[ads1]দুই শতাধিক সন্ত্রাসীর কোনো হদিস নেই। তাদের মধ্যে অর্ধশতাধিক রয়েছে যারা বছরের পর বছর ধরে পলাতক। আবার জামিনে মুক্তি পেয়ে অনেকে এখন ফেরারি। আবার কেউ কেউ অভিযোগ থেকে মুক্তি পেয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, এসব সন্ত্রাসীর অনেকেরই কোনো হদিস নেই।
পুলিশ সূত্র জানায়, ২০০৫ সালে দেশের ৬৩ জেলায় একযোগে সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় সারা দেশে ১৫৮টি মামলা হয়েছিল। এরপর বিভিন্ন সময় দেশের নানা এলাকায় আরো অর্ধশতাধিক মামলা দায়ের হয় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘিরে। সিরিজ বোমা হামলার ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে ১৪ শ’ জন গ্রেফতার হয়েছিলেন। পরে যাচাই-বাছাই করে ৯৮১ জনকে বিভিন্ন মামলায় আসামি করা হয়। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এসব মামলায় খালাস পেয়েছেন ১১৮ জন। জামিন পেয়েছেন ৩৫ জন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানায়, ওই সময় যাদের শীর্ষ সন্ত্রাসী বলে সন্দেহ করা হয়েছিল তাদের মধ্যে ৫৭ জন এখনো লাপাত্তা। তাদের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি দীর্ঘ দিন ধরে। আবার কারো কারো আদালতে সাজা হলেও সেই সাজার বিপরীতে আপিল করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে যারা আপিল করেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন, নারায়ণগঞ্জের সালাউদ্দিন ওরফে সালেহীন ওরফে সজিব, নওগাঁর নিয়ামতপুরের আবদুল কাইউম, বগুড়ার শেরপুরের হাফেজ মিনহাজুর ইসলাম ওরফে সোহেল রানা ওরফে সানোয়ার হোসেন, জামালপুরের মো: আক্তারুজ্জামান, খুলনার তরিকুল ইসলাম ওরফে রিংকু, ঝিনাইদহের মনিরুল ইসলাম ওরফে মোকলেছ, নাসরুল্লাহ ওরফে শান্ত, ঝিনাইদহের রোকনুজ্জামান ওরফে সিবুন, গাইবান্ধার আবু তালেব আনছারী ওরফে বাবুল আনছারী, ঝিনাইদহের মোহন, মামুনুর রশিদ, ঝিনাইদহের মুহিদ আহম্মদ, মোজাম্মেল হক ওরফে মোজাম, তুহিন রেজা, সবুজ আলী, শৈলকুপার ফারুক হুসাইন, গাইবান্ধার মতিন মেহেদী ওরফে মতিনুর ইসলাম, ঝিনাইদহের মহিরুল আল মামুন ওরফে চাঁদ, ঝিনাইদহের বিলাল হোসেন, সাবউদ্দিন, শৈলকুপার রবজেল হোসেন ও আজিজুর রহমান।[ads2]
এ দিকে ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশাল থানার সাইনবোর্ডে ছিনিয়ে নেয়া হয় সালাহউদ্দিন ওরফে সালেহীন, মিজান ওরফে বোমারু মিজান এবং রাকিব হাসান নামে তিন শীর্ষ সন্ত্রাসীকে। তারা তিনজনই গাজীপুরের কাশিমপুর জেলে বন্দী ছিল। ময়মনসিংহের একটি মামলায় আদালতে হাজির করার জন্য ওই দিন তাদের নেয়া হচ্ছিল। সেখানে সহযোগীরা কমান্ডো স্টাইলে প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে তাদের ছিনিয়ে নেয়। পুলিশের এক সদস্যকে হত্যা এবং বাকি তিন পুলিশকে আহত করে সহযোগীরা ওই তিন সন্ত্রাসীকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। ঘটনার দিনই টাঙ্গাইলের সখিপুর থেকে মাইক্রোবাসসহ গ্রেফতার করা হয় গাড়ির ড্রাইভার জাকারিয়াকে। একই এলাকা থেকে চার ঘণ্টার মাথায় গ্রেফতার করা হয় সন্ত্রাসী রাকিব হাসানকে। যে মাইক্রোবাসে তিন সন্ত্রাসীকে নিয়ে পালানো হয় তার ড্রাইভার ছিল জাকারিয়া। ঘটনার ৪ ঘণ্টা পরে রাকিব হাসানকে গ্রেফতারের ১৪ ঘণ্টার মাথায় কথিত বন্দুকযুদ্ধে সে নিহত হয়। সেই থেকে সন্ত্রাসী বোমারু মিজান ও সালাহউদ্দিন ওরফে সালেহীন পলাতক রয়েছে। প্রায় আড়াই বছর অতিবাহিত হলেও এসব সন্ত্রাসীর কোনো সন্ধান পাচ্ছে না পুলিশ-গোয়েন্দারা।
এ দিকে জেএমবির সিরিজ বোমা হামলা ও দেশজুড়ে একের পর বোমা হামলার ঘটনার পর ওই সময়ের জেএমবির শীর্ষ নেতা শায়খ আব্দুর রহমান ও বাংলা ভাইয়ের স্ত্রী-সন্তানসহ অনেকেই গ্রেফতার হয়েছিলেন। তাদেরও অনেকে এখন জামিনে মুক্ত রয়েছেন। শায়খ আব্দুর রহমান ও বাংলা ভাইসহ যে ছয় সন্ত্রাসীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে, তাদের অনেক স্বজনও রয়েছেন যাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে মদদদানের অভিযোগ রয়েছে।[ads1]
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকর হওয়া ওই ছয়জনসহ অনেক শীর্ষ সন্ত্রাসীর স্বজনদের ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তেমন কোনো মনিটরিং নেই। তাদের অনেকেরই এখনকার ভূমিকা রহস্যজনক বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। গ্রেফতারকৃত সিলেটের আবু জাফর ওরফে সাঈদুর রহমানেরও অনেক সঙ্গী এখনো সক্রিয় রয়েছেন বলে জানা গেছে।
এ দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের ব্যাপারে তাদের যথেষ্ট চেষ্টা ও পরিকল্পনাও রয়েছে। শায়খ আব্দুর রহমান ও বাংলা ভাইসহ শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আত্মীয়স্বজনের ব্যাপারেও নিয়মিত মনিটরিং রয়েছে বলে তারা উল্লেখ করেছেন।
সূত্রঃ নয়া দিগন্ত