গ্যাস সঙ্কট কাটানোর চেষ্টা চলছে: সংসদে প্রধানমন্ত্রী

0

hasinaশীতের প্রকোপে গ্যাস জমে যাওয়ায় ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, গাজীপুরসহ বিভিন্ন অঞ্চলে গ্যাসের ফ্লো অনেকটা কমে গেছে বলে দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা। তবে এই সঙ্কট কাটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও আশ্বস্ত করেছেন তিনি।
জাতীয় সংসদের অধিবেশনে বুধবার জিয়াউদ্দিন আহমেদের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এই তথ্য জানিয়ে বলেন, সাধারণত শীতকালে গ্যাস অনেকটা জমে যায়, ফ্লোটাও কমে যায়। সে জন্য শীতকালে গ্যাসের সমস্যাটা দেখা যায়। এছাড়া শীতকালে গ্যাসের ব্যবহারটাও বেড়ে যায়। তিনি বলেন, রান্নার কাজে ব্যবহারের জন্য এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডারের ওপর থেকে ট্যাক্স তুলে দেয়া হয়েছে। বিনিয়োগকারীরা যাতে আসে তার ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে। সঙ্কট কাটাবার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
গ্যাস সঙ্কট সমাধানে অনেকগুলো নতুন কূপ খনন করা হচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বাপেক্সকে শক্তিশালী করা হয়েছে। গ্যাস অনুসন্ধানও চলছে। সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য ব্লক চিহ্নিত করা হয়েছে। টেন্ডার দেয়া হয়েছে। গ্যাসের সমস্যা সমাধানে যথেষ্ট পদক্ষেপ নেয়ার পরও কিছু সমস্যা আছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্যাস একটা প্রাকৃতিক সম্পদ এর একটা সীমাবদ্ধতা আছে। আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর গ্যাসের উৎপাদন অনেক বৃদ্ধি হয়েছে। তবে দেশে যেহেতু উন্নয়ন হচ্ছে সেকারণে গ্যাসের চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর বিকল্প হিসেবে সরকার এলএমজি আমদানি করার ব্যবস্থা নিয়েছে। এরইমধ্যে এলএমজির টার্মিনাল নির্মাণ করা হচ্ছে। এটা নির্মাণ করার পর বাইরে থেকে যদি আমরা গ্যাস আনতে পারি, হয়তো বা আমরা এই সমস্যার সমাধান করতে পারবো।
পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন নিয়ে যারা ষড়যন্ত্র করেছে তাদের বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন কি না মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনের এমপি সাগুফতা ইয়াসমিনের এমন সম্পূরক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কেউ যদি ব্যক্তি স্বার্থের জন্য দেশের সর্বনাশ করতে চায়, আর দেশের মানুষের স্বার্থ না দেখে তাদের প্রতি করুণা করা ছাড়া আর কিছুই নাই। এটা ঠিক কোন ব্যক্তি বিশেষ তার ব্যক্তি স্বার্থের কারণে করেছে। আমাকে অনেক সময় অনেক থ্রেটও করা হয়েছিলো। বিশেষ এক ব্যক্তির ব্যাপারে। এমডির পদ না থাকলে পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করা হবে-এটা কিন্তু সরাসরি বলাও হয়েছে। এ ধরণের বহু কথাই আমাকে শুনতে হয়েছে। সেগুলো আমি কিছু বলতে চাই না। মানুষের মাঝে যদি দেশপ্রেম না থাকে, জনগণের প্রতি তাদের যদি কোন দায়িত্ববোধ না থাকে সম্পূর্ণ ব্যক্তি স্বার্থেই অন্ধ থাকে তার বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া যাবে তা জনগণই বিচার করবে। আমি বিচারের ভার জনগণের হাতে ছেড়ে দিলাম। ঢাকা-৬ আসনের সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদের সম্পূরক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, পদ্মা সেতুতে টাকা বাড়তে পারে আবার টাকা বেঁচেও যেতে পারে।
ফখরুল ইমামের এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সততাই শক্তি, সততাই সাহস। আমার জীবনে রাজনীতির একটাই লক্ষ্য, যে মানুষের জন্য বঙ্গবন্ধু সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন এই মানুষের অর্থনৈতিক পরিবর্তনের জন্য পদক্ষেপ নেব। ছোটবেলা থেকে আমরা যা দেখেছি সন্তান হিসেবে তা আমাদের পালনীয়। আমি মনে করি, জনগণের জন্য কিছু করার সুযোগ রয়েছে। নিজে কি পেলাম সেটা কখন দেখি না। আমরা কখনও এটা চিন্তা করি না, ছেলে-মেয়েদের জন্য কি রেখে গেলাম। জনগণের চিন্তা করি বলেই জনগণই আমার শক্তি। এদেশের মানুষের শক্তিতেই আমার শক্তি। তাদের ওপর আমার আস্থা আছে।  আলী আজমের লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বর্তমান সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার সফলতায় ২০১৫ সালে মোট ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৮৮১ জন বাংলাদেশি কর্মী গমন করেছে। বিগত জোট সরকারের অপনীতির কারণে বাংলাদেশের শ্রম বাজার সংকুচিত হয়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের সফল কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় মালয়েশিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যেও বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তিসহ বিভিন্ন চুক্তি সম্পাদন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ফলে প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে কর্মী প্রেরণের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিগত জোট সরকারের আমলে বিশ্বের মাত্র ৯৭টি দেশে কর্মী প্রেরণ করা হত। বতর্মান সরকারের আমলে নতুন আরো ৬৩টি দেশে কর্মী প্রেরণসহ বর্তমানে এই সংখ্যা ১৬০টি দেশে উন্নীত করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ২০১৩ সালে মোট ৪ লাখ ৯হাজার ২৫৩জন, ২০১৪ সালে মোট ৪ লাখ ২৫ হাজার ৬৮৪জন এবং ২০১৫ সালে মোট ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৮৮১ জন বাংলাদেশী কর্মী গমন করেছে। বিদেশে অদক্ষ শ্রমিকের তুলনায় দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা বেশী। এক্ষেত্রে বিদেশগামী শ্রমিকদের দক্ষতার উপর গুরুপ্ত দিয়ে বর্তমানে দেশে ৬৫টি টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার ও ৬টি মেরিন টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে দক্ষ শ্রমিক তৈরি করা হচ্ছে। পাশাপাশি উপজেলা পর্যায়ে টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার স্থাপনের  উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সংসদ নেতা বলেন, নতুন শ্রম বাজার সৃষ্টির লক্ষ্যে বিদেশস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে বিদ্যমান শ্রম উইংয়ের সংখ্যা ১৬ থেকে ২৮’এ উন্নীত করা হয়েছে। এছাড়াও আমাদের সফল কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলে সৌদি আরব এবং মালয়েশিয়ায় অবৈধ ১০ লাখ ৬৭ হাজার ৮০৩ জন অভিবাসী বাংলাদেশী শ্রমিকের বৈধতা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অন্যদিকে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলে সৌদি আরব অধিক সংখ্যক নারী কর্মীর পাশাপাশি তাদের নিকট আত্মীয় সমসংখ্যক পুরুষ কর্মী নিতে সম্মত হয়েছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More