গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রভাব: আবার ঊর্ধ্বমুখী মূল্যস্ফীতি

0

গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রভাবে বেড়েছে সব ধরনের পণ্যমূল্য। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে মূল্যস্ফীতির হারে। টানা পাঁচ মাস এ হার নিুমুখী থাকার পর এখন আবার ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৭১ শতাংশ। যা জানুয়ারিতে ছিল ৬ দশমিক ১৭ শতাংশ। রমজানের আগে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় মূল্যস্ফীতির হারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। রজমান ও ঈদের কারণে আগামীতে এ হার আরও বাড়তে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদরা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) কনজুমার প্রাইস ইনডেস্ক (সিপিআই) প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। রোববার এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সাম্প্রতিক সময়ে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ফলে প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। এতে খাদ্যপণ্যের মূল্য বেশি বেড়েছে। এ কারণে জাতীয়ভাবে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে হয়েছে ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ, যা তার আগের মাসে ছিল ৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ। তবে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি সামান্য কমে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৮২ শতাংশে, যা জানুয়ারিতে ছিল ৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ। মূলত খাদ্যের দাম বাড়ায় এ খাতের মূল্যস্ফীতির হারও বেড়েছে। এতে বিশেষ করে স্বল্প আয়ের মানুষের ভোগান্তি আরও বাড়বে।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, মূল্যস্ফীতি এখনো সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। যেটুকু বেড়েছে সেটি স্বাভাবিক। এ নিয়ে ভাবনার কিছু নেই। কেননা আমাদের চেয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনেক বেশি মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। যেমন জিম্বাবুয়েতে বর্তমানে ৩০০ শতাংশ মূল্যস্ফীতি। পাকিস্তানে ৪০-৪৫ শতাংশ মূল্যস্ফীতি রয়েছে। সেখানে আমাদের মূল্যস্ফীতি খুব বেশি নয়। আশার কথা, গত কয়েক মাস থেকে মূল্যস্ফীতি ক্রমাগত কমছে। কিছু পণ্যের দাম বাড়বে আর কিছু কমবে, এসব মিলে গড় করেই মূল্যস্ফীতির হিসাব করা হয়। তবে বর্তমানে পেঁয়াজ ও শাক-সবজির দাম কিছুটা কমেছে। তবে এবার ফিডসহ উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে। তিনি আরও বলেন, রমজানে বাড়তি চাহিদার কারণে ছোলা, বেগুন, খেজুরসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ে। কিন্তু এবার রমজানের পণ্যের যথেষ্ট আমদানি করা হয়েছে। এলসিও যথেষ্ট খোলা হয়েছে। কাজেই রমজানে বাজার স্থিতিশীল ও ভারসাম্য বজায় থাকবে।

সূত্র জানায়, গত বছর আগস্টে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে উঠেছিল। এরপর থেকে এ হার কমতে থাকে। সেপ্টেম্বর থেকে ধারবাহিকভাবে জানুয়ারি পর্যন্ত কমেছে। ফেব্রুয়ারিতে এসে এ হার আবার ঊর্ধ্বমুখী হলো। আগামী কয়েক মাস এ হার আরও বাড়তে পারে। কেননা রোজা ও ঈদের কারণে সব ধরনের পণ্যের চাহিদা বাড়বে। একই সঙ্গে এ সময় টাকার প্রবাহও বাড়বে। এতে পণ্যমূল্য বাড়ার আশঙ্কাও রয়েছে। এসব মিলে মূল্যস্ফীতির হারও বাড়তে পারে। আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) আশঙ্কা, চলতি অর্থবছরের মধ্যে এ হার বেড়ে ৯ শতাংশে চলে যেতে পারে।

এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, সব ক্ষেত্রেই মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। জাতীয়ভাবে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি যেটুকু কমেছে সেটিকে কম বলা চলে না। তবে মূল্যস্ফীতি বাড়ার দুটো প্রভাব হতে পারে। একটি হচ্ছে, রমজানের আগের মাসে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে। দ্বিতীয়টি হলো-গত দুই মাসে সরকার বিদ্যুতের দাম ১৫ দশমিক ৬ শতাংশ বাড়িয়েছে। এতে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত উভয় ক্ষেত্রেই সরবরাহ চেইনে প্রভাব ফেলেছে। সেইসঙ্গে বাণিজ্যিক ও শিল্পের ক্ষেত্রে গ্যাসের দামও বাড়ানো হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে।

তিনি আরও বলেন, সরকার ইতোমধ্যেই এমন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি যে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে। বরং সরকারের কার্যক্রম মূল্যস্ফীতিকে উসকে দিয়েছে। কেননা সরকার বাজেট ঘাটতি পূরণের জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে। ফলে বাজারে মুদ্রা সরবরাহ বেড়ে মূল্যস্ফীতি বাড়িয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ব্যাংকে তারল্য ঢালছে সরকার। পাশাপাশি রিফাইন্যান্সিং এ নতুন করে অর্থায়ন করা হচ্ছে। ফলে এগুলো সবই সম্প্রসারণমুখী মুদ্রানীতির কার্যক্রম। তবে কিছু ক্ষেত্রে সরকার করছাড় দিয়েছে। কিন্তু তার সুবিধা পেয়েছে মূলত বিক্রেতারা। ক্রেতাদের কাছে সেই সুবিধা পৌঁছেনি।

বিবিএস’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফেব্রুয়ারিতে শহরের পাশাপাশি গ্রামেও বেড়েছে মূল্যস্ফীতি। এক্ষেত্রে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৮০ শতাংশ, যা জানুয়ারিতে ছিল ৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এ সময় খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ৮ দশমিক ১৯ শতাংশ, যা তার আগের মাসে ছিল ৭ দশমিক ৯২ শতাংশ। তবে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৯৮ শতাংশে, যা জানুয়ারিতে ছিল ১০ দশমিক ১২ শতাংশ।

এদিকে শহরে সব ক্ষেত্রেই মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে। ফেব্রুয়ারিতে শহরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ, যা জানুয়ারিতে ছিল ৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ। খাদ্য পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ৭ দশমিক ৯৮ শতাংশ, যা তার আগের মাসে ছিল ৭ দশমিক ৪১ শতাংশ। এছাড়া খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতিও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৬১ শতাংশে, যা জানুয়ারিতে ছিল ৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ।

সূত্র জানায়, টানা পাঁচ মাস কমার পরে ফেব্রুয়ারিতে দেশে মূল্যস্ফীতি আবার বেড়েছে। এর আগে গত বছর আগস্টে মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছিল ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির ওই হার ছিল তার আগের ১১ বছর ৯ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১১ সালের মে মাসে সর্বোচ্চ ১০ দশমিক ২০ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছিল। ২০১১ সালের মে মাসের পর মূল্যস্ফীতি আর কখনো ৯ শতাংশের বেশি হয়নি।

jugantor

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More