মাঝবয়সী দিনমজুর আব্বাস উদ্দিন। থাকেন চট্টগ্রাম নগরের খাজা রোড এলাকার একটি ভাড়া বাসায়। আজ সোমবার সকালে বাজার করতে এসেছিলেন নগরের বহদ্দারহাট বাজারে। সবজি কেনা শেষে মুরগির মাংসের বাজারে ঢুকতেই বিবর্ণ হয়ে আসে তাঁর মুখ। দোকানগুলো ঘুরে ব্রয়লার মুরগির দাম জিজ্ঞেস করছিলেন তিনি। তখন কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
‘কীভাবে বাজার করব বলেন, দাম শুনলেই তো খাওয়ার শখ মিটে যায়। যেখানে প্রতিদিন আয় ৫০০-৭০০ টাকা, সেখানে ২০০ টাকা কেজি মুরগি খাওয়া যায়?’—আক্ষেপের সুরে কথাগুলো বলছিলেন আব্বাস উদ্দিন। তিনি জানান, রাজমিস্ত্রির কাজ করে তাঁর সংসার চলে। গত তিন দিন টানা কাজ করেছেন। আজ বাজার করতে হবে তাই কাজে যাননি। কিন্তু বাজার করতে এসে চিন্তায় পড়েছেন। কারণ, জিনিসপত্রের বাড়তি দাম।
চট্টগ্রামের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দুই দিনের ব্যবধানে অন্তত কেজিপ্রতি ২০ টাকা বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম। গত শুক্রবার প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২০০ থেকে ২১০ টাকায় বিক্রি হলেও আজ বিক্রি হয় ২২০ থেকে ২৩০ টাকায়। এ ছাড়া অলিগলির মুরগির দোকানে দাম চাওয়া হয় ২৪০ টাকার বেশি। মাঝে শবে মিরাজকে কেন্দ্র করে ২৫০ টাকা কেজি দরেও ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে কিছু কিছু দোকানে।
আব্বাস জানান, পরিবারে মা, স্ত্রী ও দুই মেয়ে রয়েছে। তাঁর একার আয়ে সংসার চলে।
গত তিন দিন টানা কাজ পাওয়ায় কিছু টাকা আয় হয়েছে। তাই মেয়েদের আবদারে মুরগি কিনতে এসেছেন। কিন্তু দাম শুনে কেনার আগে আরেকবার ভাবছেন। ঘরভাড়া, মায়ের ওষুধ ও অন্যান্য খরচ মিটিয়ে যে টাকা থাকে, তাতে সংসার সামলানো কষ্টের। তবু মেয়েদের মন রাখতে ২২০ টাকা কেজি দরে ১ কেজি ৪০০ গ্রাম মুরগি কিনেছেন।
বাজারের এক প্রান্তে কথা হয় স্কুলশিক্ষক নুরুল আবসারের সঙ্গে। তিনি বলেন, মধ্যবিত্তের বাজার করতে কয়েকবার চিন্তা করতে হচ্ছে। নিম্ন আয়ের মানুষ আরও বেশি ভোগান্তিতে আছেন। তিনি গত শুক্রবার ব্রয়লার মুরগি কিনেছিলেন ২০৫ টাকা কেজি দরে। কিন্তু আজ বাজারে তা ২২০-২৩০ টাকা। তাই মুরগি না কিনে ১০০ টাকা জোড়া দরে দুই জোড়া কোয়েল কিনেছেন।
চট্টগ্রামের বাজারে গত তিন সপ্তাহে তিনবার বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম। পাশাপাশি বেড়েছে সোনালি মুরগি ও মুরগির ডিমের দাম। ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে ১৩০-১৪০ টাকায় বিক্রি হওয়া ব্রয়লার মুরগি বর্তমানে কেজি ২২০-২৩০ টাকা। ২৪০ টাকায় বিক্রি হওয়া সোনালি মুরগি বর্তমানে ৩২০ টাকা। এ ছাড়া ডজনপ্রতি মুরগির ডিম এখন ১৪৫-১৫০ টাকা; যা আগে ছিল ১১০ টাকা।
মুরগি বিক্রেতারা বলছেন, মুরগির খাবারের মূল্যবৃদ্ধি, শীতে মুরগির অসুখ ও পরিবহন খরচ বাড়ায় দাম বেড়েছে মুরগি ও ডিমের। পাইকারি বাজার থেকে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে বলে খুচরা বাজারেও দাম বাড়তি।
বাজারে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে কথা হয় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলার সহকারী পরিচালক নাসরিন আক্তারের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কেনা দামের সঙ্গে বিক্রয়মূল্যের কোনো অসংগতি আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। রমজান মাস সামনে রেখে নগরের বাজারগুলোতে জেলা ও বিভাগীয় কার্যালয় থেকে অভিযান চালানো হচ্ছে।