পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীকে ‘জেতানোর ব্যবস্থা না করায়’ রিটার্নিং কর্মকর্তাকে নানা ধরনের হুমকির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ময়মনসিংহ-২ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য শরীফ আহমেদ এ হুমকি দেন। তদন্তকরে ঘটনার সত্যতা পাওয়ার পর ওই এমপির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রী ও স্পিকারের কাছে ইসির চিঠি দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বুধবার এ সংক্রান্ত চিঠি প্রধানমন্ত্রীর ও স্পিকারের দপ্তরে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে বলে ইসি সূত্র নিশ্চিত করেছেন। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ বলেন, ময়মনসিংহের ফুলপুর পৌরসভা নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুব্রত পালের ওই অভিযোগ জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে এসেছে। সেখান থেকেই তা নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় যথাযথ কর্তৃপক্ষকে সংশ্লিষ্ট এমপির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলছে ইসি। ভোট শেষ হওয়ার পর এ নিয়ে কমিশনের তেমন কিছু করার নেই বলেও জানান তিনি। আবু হাফিজ বলেন, সরকারদলীয় প্রার্থীকে জয়যুক্ত করার বিষয়ে এমপি সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তাকে সরাসরি হুকুম দিয়েছেন। নানাভাবে তাকে হুমকি দিয়েছেন।
এটা তো বড়ধরণের থ্রেটের পর্যায়ে চলে গেছে। এই সংসদ সদস্যের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আমরা যথাযথ জায়গায় চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তিনি বলেন, আমরা ফুলপুরের বিষয়টি সিরিয়াসলি নিয়েছি। সংসদ সদস্যের পক্ষে কাজ না করায়, তার কথা না শোনায় হুমকি দিয়েছে। এটা বড় অন্যায়। ইসি কর্মকর্তারা জানান, বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনতে তার কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ও সংসদ সচিবের মাধ্যমে স্পিকারকে বুধবার বিকেলে চিঠি পাঠানো হচ্ছে। উল্লেখ্য, গত ৩০ ডিসেম্বর ওই পৌরসভার নির্বাচনে বিএনপির আমিনুল হক ৪ হাজার ৮৩৭ ভোট পেয়ে মেয়র পদে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের শশধর সেন পান ৩ হাজার ৮৯২ ভোট। রিটার্নিং কর্মকর্তা সুব্রত পাল ওই রাতেই ফল ঘোষণা করেন। নির্বাচনের সময় এই রিটার্নিং কর্মকর্তা আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীকে শোকজ নোটিস দিয়েছিলেন। ভোটের ফলাফল ঘোষণার সময় ইউএনও সুব্রত পালের বাসার সামনে বোমা হামলার ঘটনাও ঘটে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুব্রত পাল জানান, ৩০ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ফল ঘোষণার সময় আমার বাসায় বোমা হামলা হলো। আপনারা তো এ নিয়ে কোনো রিপোর্টও করলেন না! ভোটের পর সার্বিক বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় জেলা প্রশাসককে বিষয়টি লিখিতভাবে জানানো হয়। ইসি কর্মকর্তারা জানান, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জেলা প্রশাসন থেকে পাঠানো অভিযোগে স্থানীয় সংসদ সদস্যের প্রভাব খাটানোর বিষয়টি বলা হয়েছে। সেখানে লেখা হয়েছে- সরকারদলীয় প্রার্থীকে জেতাতে ওই সাংসদ ফোনে বারবার চাপ দিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তাকে। নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে জেতানোর জন্য ভয়ভীতি ও হুমকিও দিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য। প্রসঙ্গত, এর আগে পৌর নির্বাচনে সরকারের পাঁচ মন্ত্রীর বিষয়েও একইভাবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে নালিশ জানাতে উদ্যোগ নিলেও শেষ পর্যন্ত তা সাহস দেখাতে পারেনি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন কমিশন।