মুক্তিযুদ্ধের উপঅধিনায়ক ও সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এ কে খন্দকার তার রচিত বই ‘১৯৭১: ভেতরে বাইরে’তে মন্তব্য করেছেন, মেজর জিয়ার ঘোষণাকে কোনোভাবেই স্বাধীনতার ঘোষণা বলা চলে না।
এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বইটির ৬০ পৃষ্ঠায় এ কে খন্দকার লিখেছেন, মেজর জিয়ার ঘোষণাটিকে কোনোভাবেই স্বাধীনতার ঘোষণা বলা চলে না। মেজর জিয়া রাজনৈতিক নেতা ছিলেন না বা ঘোষণা দেওয়ার মতো উপযুক্ত ব্যক্তিও ছিলেন না। যে ঘোষণা চট্টগ্রাম বেতার থেকে তিনি দিয়েছিলেন ঠিক একই ধরনের একাধিক ঘোষণা ২৬ ও ২৭ মার্চ চট্টগ্রাম বেতার থেকে বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক ও ছাত্রনেতাও দিয়েছিলেন, এমন কি বেতারকর্মীরাও একই ধরনের ঘোষণা দিয়েছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ২ সেপ্টেম্বর বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডির বেঙ্গল শিল্পালয়ে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশ বাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ এ কে খন্দকারের (বীর উত্তম) ১৯৭১: ভেতরে বাইরে বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠান হয়। বইটি প্রকাশিত হয় প্রথমা প্রকাশন থেকে।
বইতে এ কে খন্দকার লিখেছেন, ‘ধ্বংসযজ্ঞ শুরু হওয়ার ঠিক আগে শেখ সাহেব ইপিআরের বেতারযন্ত্রের মাধ্যমে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরীর কাছে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠিয়েছিলেন। এই তথ্যটি মোটেই বিশ্বাসযোগ্য নয়।’ (পৃ. ৫৭)
একে খন্দকার এ বিষয়ে প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদেরও উদ্ধৃতি দিয়েছেন : ‘একদিন আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম ‘স্যার, বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হওয়ার আগে আপনি কি তাঁর কাছ থেকে কোন নির্দেশনা পেয়েছিলেন?’ উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ‘না, আমি কোন নির্দেশ পাইনি’ (পৃ. ৪৩)।
বইটির ৫৩ পৃষ্ঠায় তিনি লিখেছেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ব্যক্তি স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে নানা কথা বলেন। সেগুলো সত্য কী অসত্য, তা জানার উপায় নেই। এগুলোর পক্ষে বা বিপক্ষে কেউ কোন দলিল উপস্থাপন করেননি। আমার মনে হয়েছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা আবেগপ্রসূত।’
৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে এ কে খন্দকার লিখেছিলেন, বঙ্গবন্ধু ‘জয় পাকিস্তান’ বলেছেন।
সেসময় নিজের লেখার পক্ষে যুক্তি দিয়ে একে খন্দকার বীর উত্তম বলেছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি যা দেখেছি তা-ই লিখেছি। সত্য প্রকাশে অনড় হতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের সময় গৃহীত পরিকল্পনার সঙ্গে সব কিছু খাপ খায়নি। শুরুতে যখন গেরিলা যোদ্ধা নেয়া শুরু হয় তখন একটি দল থেকেই নেয়া হয়েছিল। কিন্তু পরে দেখা গেল তারা যথেষ্ট পরিমাণে যোগ্য নন। পাঁচ মাস পর যোগ্যতার ভিত্তিতে গেরিলা নিয়োগ শুরু হয়।
প্রকাশনার পর গত ৪ সেপ্টেম্বর বইটির বিষয়ে তুমুল সমালোচনা করা হয় জাতীয় সংসদে এবং বইটি বাজেয়াপ্ত করার দাবি জানান হয়। সেইসাথে এ কে খন্দকারকে সেক্টর কমান্ডারস ফোরম থেকে অব্যহতি দেওয়ারও আলোচনা সামনে চলে আসে। গতকাল সোমবার ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ করে শাহবাগে ‘১৯৭১: ভেতরে বাইরে’র কপি পোড়ায় গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা।
এদিকে সরকারের ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের সাথে দ্বিমত পোষণ করে বিএনপির বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ বইটির পক্ষেই কথা বলেছেন।
গত ৫ সেপ্টেম্বর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তি অর্থাৎ ডেপুটি কমান্ডার ও আওয়ামী লীগের সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এ কে খন্দকার তার ‘১৯৭১ ভেতরে বাইরে’ বইয়ে যে কথা লিখেছেন সেটিই সত্য। জনগণ সেটিই বিশ্বাস করে।