ্গে কূটনীতিকদের বৈঠক প্রসঙ্গে আওয়ামী নেতা শে
খ সেলিম বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া কে? হু ইজ খালেদা জিয়া? আলোচনা করলে সরকারের সঙ্গে বা বিরোধীদলের সঙ্গে করেন। এরপরও তার সঙ্গে আলোচনা করলে, কূটনৈতিক রীতিনীতি ভঙ্গের জন্য যা করার করা হবে। বাংলাদেশে কোনো বিদেশি হস্তক্ষেপ চলবে না। বিদেশিরা আমাদের প্রভু না। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিলেন। আমরা আপনাদের কথা শুনি নাই। দেশ স্বাধীন করেছি। দেশের ভালো আমরা বুঝি।’
উৎসঃ আজকের পত্রিকা