বেফাঁস মন্তব্য করায় চাপের মধ্যে আছে বর্তমান সরকারের তিন মন্ত্রী। খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ও মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজ্জাম্মেল হক বিচারাধীন বিষয় নিয়ে মন্তব্য করায় যেমন চাপে রয়েছেন ঠিক তেমনি চাপে পড়েছেন বর্ষবরণে নারী লাঞ্ছনার ঘটনায় আপত্তিকর মন্তব্য করে নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান।
এরই মধ্যে ওই তিন মন্ত্রী তাদের বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিয়েছে বলে একটি বিশেষ সূত্রে জানা গেছে। তবে দলীয় সূত্রে জানা গেছে এমন বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে আসন্ন কাউন্সিলে তাদের সাংগঠনিক ভাগ্য নির্ধারণ হতে পারে।
দীর্ঘদিনেও মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রকাশ না করতে পারা এবং মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা বিদেশি বন্ধুদের দেয়া স্বর্ণের ক্রেস্ট জালিয়াতির কারণে বিশেষ চাপ সইতে হচ্ছিল তাকে।এরই মধ্যেই খাদ্যমন্ত্রীর সুরে বিচার বিভাগ নিয়ে মন্তব্য করে ফেঁসেছেন তিনি।এই দুই মন্ত্রীর মন্তব্য যুদ্ধাপরাধ বিচারকেই প্রশ্নবিদ্ধ করবে বলে অনেকে মনে করছেন।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বিরোধী পক্ষকে ঘায়েল করে বরাবরই আলোচনায় থাকতে চান। বিশেষ করে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া, তারেক রহমান এবং যুদ্ধাপরাধ প্রসঙ্গ টেনে বিভিন্ন সময় নানা মন্তব্য করে সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন তিনি। তবে গম কেলেঙ্কারি নিয়ে গত বছর ব্যাপক সমালোচনায় পড়তে হয় তাকে। এ কারণে সে সময় সরকারকেও চরম অস্বস্তিতে পড়তে হয়। গম বিতর্ক ধামাচাপা দিতে না দিতেই এবার বিচার বিভাগ নিয়ে মন্তব্য করে আবারো সমালোচনায় পড়েছেন তিনি।
যুদ্ধাপরাধ বিচার যে সময় বিশেষ গতি পেয়েছে সেই সময় কামরুলের এমন মন্তব্য সবাইকে বিব্রত করেছে বলে জানা গেছে। অবাক হয়েছে খোদ বিচার বিভাগও। সরকারের অনেকেই তার এই মন্তব্যে ক্ষুব্ধ। প্রকাশ্যে কিছু না বললেও দলীয় ফোরামে অনেকেই তার ব্যাপারে নেতিবাচক মন্তব্য করছেন বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।
আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক এ প্রসঙ্গে বলেন, আমি যখন আইনজীবী ছিলাম তখন সাব জুডিস ম্যাটারে (বিচারাধীন বিষয়) কখনো কোনো মন্তব্য করিনি। এখন দেশের আইনমন্ত্রী। আজ সাব জুডিস ম্যাটারে কোনো মন্তব্য করলে দেশে একটা ব্যাড প্রিসিডেন্ট হয়ে দাঁড়াবে। সে জন্য আমি মন্তব্য করব না। আমি এটুকু বলতে পারি যার যার ব্যক্তিগত মতামত ওনারা মতামত প্রকাশ করতে পারবেন।
তিনি আরো বলেন, মামলাটা আদালতে বিচারাধীন। আমি দেশের আইনমন্ত্রী হয়ে যদি কোনো হ্যাঁ বা না বলি, তাহলে মামলার ওপর এর প্রভাব পড়বে। সারা বিশ্বে এটা নিয়ে কথা বলবে, একটা আলোড়ন তৈরি হবে। তবে দুই মন্ত্রী বিচারধীন বিষয় নিয়ে কেন এমন মন্তব্য করলেন তা আমার বুঝে আসে না।
এদিকে, বর্ষবরণে নারী লাঞ্ছনার ঘটনায় মন্তব্য করে সমালোচনার মুখে পড়েছেন নৌমন্ত্রী শাজাহান খানও। যদিও তিনি তার ওই মন্তব্য পরবর্তীতে প্রত্যাহার করেছেন। চালককদের লাইসেন্স দেয়া নিয়ে মন্তব্য করে তিনিও এর আগে ব্যাপক সমালোচনায় পড়েন।
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিন বলেন, তিন মন্ত্রীর এমন মন্তব্য সবাইকে অবাক করেছে। সরকারও বিব্রত। গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে যদি নিজেদের দায়িত্বের কথা ভুলে যান, তাহলে সরকারের প্রতি মানুষের আস্থা কমে যায়। এমন মন্তব্য কারো জন্যই প্রত্যাশিত নয়।
Next Post