চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অতীতে অনুষ্ঠিত সবগুলো নির্বাচনের ব্যয়কে পেছনে ফেলেছে। ধাপে ধাপে নির্বাচন করায় তৃতীয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ে ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৩গুণ।
প্রায় ২শ’ কোটি টাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যয় হলেও অনিয়ম ও সহিংসতার রেকর্ড ছাড়িয়েছে অন্যবারের চেয়ে। এ খাতের ব্যয় রেকর্ড গড়েছে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ব্যয়কেও ছাড়িয়ে। সব মিলিয়ে ৫ ধাপের এবারের চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রায় সাড়ে ৩শ’ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। যা ব্যয়ের দিক থেকে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকেও ছাড়িয়ে গেছে।
এর মধ্যে নির্বাচন পরিচালনায় প্রায় ১৪৫ কোটি টাকা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা খাতে ১৯৭ কোটি টাকা। দেশের ৪৮৭টি উপজেলায় পর্যায়ক্রমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে। এরইমধ্যে চার ধাপে ৩৮৫টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৩১ মার্চ পঞ্চম ধাপে ৭৪টি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মেয়াদোত্তীর্ণ হতে যাওয়া বাকি উপজেলাগুলোয় মে মাসে নির্বাচনের পরিকল্পনা রয়েছে ইসির।
নির্বাচন কমিশনের উপ-সচিব (বাজেট) শাজাহান খান সাংবাদিকদের বলেন, ধাপে ধাপে ব্যয় বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। সব মিলিয়ে উপজেলা নির্বাচনে প্রায় সাড়ে তিনশ’ কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে। নির্বাচন শেষে সবার চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ দেওয়ার পর পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাওয়া যাবে।
পাঁচ-ছয় ধাপে নির্বাচন করা, নির্বাচনি সামগ্রী ও কর্মকর্তাদের ভাতা আগের তুলনায় বেড়ে যাওয়ায় এবার নির্বাচনের সার্বিক ব্যয় বেড়েছে বলে জানান এ কর্মকর্তা। ২০০৯ সালের ২২ জানুয়ারি একযোগে ৪৮১টি উপজেলায় নির্বাচন হয়। ওইদিন সহিংসতা-গোলযোগের কারণে ৪টি উপজেলাসহ বেশ কিছু কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত হয়। তৃতীয় উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে প্রায় ১৩৩ কোটি টাকা ব্যয় হয়। এর মধ্যে নির্বাচন পরিচালনায় ৬৪ কোটি ২৭ লাখ ১২ হাজার টাকা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ৬৬ কোটি ৯৭ লাখ ৪১ হাজার ব্যয় হয়েছে।
ওই নির্বাচনেও ভোটের আগে-পরে পাঁচদিন সশস্ত্রবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্য সদস্যরা ৩ দিন মাঠে মোতায়েন ছিল। চতুর্থ উপজেলা পরিষদের এ নির্বাচনেও ধাপে ধাপে একই রকম নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন রয়েছে। ইসি সচিবালয়ের বাজেট শাখার কর্মকর্তারা জানান, এবার ৫ ধাপে আইনশৃঙ্খলায় আনসার-ভিডিপি ৮০ কোটি ৬৬ লাখ টাকা, পুলিশ-ৠাব ৬৩ কোটি টাকা, সশস্ত্র বাহিনী ৩৬ কোটি টাকা, বিজিবি ১৮ কোটি ১২ লাখ টাকা ও কোস্টগার্ড ৩০ লাখ টাকা ব্যয় বরাদ্দ পেয়েছে।
এছাড়া নির্বাচন পরিচালনা খাতে প্রথম পর্বে ৩৫ কোটি ৩৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা, দ্বিতীয় পর্বে ৩৪ কোটি ৬৬ লাখ টাকা, তৃতীয় পর্বে ২৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা, চতুর্থ পর্বে ২৭ কোটি ১৭ লাখ টাকা ও পঞ্চম পর্বে ২৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয়ের জন্য ছাড় দেওয়া হয়েছে।
ব্যালট মুদ্রন, পরিবহন, নির্বাচন কর্মকর্তাদের ভাতা থেকে শুরু করে নির্বাচন সামগ্রী ও সব ধরনের পরিচালনা ব্যয় নির্বাহ হয় এ খাতে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির বাজেট শাখার একজন কর্মকর্তা জানান, ২০০৯ সালে প্রিজাইডিং অফিসারদের ভাতা দেওয়া হতো ১ হাজার টাকা, এবার তা ৩ হাজার টাকা, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের ৭শ’ থেকে ২ হাজার এবং পোলিং অফিসারদের ৬শ’ টাকা থেকে দেড় হাজার টাকা করা হয়েছে।
রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার, ম্যাজিস্ট্রেটের ভাতাসহ ব্যালট পেপার ছাপানো, কালি, সিল, ব্যাগ, মার্কিং পেনসহ অন্যান্য সরঞ্জাম কেনার খরচও আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। সোমবার (৩১ মার্চ) দেশের ৭৪টি উপজেলায় পঞ্চম ধাপের নির্বাচন হবে। এরই মধ্যে স্থগিত হওয়া ভোট কেন্দ্রেগুলোয় নির্বাচনও হচ্ছে। বাকি অন্তত ১৬টি উপজেলায় মে মাসের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন করার পরিকল্পনা রয়েছে ইসির।
সদ্য শেষ হওয়া দশম সংসদ নির্বাচনের চেয়ে এবারের উপজেলা নির্বাচনে ব্যয় বেশি হয়েছে। চতুর্থ উপজেলায় সাড়ে ৩শ’ কোটি টাকা ব্যয় হলেও দশম সংসদ নির্বাচনে মোট ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ২৬৪ কোটি ৬৭ লাখ ৪৯ হাজার ৪৬৯ টাকা। ১৪৭টি আসনে নির্বাচন করায় এ ব্যয় হয়। এর মধ্যে নির্বাচন পরিচালনায় ৮১ কোটি ৫৫ লাখ ৪১ হাজার ৩৪১ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পেছনে ব্যয় হয়েছে ১৮৩ কোটি ১২ লাখ ৮ হাজার ১২৮ টাকা।
বিএপির নেতৃত্বাধীন বড় একটি রাজনৈতিক পক্ষ সংসদ নির্বাচন বর্জন করে। তারপরও সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ব্যাপক সহিংসতা হয়। এতে অন্তত ২১ জনের প্রাণহানি ও প্রায় ৫শ’ স্কুলে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। তবে উপজেলা নির্বাচন কেউ প্রতিহত না করলেও ধাপে ধাপে নির্বাচন করেও কমানো যায়নি সহিংসতা। স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনকে ঘিরে চার ধাপে এরইমধ্যে অন্তত ১০ জন মারা গেছে।