টাকা দিয়ে সহিংতার দায় সারছে ইসি

0

ECঢাকা: জাতীয় নির্বাচনে সহিংসতায় শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইতোমধ্যে আড়াইশ জনের একটি তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে।এদের চারটি ক্যাটাগরিতে প্রায় এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন সূত্র।তবে এ তালিকায় ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

সূত্র জানায়, এ, বি, সি ও ডি ক্যাটাগরিতে এ ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। এর মধ্যে নিহতদের পরিবারকে দেয়া হবে সাড়ে ৫ লাখ টাকা, দুটি অঙ্গহানি হয়েছে তাদের দুই লাখ টাকা, একটি অঙ্গহানি হলে এক লাখ টাকা করে দেয়া হবে। আর যারা সামান্য আহত হয়েছেন তাদের ১০ হাজার টাকা, যারা আহত হয়ে তিন থেকে সাত দিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন তাদের ২০ হাজার টাকা। যারা সাত থেকে পনেরো দিন হাসপাতালে ছিলেন তাদের ৩০ হাজার টাকা এবং যারা এর অধিক দিন হাসপাতালে ছিলেন তাদের ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়া হচ্ছে।

৫ জানুয়ারি নির্বাচনের মাস খানেক পর ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা দেয়ার লক্ষ্যে এক কোটি টাকার একটি তহবিল গঠন করে নির্বাচন কমিশন। সেই তহবিল থেকে এসব অর্থ সহায়তা দেয়া হচ্ছে।

বিএনপিকে ছাড়াই গত ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অর্ধেকেরও বেশি এমপি নির্বাচিত হলেও সহিংসতার মাত্রা ছিল ভয়ানক। বিরোধী দলের নির্বাচন ঠেকানোর ঘোষণা আর নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও মনোনীত প্রার্থীদের মুখোমুখি অবস্থান সেসময় এই সহিংস পরিস্থিতিতে আরো ঘি ঢেলেছে।

নির্বাচন শান্তিপূর্ণ রাখার প্রতিশ্রুতি দিলেও সামলাতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। কমিশনের দক্ষতা আন্তরিকতা নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। এছাড়া সেসময় সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়েও কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি কমিশন।পুলিশ ও আনসাররা ভোটকেন্দ্রে থাকলেও বিজিবি ছিল ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে টহলে। আর সেনাক্যাম্পগুলো ছিল ভোটকেন্দ্র থেকে দূরে। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও ছিল একই অবস্থা।পঞ্চম ও শেষ ধাপে এসে কার্যক্রম দৃশ্যমান করার জন্য সেনাবাহিনীকে কমিশন চিঠি দিলেও কোনো পরিবর্তন চোখে পড়েনি। সেনাবাহিনী ভোট গ্রহণের দিন এবং আগের দিন ভোট কেন্দ্রের আশেপাশে থাকলেও সহিংসতা অনেকখানি এড়ানো যেত বলে মনে করেন নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে দুজন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ও একজন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিহত হন। এছাড়া ১৭টি জেলায় প্রায় পৌনে তিন শতাধিক ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা আহত হন বলে জানা যায়। এদের মধ্যে থেকে যাচাই-বাছাই করে ক্ষতিপূরণ দেয়া হচ্ছে।

এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের উপ-সচিব মিহির সারওয়ার মোর্শেদ বাংলামেইলকে বলেন, ‘আমরা এ, বি, সি ও ডি এই চারটি ক্যাটাগরিতে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিচ্ছি। খুব তাড়াতাড়ি চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করবো।নির্বাচন কমিশন সাধ্যমত ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে।’

উল্লেখ্য, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে সহিংসতার কারণে ১৫টি আসনের ৫৯৫টি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়।ওই দিন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, আইন শৃঙ্খলাবাহিনী সদস্যসহ প্রায় ২৭৩ জন আহত হন। এছাড়া দিনাজপুরে একজন, ঠাকুরগাঁওয়ে একজন এবং ঝিনাইদহে একজন নিহত হন।

নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, নির্বাচনের দিন চট্টগ্রামে ৫ জন, দিনাজপুরে ৭৩ জন, মাগুরায় ২ জন, যশোরে ৪৫ জন, বগুড়ায় ৩ জন, রংপুরে ১২ জন, লালমনিরহাটে ১০ জন, ঠাকুরগাঁওয়ে ৩৬ জন, গাইবান্ধায় ১৩ জন, ঝিনাইদহে ৭ জন, মৌলভীবাজারে ২ জন, কুমিল্লায় ৭ জন, জামালপুরে ১৯ জন, শেরপুরে ৯ জন, ময়মনসিংহে ১ জন, রাজশাহীতে ৩ জন, নীলফামারীতে ১৬ জন আহত হন।

২৫ নভেম্বর দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর পুলিশের সঙ্গে জামায়ত-শিবিরের সংঘর্ষ, পুলিশের গুলি, জামায়াত-শিবিরের হামলা, বাসে আগুন, ককটেল হামলাসহ বিভিন্ন সহিংসতায় প্রায় দুই শতাধিক মানুষ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন সহস্রাধিক। যাদের মধ্যে অধিকাংশই সাধারণ জনতা। তবে সহিংসতায় আইনৃঙ্খলা বাহিনী, জামায়াত-শিবিরসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীও রয়েছে।

এছাড়াও ৫ জানুয়ারি ভোটগ্রহণের দিন ১১ জেলায় ১৯ জন নিহত হয়। এদের মধ্যে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীসহ নিরীহ মানুষও রয়েছে। এদের মধ্যে ১৫ জনই সরাসরি পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছিল।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More