কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ার সরকারি কলেজের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যার বিচারের দাবিতে রোববার সপ্তম দিনের মত উত্তাল ছিল কুমিল্লা। ঢাকা থেকে রোড মার্চ করে এসে কুমিল্লায় মহানগরীতে গণজাগরণ মঞ্চের নেতৃবৃন্দ পূবালী চত্বরের সমাবেশে বক্তব্য রেখে ৩০ মার্চ দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মানববন্ধনের কর্মসূচী ঘোষণা করেছেন। অপর দিকে, ঘটনার ৭ দিন অতিবাহিত হলেও কোন অগ্রগতি না দেখে ক্ষোভ বাড়ছে নগর কুমিল্লায়। তারা অবিলম্বের মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে নেয়ার দাবি করেছেন। আর জেলা পুলিশ সুপার মো. শাহ আবিদ হোসেন জানিয়েছেন তদন্তে তথ্য সংগ্রহের অগ্রগতি হয়েছে। তবে কারা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তা আমরা এখনো জানতে পারিনি। তদন্ত সব কিছু বিবেচনায় নিয়েই এগুচ্ছে।
এদিকে রোববার বিকেলে নগরীর পূবালী চত্বরে আয়োজিত এ সমাবেশে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, এখন দেশে অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বললে মানুষকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮শ’ কোটি টাকা রিজার্ভ লুটের ঘটনা আড়াল করতে পরিকল্পিত ভাবে তনু হত্যাকাণ্ড কিনা মানুষ তা জানতে চায়। তিনি বলেন, সেনানিবাসের মতো সুরক্ষিত এলাকায় তনু খুন হয়েছে। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন নয়, আমাদের আন্দোলন ধর্ষকদের বিরুদ্ধে। সেনাবাহিনীর হাতে রক্তের দাগ থাকুক তা আমরা চাই না। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সেনাবাহিনী গঠিত হয়েছিলো। এ বিষয়ে সেনাবাহিনীর বক্তব্য আমরা জানতে চাই। আমরা চাই না বিশ্বের কাছে আমাদের গৌরবের সেনাবাহিনী হেয় হোক। তাদেরকে মামলার তদন্তে সিভিল প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে হবে।
ব্যাংক লুট কিংবা তনু হত্যা নিয়ে বড় বড় রাজনৈতিক দল গুলোর মাঠে নামার কথা, কিন্তু মাঠে নামতে হচ্ছে আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের। ইয়াসমিন হত্যাকাণ্ডের পর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মাঠে নেমে আন্দোলন করেছিলেন। কিন্তু তনুর বিষয়ে তিনি মাঠে নামছেন না কে? এছাড়া তিনি ৩০ মার্চ দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তনু হত্যার প্রতিবাদে দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত এক ঘণ্টা মানববন্ধন করার আহবান জানান।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন,গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক ভাস্কর রাসা,ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি লাকী আক্তার ও কুমিল্লার সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ।
ক্ষোভ বাড়ছে কুমিল্লা : এ দিকে, তনুর হত্যাকাণ্ডের তদন্তে ধীর গতিতে ক্ষোভ বাড়ছে নগর কুমিল্লায়। নগরীর সুশীল সমাজসহ বিভিন্ন পেশার নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, সেনানিবাসের মত একটি সুরক্ষিত এলাকায় এমন একটি ঘটনা ঘটার ৭ দিনের মধ্যেও কেন কোন ক্লো পাওয়া যাবে না। এ প্রসঙ্গে কুমিল্লার বিশিষ্ট নারী নেত্রী ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রাশেদা আক্তার বলেছেন, অবিলম্বে সোহাগী জাহান তনুর হত্যা মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে নেয়া হোক। আমরা এই মুহূর্তে ধর্ষণের বিচার চাই না। আমরা আগে চাই হত্যাকাণ্ডের বিচার। নারীর ক্ষমতায়নের এই যুগে নারীদের প্রতি যে সহিংসতা চলছে এখনি যদি রোধ না করা হয় তাহলে এদেশের নারীদের ভবিষ্যৎ বলে কিছু থাকবে না।
তদন্তকারী কর্মকর্তা যা বললেন : চাঞ্চল্যকর সোহাগী জাহান তনু হত্যাকাণ্ডের তদন্তকারী কর্মকর্তা ও জেলা ডিবি ওসি একেএম মনজুর আলম রোববার সন্ধ্যায় জানান, মামলার তদন্ত চলমান। এ ব্যাপারে যদি কিছু বলার থাকে বলতে পারে আমার এসপি। এ ছাড়া এ ব্যাপারে আমাদের বলার আর কিছু নেই। আমি এখন ঘটনাস্থলে আছি, এ কথা বলেই লাইন কেটে দেন তিনি।
মহাসড়ক অবরোধ-প্রত্যাহার : “কুমিল্লায় কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনু হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও যথাযথ বিচারের আওতায় আনা হবে” প্রশাসনের এমন আশ্বাসে প্রায় সোয়া ২ ঘণ্টা পর ঢাক-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে অবরোধ তুলে নেয়া হয়েছে। রোববার বেলা সাড়ে ১১ টা থেকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ও ভিক্টোরিয়া কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মীরা মহাসড়ক অবরোধ করে।
কুবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ: সোহাগী জাহান তনু হত্যার প্রতিবাদে ও হত্যাকারীদের গ্রেফতার দাবিতে কুমিল্লা-কোটবাড়ী বিশ্বরোড় সড়ক অবরোধ করেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষার্থীরা।
রোববার বেলা ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা ওই সড়কে অবস্থান নেয়। এরপর তারা সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে যানচলাচল বন্ধ করে দেয়। ফলে ওই সড়কের উভয় পাশে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
খবর পেয়ে ময়নামতি হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুব রহমান ও সদর দক্ষিণ থানার ওসি প্রশান্ত পাল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত ২০ মার্চ রোববার সন্ধ্যায় টিউশনি করে বাসায় ফেরার পথে কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকায় পাশবিক নির্যাতনের পর হত্যা করা হয় সোহাগী জাহান তনুকে। পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ময়নামতি সেনানিবাসের অভ্যন্তরে পাওয়ার হাউসের পানির ট্যাংক সংলগ্ন স্থানে সোহাগীর মৃতদেহ পাওয়া যায়। কালভার্টের পাশে ঝোপের ভেতর মাথা থেতলানো সোহাগীর মৃতদেহ পড়েছিলো। ২১ মার্চ সোমবার নিহতের বাবা ইয়ার হোসেন কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানায় অজ্ঞাতদের নামে হত্যা মামলা দায়ের করেন। হত্যাকাণ্ডের ৬ দিনেও কাউকে গ্রেফতার বা হত্যার রহস্য উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।