জাল টাকার নোট যেন লাগাম ছাড়া পাগলা ঘোড়া। কোন ভাবেই যেন সেই পাগলা ঘোড়ার লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হচ্ছে না। জাল নোট প্রতিরোধে ব্যাংকিং খাতের নেয়া কৌশল আর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চলমান তৎপরতাতেও থেমে নেই জাল নোটের কারবারী চক্র। নিত্য-নতুন কৌশল আর আইনের ফাঁকফোকর গলিয়ে এই চক্র চালিয়ে যাচ্ছে তাদের জালিয়াত।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৪ সালের জুন থেকে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত ৫৪, ৮৭, ০০০ লাখ টাকার জাল নোট ধরা পড়ে। বছরজুড়ে মামলা হয় ১৫৭টি। আর বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে প্রতিনিয়ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে জমা পড়ছে জাল নোটের তোড়া।
তবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়িয়ে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন হাজারো মানুষ। প্রযুক্তি ও শিক্ষাগত দুর্বলতার দরুণ শহরের তুলনায় গ্রামের মানুষই বেশি প্রতারিত হচ্ছে এই চক্রের মাধ্যমে।
জাল নোটের ছড়াছড়ির কারণে মাঝে মধ্যে ব্যাংকের এটিএম বুথেও এমন নোট পাওয়ায় বিপাকে পড়ছেন গ্রাহকগণ। অনেক সময় ব্যাংকের ক্যাশ কাউন্টার থেকে তোলা টাকার বান্ডিলেও পাওয়া যায় জাল টাকার নোট।
সম্প্রতি টাঙ্গাইলের বিভিন্ন উপজেলাতে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে সোনালী ব্যাংক মির্জাপুর শাখার সিলমোহর যুক্ত ১০০০ টাকার জাল নোট। সোনালী ব্যাংকের এমন সিলমোহর যুক্ত জাল টাকার নোটে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
বিশেষ করে জেলার মির্জাপুর, ঘাটাইল, মধুপুর, সখিপুর ও ভূঞাপুরের বিভিন্ন স্থানে পাওয়া যাচ্ছে জাল টাকার নোট।
এবিষয়ে ঘাটাইল বাসস্ট্যান্ড এলাকার হার্ডওয়ার ব্যবসায়ী রিপন জানান, বাজারে জাল টাকার ছড়াছড়ি। আর এসব টাকার মধ্যে ব্যাংকের সিল দেয়া থাকলে আসল না নকল তা যাচাই করা কঠিন হয়ে পড়ে। জাল টাকা হাতে পেলেও আইনগত হয়রানি এড়াতে ক্ষতির সম্মুখীন হলেও তা নষ্ট করে ফেলি।
সোনালী ব্যাংকের মির্জাপুর শাখায় টাকা জমা দিতে গিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন মির্জাপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র এ্যাডভোকেট মোশারফ হোসেন মনি।
তিনি বলেন, বেশ কিছুদিন পূর্বে টাকা জমা দিতে সোনালী ব্যাংকের মির্জাপুর শাখায় যাই। এসময় ম্যানেজার ব্যাংকের পিয়নের মাধ্যমে কাউন্টারে টাকা জমা দেয়ার ব্যবস্থা করেন। পিয়ন টাকা নিয়ে ক্যাশ কাউন্টারে যাওয়ার বেশ কিছুক্ষণ পর আমাকে জানানো হয় যে আমার ওই বান্ডিলের ভিতর কয়েকটি জাল টাকার নোট পাওয়া গেছে। এমন খবরে আমি হতবাক এবং উত্তেজিত হয়ে পড়ি। কারণ আমার বান্ডিলে যে টাকাগুলো জাল দেখানো হয় প্রকৃত পক্ষে আমার বান্ডিলে তা ছিলো না।’
‘আমার টাকাগুলি ছিল পুরাতন আর ওই টাকাগুলো নতুন এবং চকচকে। যা আসল টাকাকেও হার মানিয়ে যায়। আমি মনে করি জাল টাকার সাথে ওই শাখার কিছু অসাধু লোক জড়িত রয়েছে।’
এব্যপারে সোনালী ব্যাংক মির্জাপুর শাখার ব্যবস্থাপক ফখরুল ইসলামের মুঠোপোনে জানতে চাইলে তিনি মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, ‘আসুন সামনা সামনি কথা বলি।’