দুবাইয়ে সম্পত্তি কেনায় শীর্ষে বাংলাদেশিরা, ৪৫৯ জনের বিরুদ্ধে রিট

0

সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে ৪৫৯ বাংলাদেশির সম্পদ থাকার বিষয়ে অনুসন্ধানের নির্দেশনা চেয়ে সম্পূরক রিট আবেদন শুনানির জন্য আগামী রোববার দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট।

এর আগে সকালে দুবাইয়ে ৪৫৯ বাংলাদেশির হাজার কোটি টাকার সম্পদ থাকার বিষয়ে অনুসন্ধান করার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে সম্পূরক রিট আবেদন দায়ের করা হয়। অ্যাডভোকেট সুবীর নন্দী দাস জনস্বার্থে এ আবেদন দায়ের করেন। দুর্নীতি দমন কমিশন, বিএফআইইউ, এনবিআর ও সিআইডিসহ সংশ্লিষ্টদের আবেদনে বিবাদী করা হয়।

গত বুধবার একটি জাতীয় দৈনিকে ‘দুবাইয়ে ৪৫৯ বাংলাদেশির হাজার প্রপার্টি’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে এ আবেদন করা হয়।

ওই প্রতিবেদনের একাংশে বলা হয়- বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রকাশ্যে-গোপনে বিপুল পরিমাণ মূলধন স্থানান্তরিত হচ্ছে দুবাইয়ে। এ অর্থ পুনর্বিনিয়োগে ফুলে ফেঁপে উঠছে দুবাইয়ের আর্থিক, ভূসম্পত্তি, আবাসনসহ (রিয়েল এস্টেট) বিভিন্ন খাত। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড ডিফেন্স স্টাডিজের (সি৪এডিএস) সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণের ভিত্তিতে ইইউ ট্যাক্স অবজারভেটরি জানিয়েছে, বাংলাদেশে তথ্য গোপন করে দুবাইয়ে প্রপার্টি কিনেছেন ৪৫৯ বাংলাদেশি। ২০২০ সাল পর্যন্ত তাদের মালিকানায় সেখানে মোট ৯৭২টি প্রপার্টি ক্রয়ের তথ্য পাওয়া গেছে, কাগজে-কলমে যার মূল্য সাড়ে ৩১ কোটি ডলার। তবে প্রকৃতপক্ষে এসব সম্পত্তি কিনতে ক্রেতাদের ব্যয়ের পরিমাণ আরও অনেক বেশি হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

দুবাইয়ে বসবাসকারীসহ বিভিন্ন সূত্রের অনানুষ্ঠানিকভাবে জানানো তথ্য অনুযায়ী, ইইউ ট্যাক্স অবজারভেটরির পরিসংখ্যানটি করা হয়েছে সি৪এডিএসের ২০২০ সালের তথ্য নিয়ে। এরপর গত দুই বছরে দুবাইয়ে বাংলাদেশিদের প্রপার্টি ক্রয়ের প্রবণতা আরও ব্যাপক মাত্রায় বেড়েছে। এ সময়ের মধ্যে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি কিনেছেন বাংলাদেশিরা, যার তথ্য তারা দেশে পুরোপুরি গোপন করেছেন।

বিভিন্ন মাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, দুবাইয়ে বাংলাদেশিদের গোপনে কেনা সম্পদের অর্থমূল্য এখন কম করে হলেও এক বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। বৈশ্বিক অর্থনীতির করোনাকালীন বিপত্তির মধ্যেও দেশটির রিয়েল এস্টেট খাতের বিদেশি প্রপার্টি ক্রেতাদের মধ্যে বাংলাদেশিরা ছিল শীর্ষে।

স্থানীয় ভূমি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, করোনায় দুবাইয়ে বাংলাদেশি ধনীরাই সবচেয়ে বেশি সম্পদ কিনেছেন। এদিক থেকে নেদারল্যান্ডস, সুইজারল্যান্ড, চীন ও জার্মানির মতো দেশগুলোর বাসিন্দাদের পেছনে ফেলেছেন বাংলাদেশিরা।

দেশের বিত্তবানদের কাছে দীর্ঘদিন দুবাইয়ের আকর্ষণ ছিল নিছক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় এ আকর্ষণ রূপ নিয়েছে প্রকাশ্য ও গোপন লগ্নির কেন্দ্র হিসেবে। আকর্ষণীয় মুনাফার খোঁজে রিয়েল এস্টেট ছাড়াও অন্যান্য ব্যবসায় নাম লেখাচ্ছেন তারা। দেশের অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানই এখন দুবাইকে বেছে নিয়েছে ব্যবসায়িক কার্যক্রমের কেন্দ্র হিসেবে।

২০২০ সালে করোনার মধ্যেই দেশের নির্মাণ খাতের ঠিকাদারির সঙ্গে যুক্ত একজন ব্যবসায়ী দুবাই চলে যান। এরপর থেকে তিনি সেখানেই বসবাস করছেন। দেশের ব্যবসা থেকে উপার্জিত মুনাফা প্রতিনিয়ত দুবাইয়ে স্থানান্তর করছেন তিনি। এরই মধ্যে তিনি দুবাইয়ের আবাসন ও নির্মাণ খাতে বড় ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।

সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) এখন যে কোনোভাবে হোক বিদেশ থেকে পুঁজির প্রবাহ বাড়াতে উদ্যোগী হয়ে উঠেছে। এজন্য বিদেশি ধনীদের স্থানান্তরিত হতে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধাও দেওয়া হচ্ছে। এর সঙ্গে বাংলাদেশও অর্থপাচার প্রতিরোধে কার্যকর ও শক্তিশালী কোনো ব্যবস্থা গড়তে না পারায় এখান থেকে দুবাইয়ে অর্থপাচার বেড়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

jugantor

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More