রাজধানীর হাজারীবাগে পুলিশের উপর গ্রেনেড হামলার ঘটনায় জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ জেএমবির দুইজন নিহত হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে আরও তিন জেএমবি সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নিহতরা হলো- জেএমবির সামরিক কমান্ডার আলবানি ওরফে হোজ্জা ওরফে মাহফুজের সেকেন্ড ইন কমান্ড কামাল ওরফে হিরন ও আবদুল্লাহ আল নোমান ওরফে আবদুল্লাহ। অপর গ্রেপ্তারকৃতর নাম মো. আরমান, জাহিদ হাসান ওরফে মুসহাব ও নুর মোহাম্মদ ওরফে ল্যংড়া মাসুদ।
এ সময়ে তাদের হেফাজত থেকে এক রাউন্ড গুলি সহ কাঠের বাট যুক্ত শ্যুটারগান, একটি চাকু, এক রাউন্ড গুলিসহ কাঠের বাটযুুক্ত একটি ওয়ান সুটারগান, একটি কালো রংয়ের পালসার মোটরসাইকেল ও বিস্ফোরিত কয়েকটুকরা গ্রেনেডের লোহার টুকরা উদ্ধার করা হয়।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১২ টার সময় ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম এসব কথা বলেন।
মনিরুল ইসলাম বলেন, বুধবার দিবাগত রাত সোয়া ১০ টার সময় কামরাঙ্গিরচর ও হাজারীবাগ এলাকায় অভিযান পরিচালনার সময় তিন জঙ্গি গ্রেপ্তারসহ পুলিশের উপর গ্রেনেড হামলাকারী দুইজন আহত হন। পরে তাদেরকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদেরকে মৃত ঘোষণা করেন।
গ্রেপ্তারকৃতদের বরাত দিয়ে গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার বলেন, তারা শাহআলী থানার এ-ব্লকের তিন নম্বর রোডের একটি বাসায় নিয়মিত যাতায়াত করত। এবং গ্রেনেড তৈরি ও জঙ্গি প্রশিক্ষণসহ নানা ধরনের পরিকল্পনা প্রণয়ন করত। ওই বাসায় নিয়মিত কামাল ওরফে হিরণ, শাকিল ওরফে মোস্তাক, আবদুল্লাহ ওরফে নোমান, রিপন, ফারদিন ওরফে সজল আসত। তারা ঢাকায় অবস্থান করছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের নিয়ে হাজারীবাগ এলাকায় অভিযান পরিচালনাকালে রাত সাড়ে ১১ টার হাজারীবাগ থানার বারইখালীর পশ্চিম সুলতানগঞ্জ বেড়িবাঁধের সিকদার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল রোডের সিকদার এস্টেটের বালুর মাঠে পৌছামাত্র ৫-৬ জন অজ্ঞাতনামা লোক একটি মটরসাইকেলের পাশে সন্দেহজনকভাবে শলা পরামর্শ করতে ছিল। পুলিশ তাদের দিকে অগ্রসর হওয়ামাত্রই তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটায় প্রচণ্ড শব্দ চারিদিক কেঁপে ওঠে ও এলোপাথারী গুলি বর্ষন করতে থাকে। এতে দুষ্কৃতিকারীদের দুইজন আহত হয়। এবং বাকিরা পালিয়ে যায়।
গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম আরও বলেন, পুলিশের গুলিতে নিহত কামাল ওরফে হিরণ পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক ইব্রাহিম মোল্লার হত্যা, আশুলিয়ার বারইপাড়ার পুলিশের কনস্টেবল মুকুল হোসেন হত্যা ও হোসেনী দালানের গ্রেনেড বিস্ফোরণের ঘটনায় জড়িত। গ্রেপ্তারকৃতরা জেএমবির দুই মাসের বেসিক ট্রেনিং প্রাপ্ত। গ্রেপ্তারকৃত আরমানের বাসা জেএমবির আস্তানা হিসেবে ব্যবহৃত হত। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া কালো রংয়ের মোটরসাইকেল যার নম্বর- ঢাকা মেট্রো ল ২৩-০৫৬৮ দিয়ে দারুসসালামের পুলিশ হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন অভিযানে ব্যবহৃত হত।
মনিরুল ইসলাম বলেন, পুরান ঢাকার হোসেনী দালানের গ্রেনেড বিস্ফোরণের মামলায় মোট-পাঁচজন আসামি ছিল। এদের মধ্যে শাহাদৎ আগেই নিহত হয়েছেন। আজকে আরও দুইজন নিহত হলো। মুসা নামের একজন জেলখানায় অপরজন পলাতক রয়েছে। জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ জেএমবি এখন কাট আউট পদ্ধতিতে সংগঠিত হচ্ছে। জেএমবির আত্মঘাতী সদস্য তেমন নেই বলেও জানান এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা। জেএমবি নেতা ফারদিন ও সজিব পলাতক রয়েছে। যারা ময়মনসিংহের ত্রিশালের জঙ্গি ছিনতাই ও পুলিশ সদস্য ইব্রাহিম হত্যা মামলার আসামি।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের দক্ষিণ বিভাগের উপ-কমিশনার মাশরেকুর রহমান খালেদ, ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ বিভাগের উপ-কমিশনার মো. মারুফ হোসেন সরদার, পুলিশের দক্ষিণ বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন, ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার এসএম জাহাঙ্গির আলম সরকার ও জঙ্গি দমন আন্ত:দেশিয় অপরাধ প্রতিরোধ টিমের সহকারী কমিশনার মো. আহমেদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।