অবশেষে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনুর ডিএনএ প্রতিবেদন পাচ্ছে মেডিকেল বোর্ড। আজ-কালের মধ্যে ওই প্রতিবেদন দ্বিতীয় ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকদের কাছে হস্তান্তর করবে তদন্ত সংস্থা সিআইডি। এর আগে রোববার ওই প্রতিবেদন মেডিকেলে বোর্ডের কাছে দিতে সিআইডিকে নির্দেশ দেন আদালত। এর মধ্যদিয়ে ডিএনএ প্রতিবেদন নিয়ে সিআইডি ও ডাক্তারদের মধ্যকার টানাপড়েনের অবসান হলো। ডিএনএ প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে চলতি সপ্তাহেই তনুর দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।[ads1]
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, কুমিল্লার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মুস্তাইন বিল্লাহর আদালতে এ সংক্রান্ত একটি আদেশ রোববার রাতেই আদালত থেকে কুমিল্লা সিআইডি কার্যালয়ে পৌঁছে দেয়া হয়। আদালত সিআইডি ঢাকার ফরেনসিক বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার ও তনু হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে নিহতের দাঁত ও সোয়াব পরীক্ষার আলাদা-আলাদা প্রতিবেদন সরবরাহ করার নির্দেশ দেন।
এদিকে ময়নাতদন্ত বোর্ডের প্রধান ডা. কামদা প্রাসাদ সাহা গতকাল বিকেলে সাংবাদিকদের জানান, আদালত আমাদেরকে ডিএনএ প্রতিবেদন দিতে আদেশ দিয়েছে বলে শুনেছি, এ সংক্রান্ত কোনো কাগজ এখনো তদন্তকারী কর্মকর্তা কিংবা আদালত আমাদেরকে সরবরাহ করেনি। জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির দেয়া লিগ্যাল নোটিশের জবাব চূড়ান্ত করা হয়েছে, তা শিগগিরই ডাকযোগে পাঠানো হবে।
অন্যদিকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কুমিল্লা সিআইডির পরিদর্শক গাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম জানান, ডিএনএ প্রতিবেদন মেডিকেল বোর্ডকে সরবরাহ করতে আদালত আদেশ দিয়েছেন, তাই আদালতের নির্দেশনা অনুসারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।
গত ১৬ মে সিআইডির ডিএনএ রিপোর্টে তনুকে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যাওয়ার খবরে ওই প্রতিবেদনটি পেতে মেডিকেল বোর্ড আরো তৎপর হয়ে ওঠে। এ নিয়ে চলে দফায় দফায় চিঠি চালাচালি। কিন্তু গত ১৯ মে তনুর ডিএনএ প্রতিবেদন আদালতের মাধ্যমে নেয়ার জন্য মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক গাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম দ্বিতীয় ময়নাতদন্তকারী বোর্ডকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেন। কিন্তু ফরেনসিক বিভাগকে ডিএনএ প্রতিবেদন দেয়ার বিষয়ে রোববার বিকেলে আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে দীর্ঘ দুই মাসেরও বেশি সময় ঝুলে থাকা তনুর দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশে আর কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।[ads2]
আদালতের এ আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ডিএনএ প্রতিবেদন হাতে পেলে ঝুলে থাকা দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন চলতি সপ্তাহের যে কোনো দিন দেয়া হতে পারে বলে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক বোর্ড সূত্রে জানা গেছে।
২০ মার্চ রাতে কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকায় নিজের বাড়ির কয়েকশ’ গজের মধ্যে পাওয়া যায় ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী তনুর ক্ষত-বিক্ষত লাশ। পর দিন ময়নাতদন্তের পর তনুকে তার মুরাদনগর উপজেলার মির্জাপুরে দাফন করা হয়। এক পর্যায়ে প্রথম ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন প্রকাশ করে চিকিৎসকরা দাবি করেন, ধর্ষিত হননি তনু। তার মৃত্যুর সুনির্দিষ্ট কারণও ময়নাতদন্তে মেলেনি। এ নিয়ে স্বজনসহ বিভিন্ন মহলে তীব্র সমালোচনা দেখা দিলে পুলিশের চাহিদায় তনুর লাশের দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেন আদালত।[ads2]
অপরদিকে কলেজ ছাত্রী তনু হত্যাকাণ্ড নিয়ে দেশজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে ২৫ মার্চ তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় ডিবির কাছে। কিন্তু খুনি শনাক্ত ও গ্রেফতার না হওয়ায় থানা পুলিশ ও ডিবির হাত ঘুরে ২৯ মার্চ দেশজুড়ে আলোচিত এ মামলার তদন্তভার দেয়া হয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি)। এরপর থেকে চাঞ্চল্যকর এ মামলাটি তদন্ত করছে সিআইডি।
Next Post