গভীর রাতে সাদা পোশাকে গুলি চালিয়ে এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছে র‌্যাব

0

হাসপাতালে আবুল কাশেমের মরদেহের পাশে তার স্ত্রী রমিজা বেগম ও চাচাতো বোন নাসিমা বেগম। ছবি: সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলায় সাদা পোশাকে গুলি করে একজনকে হত্যা করেছে র‌্যাব। র‌্যাবের বেপরোয়া বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যক্তির নাম আবুল কাশেম (৬৫)। গভীর রাতে পাশের বাড়ির এক যুবককে সাদা পোশাকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার সময় পরিচয় জানতে চাইলে আবুল কাশেমকে গুলি করে র‌্যাব। এ সময় গুলিতে আহত হয়েছেন হুমায়ুন নামে আরো একজন।

নিহতের পরিবার বলছে, সাদা পোশাকে কয়েকজন পাশের বাড়ির এক যুবককে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন গভীর রাতে। তাদের পরনে ছিল জিন্স প্যান্ট ও টি-শার্ট। যুবটির কান্নাকাটি ও চিৎকার শুনে এগিয়ে যান আবুল কাশেম। জানতে চান তাদের পরিচয়। এক পর্যায়ে নিজেদের র‌্যাবের সদস্য পরিচয় দিয়ে গুলি চালায়। ঘটনাস্থলেই গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটে পড়েন আবুল কাশেম।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুক্রবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে সোনারগাঁয়ের সাদিপুর ইউনিয়নের বরগাঁও চেয়ারম্যান পাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আবুল কাশেম বরগাঁও গ্রামের মৃত কদম আলীর ছেলে।

আবুল কাশেমের স্ত্রী রমিজা বেগম গণমাধ্যমকে বলেন, শুক্রবার গভীর রাতে তার স্বামী প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ঘর থেকে বের হন। এ সময় তিনি বাড়ির পাশে রাস্তায় কয়েকজনের চিৎকার চেঁচামেচির শব্দ শুনতে পান। রাস্তায় গিয়ে আবুল কাশেম দেখেন- পার্শ্ববর্তী বাড়ির সেলিম নামে এক তরুণকে কয়েকজন জিন্স প্যান্ট ও গেঞ্জি পরা ব্যক্তি টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছেন। আর সেলিমের বাড়ির লোকজন কান্নাকাটি করছেন।

তিনি আরও জানান, এসময় আবুল কাশেম তাদের পরিচয় জানতে চাইলে সাদা পোশাকধারীরা ব্যক্তিরা নিজেদের র্যাবের সদস্য পরিচয় দিয়ে তাকে লাঠি দিয়ে আঘাত করেন। এতে আবুল কাশেম মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এ সময় আবুল কাশেম উত্তেজিত হয়ে মাটি থেকে উঠে হৈচৈ করলে সাদা পোশাকধারীরা তাকে গালি দেন। এক পর্যায়ে সাদা পোশাকধারীরা তার পেটে গুলি করেন। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। পরে তার লাশ সোনারগাঁ থানা পুলিশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।

এ ঘটনায় হুমায়ুন কবির (৪৩) নামে আরও একজন আহত হয়েছেন বলে জানান তিনি।

বরগাঁও গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গভীর রাতে গুলির শব্দ পাওয়ার পর স্থানীয়রা এগিয়ে গেলে র‌্যাবের লোকজন তাদের ওপরও গুলি চালায়। এ সময় হুমায়ুন কবিরের পায়ে গুলি লাগে। তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. বাচ্চু মিয়া হুমায়ুন কবিরের গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার সকালে পার্শ্ববর্তী গজারিয়া পাড়া এলাকায় রোজিনা আক্তার নামে এক পোশাক শ্রমিককে গলা কেটে হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ওই এলাকায় অভিযান চালায় র‌্যাব। তবে তাদের পরনে র‌্যাবের পোশাক ছিল না। ফলে এলাকাবাসীর সন্দেহ হয়। এক পর্যায়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে তাদের বাকবিতণ্ডা তৈরি হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গুলি ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

তারা আরও জানান, র‌্যাবের পোশাক পরে এলে তাদের পরিচয় কেউ জানতে চাই তো না। এত সমস্যাও হতো না।

সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন বলেন, রাত সাড়ে তিনটার দিকে গুলিবিদ্ধ এক বৃদ্ধকে হাসপাতালে আনা হয়। পরীক্ষা করে জানা যায়- হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। তার নাভির উপরে একটি বুলেটের চিহ্ন রয়েছে।

র‌্যাব-১১-এর অধিনায়ক তানভীর মুহাম্মদ পাশা বরাবরের মতই বলেন, গত বৃহস্পতিবার ওই এলাকায় এক নারীকে গলা কেটে হত্যার ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে র‌্যাব-১১-এর একটি টিম অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় এলাকাবাসী র‌্যাবের ওপর হামলা করলে আত্মরক্ষার জন্য র‌্যাব গুলি করে। সেখানে আবুল কাশেম গুলিবিদ্ধ হন। এ সময় র‍্যাবেরও ৪ সদস্য আহত হয়েছেন বলে দাবী করেন তিনি।

উৎসঃ   আমার দেশ
Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More