গণগ্রেফতারের মধ্যে নির্বাচন

0

pouro electionএক দিকে পৌর নির্বাচনের ডামাডোল, অন্য দিকে দেশজুড়ে চলছে গণগ্রেফতার। মাসাধিককাল ধরে চলা এই গ্রেফতার অভিযানে এ পর্যন্ত ১৩ হাজারের বেশি বিরোধী নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ অভিযান অব্যাহত থাকায় পৌর নির্বাচনের স্বতঃস্ফূর্ততায় ভাটা পড়েছে। জমজমাট নির্বাচনী চিত্রের বদলে সরকারি দলের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি নেতাকর্মীদের তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে গ্রেফতারভীতি। এর ফলে দেড় শতাধিক পৌরসভায় অনানুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা চলছে অনেকটাই একতরফা। শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে থাকতে ইচ্ছুক বিএনপি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে শঙ্কার মধ্যে পড়েছে। নির্বাচন কমিশন এই ইস্যুতে বন্ধ রেখেছে মুখ।

চলতি মাসের ৩০ ডিসেম্বর দেশের ২৩৫টি পৌরসভায় অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন। বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দেয়ার পর থেকে পৌর নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক উত্তাপ বইছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নির্বাচন নিয়ে এখন ব্যস্ত সময় পার করছে। আগামীকাল মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন হওয়ায় একক প্রার্থী চূড়ান্ত করতে দুই দলই মরিয়া। বিএনপির হাইকমান্ড শেষ পর্যন্ত পৌর নির্বাচনের মাঠে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে দিন যত গড়াচ্ছে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে তাদের মধ্যে শঙ্কা ততই বাড়ছে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্পষ্ট করেই বলেছেন, ‘পৌর নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই নেই। গণগ্রেফতার বন্ধ করা না হলে এবং গ্রেফতার হওয়া নেতাকর্মীদের মুক্তি দেয়া না হলে কোনো মতেই নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হবে না এবং সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না।’

অক্টোবরের মাঝামাঝিতে ইসি নির্বাচনের অনানুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়ার পর থেকেই তৃণমূল রাজনীতিতে চাঞ্চল্য তৈরি হয়। সম্ভাব্য প্রার্থীরা নড়েচড়ে বসেন। শুরু হয়ে যায় প্রস্তুতি, দলীয় প্রতীক পাওয়ার তদবির। বিরোধী নেতাকর্মীরাও কেন্দ্রের ‘ইতিবাচক সিগন্যাল’ পেয়ে সক্রিয় হয়ে ওঠেন, তৈরি হয় চাঞ্চল্য। কিন্তু এতে বাদ সাধে গণগ্রেফতার। বিএনপিতে ভালো প্রার্থীর সঙ্কট না থাকলেও অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া গণগ্রেফতার মাঠের পরিবেশ পাল্টে দিয়েছে। নভেম্বরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের ১৩ হাজারেরও বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে জেলা, উপজেলা, পৌরসভা থেকে শুরু করে গ্রাম-ইউনিয়নের নেতাকর্মীরাও রয়েছেন। বহু পৌরসভা বিরোধী নেতাকর্মীশূন্য হয়ে পড়ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর তরফ থেকে ‘ক্রিমিনাল’ ধরা হচ্ছে বলা হলেও গ্রেফতার হওয়া বেশির ভাগ নেতাকর্মীই বিরোধী দলের পদধারী।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী গ্রেফতার অভিযান চলছে। সরকারের কাছে তথ্য রয়েছে, পৌর নির্বাচনকে ঘিরে বিরোধী জোট নতুন বছরকে টার্গেট করে ফের সংগঠিত হওয়ার পরিকল্পনা করছে। এ কারণে তারা যাতে সঙ্ঘবদ্ধ হতে না পারে, সে জন্য গ্রেফতার অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। সর্বশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

বিএনপির স্থানীয় নেতারা অভিযোগ করেছেন, পৌরসভা নির্বাচনে যারা ভোটের মাঠে ফ্যাক্টর, দলীয় প্রার্থী নির্বাচনে যারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন, তাদের বেছে বেছে গ্রেফতার করা হচ্ছে। আবার কাউকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে। বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে হুমকি-ধমকি দেয়া হচ্ছে। সরকার দলীয় স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা তালিকা করে দিচ্ছেন কাকে কাকে গ্রেফতার করতে হবে। এ নিয়ে চলছে গ্রেফতার বাণিজ্যও। ঢাকা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে বিএনপির স্থানীয় নেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা গ্রেফতার আতঙ্কে ভুগছেন। অনেকে এখনো প্রকাশ্যে আসতে ভয় পাচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত থাকায় দেড় শতাধিক পৌরসভায় অনেকটা একতরফাভাবে চলছে প্রচার-প্রচারণা। আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা যেখানে পোস্টার-ব্যানারে পুরো নির্বাচনী এলাকা ছেয়ে ফেলেছেন, সেখানে বিএনপির প্রার্থীরা মাঠে নামারই সাহস পাচ্ছেন না। বিভিন্ন স্থানে প্রার্থীদের ব্যানার-পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। প্রার্থী কিংবা দলের নেতাদের বাড়িতে হামলা হচ্ছে। কোনো কোনো পৌরসভায় বিএনপি প্রার্থীকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের জন্য চাপ দেয়া হচ্ছে। গতকাল জামালপুরের সরিষাবাড়িতে পৌর নির্বাচনের প্রচারণার সময় বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। এতে পাঁচজন আহত হয়েছেন। এ রকম ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে।

নির্বাচন কমিশন গ্রেফতার অভিযানসহ বিরোধী প্রার্থীদের ওপর হামলা ও নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা দানের বিষয়ে মুখ বন্ধ রেখেছে। নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু হওয়ার প্রাথমিক লক্ষণ তাই এখনো ফুটে ওঠেনি।

বিএনপির সিনিয়র নেতারা বলছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপির প্রার্থীদের বিজয় নিশ্চিত। এ কারণে নির্বাচনের মাঠ ফাঁকা রাখতে পরিকল্পিতভাবে বিরোধী নেতাকর্মীদের গণগ্রেফতার করা হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে তারা থাকতে পারবেন কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। কারণ প্রার্থীরা যদি মাঠে নামতে না-ই পারেন এবং কর্মীদের পদে পদে বাধা দেয়া হয়, তাহলে সে নির্বাচন প্রহসন ছাড়া কিছুই নয়।

উৎসঃ   নয়া দিগন্ত
Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More